রবীন্দ্র-স্মরণ
বক্তৃতায় মার্ক্স, অধ্যাপককে বাধা তৃণমূলের
বাম জমানায় বারবার ওঁরা গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধের অভিযোগ তুলতেন।
অথচ বাইশে শ্রাবণের অনুষ্ঠানে এক অধ্যাপক কার্ল মার্ক্সের প্রসঙ্গ তোলায় সোজা মঞ্চে উঠে বাধা দিলেন তৃণমূলের কিছু লোকজন। তিনি বক্তব্য প্রত্যাহার করতে রাজি না হওয়ায় সহ-উপাচার্যকে মঞ্চেই ঘেরাও করা হয়। সোমবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ঘটনায় শিক্ষক ও বিদ্বজ্জনেরা হতচকিত। তাঁরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এর নিন্দা করেছেন।
এ দিন বর্ধমানের রাজবাটি ক্যাম্পাসে কবি-স্মরণের অনুষ্ঠান শেষ বক্তা ছিলেন অর্থনীতির অধ্যাপক পিনাকী চক্রবর্তী। বর্তমান সমাজে মানুষে-মানুষে বিভেদ, অরাজকতা, ‘সভ্যতার সঙ্কট’ ইত্যাদি প্রসঙ্গে এসে পিনাকীবাবু বলেন, “রবীন্দ্রনাথ যেমন তাঁর সার্ধশততম জন্মবর্ষে এখনও দারুণ ভাবে প্রাসঙ্গিক, তেমনই কার্ল মার্ক্সও তাঁর সার্ধশততম বর্ষে সমান প্রাসঙ্গিক ছিলেন। মার্ক্স আজও প্রাসঙ্গিক।” এ প্রসঙ্গে অমর্ত্য সেনের বক্তব্য ঊদ্ধৃত করে তিনি বলেন, “অমর্ত্যবাবুও বলেছেন, মার্ক্স এখনও প্রাসঙ্গিকতা হারাননি।” অধ্যাপকের এ কথার পরেই তৃণমূল সমর্থক বিশ্ববিদ্যালয় কর্মীরা রে রে করে মঞ্চে উঠে পড়েন। রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণ দিবসে কেন মার্ক্সের ‘গুণগান’ করা হল সেই প্রশ্ন তুলে তাঁরা দাবি করতে থাকেন, “পিনাকীবাবু মার্ক্স প্রসঙ্গে যা বলেছেন তা তাঁকে প্রত্যাহার করতে হবে।” অধ্যাপক পাল্টা বলেন, “মার্ক্স এক জন মনীষী। তাঁর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আমি কোনও ভুল করিনি। সুযোগ হলে আবার বলব।”
মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য তথা রেজিস্ট্রার ষোড়শীমোহন দাঁ। সেখানেই তাঁকে ঘেরাও করে তৃণমূল সমর্থকেরা দাবি করেন, পিনাকীবাবুকে দিয়ে তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহার করাতে হবে। বিরক্ত ষোড়শীবাবু বলেন, “এ রকম চললে এর পরে শিক্ষক বা অধ্যাপকদের আর কোনও অনুষ্ঠানে ডাকা হবে না।” এর পরে তৃণমূলের লোকজন নেমে গেলেও পিনাকীবাবু আর বলতে পারেননি।
সহ-উপাচার্য বলেন, “পিনাকীবাবুর বক্তব্য নিয়ে ওঁরা আমার কাছে আপত্তি জানিয়েছিলেন। আমি ওঁকে তা বলেও দিই। তার পরেও কেন গোলমাল হল, বুঝলাম না।” বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক সমিতির (বুটা) বিদায়ী সম্পাদক পার্থ মিত্র বলেন, “উদাহরণ হিসাবে পিনাকীবাবু মার্ক্সের প্রসঙ্গ টানতেই পারেন। বাধা দেওয়া উচিত হয়নি।”
কিন্তু যাঁরা বাধা দিয়েছেন, সেই তৃণমূল প্রভাবিত বর্ধমান ইউনিভার্সিটি কর্মচারী সমিতির আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্যামাপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়, শৈলেন্দ্রনাথ ঘোষ এবং বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী সমিতির নেতা নীলেন্দু ঘোষ বিন্দুমাত্র লজ্জিত নন। তাঁদের বক্তব্য, “পিনাকীবাবু অপ্রাসঙ্গিক কথা বলে রবীন্দ্রনাথ ও গাঁধীকে অপমান করেছেন। গত ৩৪ বছর ধরে ওঁরা এ ভাবেই সব কিছুতে, এমনকী পড়াতে গিয়েও মার্ক্স-লেনিনের কথা টেনে আনেন। কিন্তু এ বার ওঁদের বাক্ সংবরণ করতে হবে।”
দলের কিছু লোকের এই আচরণে কিন্তু অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রাক্তন অধ্যাপক, বর্ধমান শহর থেকে জিতে রাজ্যের মন্ত্রী হওয়া রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। তাঁর মতে, “এটা কোনও মতেই উচিত হয়নি। যাঁর যা বক্তব্য, তিনি বলবেন। বাধা দেওয়া চলবে না।” তবে তাঁর সংযোজন, “বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে তালিবানি কাণ্ড কারখানা কিন্তু সিপিএমের আমলেই চলত। আমাদের সমর্থকেরা ওঁদের কাছ থেকেই শিখেছেন। কিন্তু এ ভাবে সিপিএমের অনুকরণ করা চলবে না।”

