|
|
|
|
উদ্বেগ বিমান মন্ত্রকেরও |
অন্ডাল বিমাননগরীতে দেরি কেন, প্রশ্ন তুলল চাঙ্গি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
বর্ধমানের অন্ডালে আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর নিয়ে এখন সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষই সন্দিগ্ধ। একই ভাবে বেসরকারি উদ্যোগের এই বিমানবন্দরটির কাজের অগ্রগতি নিয়ে বিমান মন্ত্রকও প্রশ্ন তুলেছে। কেন গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পে দেরি হচ্ছে, তা নিয়ে দু’পক্ষের কাছেই প্রশ্নের সম্মুখীন এরোট্রোপলিস সংস্থা। এরোট্রোপলিস কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা, বিমানবন্দরের জমির জন্য ক্ষতিপূরণ জেলা প্রশাসনের হাতে তুলে দেওয়া হলেও তা এখন জমির মালিকদের মধ্যে বিলি করা হয়নি।
অন্ডালের এই এরোট্রোপলিস বা বিমাননগরী ‘গ্রিনফিল্ড’ প্রকল্প (অর্থাৎ বেসরকারি বিমানবন্দর)। ওই প্রকল্প রূপায়ণের জন্য তৈরি বেঙ্গল এরোট্রোপলিস সংস্থায় ২৬ শতাংশ অংশীদার সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। চাঙ্গি এই প্রকল্পে ইতিমধ্যেই ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। আরও ৮০ কোটি টাকা বিনিয়োগের কথা রয়েছে। কিন্তু রাজ্যে তৃণমূলের নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠনের পর বিমানবন্দরের জন্য প্রয়োজনীয় জমি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এরোট্রোপলিস কতৃর্পক্ষের বক্তব্য, বিমানবন্দরের ১৯২ একর জমির জন্য ক্ষতিপূরণের অর্থ বিধানসভা নির্বাচনের আগেই জেলা প্রশাসনকে দেওয়া হয়ে গিয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল, নির্বাচনের জন্য চেক বিলিতে সমস্যা হচ্ছে। এখন নির্বাচন মিটে যাওয়ার পরেও চেক বিলি হচ্ছে না। |
|
আজ বিমান মন্ত্রকের সচিব সৈয়দ নাসিম অহমেদ জাইদির নেতৃত্বাধীন উচ্চপর্যায়ের স্টিয়ারিং কমিটি অন্ডাল-প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি খতিয়ে দেখে। তখনই বেঙ্গল এরোট্রোপলিসের কাছে কেন্দ্র জানতে চায়, কেন প্রকল্প রূপায়ণে দেরি হচ্ছে। জবাবে বিমাননগরী কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়, বিমানবন্দরের জন্য দু’টো জমি ছিল। একটি ১৪৪ একর, অন্যটি ১৯২ একর। যে হেতু ১৪৪ একরের জমিটি নিয়ে কৃষকদের আপত্তি ছিল, তাই ১৯২ একরের জমিটি নেওয়া হয়েছে। জমি অধিগ্রহণ হয়ে গিয়েছে। কোথাও কোনও সমস্যা নেই। বিমাননগরীর তরফ থেকে ক্ষতিপূরণের চেক জেলাশাসককে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জমির মালিকদের মধ্যে সেই চেক এখনও বিলি করেনি জেলা প্রশাসন। তার জন্য এরোট্রোপলিস সংস্থা দায়ী নয়।
সিঙ্গাপুর সরকারও বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত। কারণ চাঙ্গি পুরোপুরি সিঙ্গাপুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষেরই শাখা সংস্থা। প্রকল্পের বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে গত ২১ জুলাই এরোট্রোপলিস কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিরা বিমানমন্ত্রী ভায়লার রবির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। দিল্লিতে নিযুক্ত সিঙ্গাপুরের রাষ্ট্রদূত কেরান টান-ও ভায়লারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। গত সপ্তাহে যখন কলকাতা-সিঙ্গাপুর বিমান পরিষেবা চালু হয়, সে সময় কলকাতায় গিয়েছিলেন কেরান। ওই অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও হাজির ছিলেন। সেখানে কেরান মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা বলেন। মমতা কিন্তু ইতিবাচক বার্তা দিয়েছেন। বিষয়টি রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় দেখছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। পার্থবাবুর বক্তব্য, রাজ্য সরকার কোনও প্রকল্প নিয়েও নেতিবাচক মনোভাব নিচ্ছে না। কিন্তু আগের সরকার যে সব চটজলদি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে, যাতে প্রকল্পগুলির রূপায়ণের কাজ সুষ্ঠু ভাবে করা সম্ভব হয়। সিঙ্গাপুর সরকার কিন্তু রাজ্য সরকারের ঢিলেমি নয়, এরোট্রোপলিস সংস্থায় তাদের সহযোগীকেই প্রশ্ন করছে। কলকাতায় গিয়ে সিঙ্গাপুরের রাষ্ট্রদূত ও দুই কূটনীতিক দীর্ঘক্ষণ ধরে এরোট্রোপলিসের কর্ণধার পার্থ ঘোষকে এ বিষয়ে কার্যত জেরা করেছেন। পার্থবাবু যুক্তি দিয়েছেন, তাঁদের দিক থেকে প্রকল্পের কাজ চলছে। কিন্তু জেলা প্রশাসন এখনও চেক বিলি না করাতেই সমস্যা দেখা দিয়েছে।
এর পরে সিঙ্গাপুর সরকারকে রিপোর্ট দিয়েছেন রাষ্ট্রদূত কেরান টান। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, প্রকল্পের বিষয়ে তাঁদের অংশীদার আশাবাদী হলেও রাজ্য সরকারের দিক থেকে অসহযোগিতার মনোভাব দেখা যাচ্ছে। একই ভাবে বিমানমন্ত্রী ভায়লার রবিকে রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, এই প্রকল্পটি হবে কি হবে না, তা নিয়ে সরকারের দিক থেকেও নিশ্চয়তা দরকার। |
|
|
|
|
|