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়,
আমি ওই অধ্যাপকের কোনও দোষ দেখছি না। কার্ল মার্ক্স তো যুগন্ধর পুরুষ। মার্ক্স পৃথিবীকে একটা মতবাদ দিয়েছেন। সেটা পৃথিবী না মানতেই পারে। স্থৈর্য, ধৈর্যের যে এত অভাব ঘটছে, এটাই চিন্তার।
সুকান্ত চৌধুরী,
এই ঘটনার কথা আনন্দবাজারের কাছ থেকেই প্রথম শুনলাম। তার ভিত্তিতে আমার প্রতিক্রিয়া, কার্ল মার্ক্সকে প্রাসঙ্গিক বলা আদৌ কোনও গর্হিত অপরাধ নয়। কেউ এই বক্তব্য না মানতেই পারেন। কিন্তু মঞ্চে উঠে প্রতিবাদ জানানোটা সমর্থনযোগ্য নয়। এ ধরনের আলোচনা তো বিশ্ববিদ্যালয়েই হয়ে থাকে।


গৌতম ভদ্র,
এই ঘটনার নিন্দা করি। আমি মনে করি, মার্ক্স বা মাও কোনও ভাবেই রবীন্দ্রনাথের থেকে কম
প্রাসঙ্গিক নন। প্রত্যেক মানুষের নিজের মত জানানোর অধিকার আছে। কিন্তু বক্তৃতা চলাকালীন
কাউকে থামিয়ে বক্তব্য প্রত্যাহারের জন্য জোরাজুরি করা একটা মারাত্মক প্রবণতা।

সুগত বসু,
আমি সম্পূর্ণ ভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। রবীন্দ্রনাথের মতো মার্কসও প্রাসঙ্গিক, এ কথা যদি কেউ বলে থাকেন, তা হলে তিনি মোটেই ভুল করেননি। এতে আপত্তি জানানোর কোনও কারণ দেখছি না। যাঁরা এই ঘটনা ঘটালেন, তাঁরা মোটেই রবীন্দ্রনাথকে সম্মান দেখালেন না।
স্বপন মজুমদার,
ঘটনা সত্য হলে এ তো প্রায় ফাসিস্ত আচরণের মতো। রবীন্দ্রনাথ প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে মার্ক্সকে টেনে আনা প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয় না। তবে রবীন্দ্রনাথকে বড় করতে গিয়ে অন্যদের প্রতি যদি আমরা অসহিষ্ণু হয়ে উঠি, তা হলে বোধ হয় রবীন্দ্রনাথকেই ছোট করা হবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.