|
|
|
|
|
হাসপাতালের বর্জ্য তুলে ফুল
ফোটাচ্ছেন মনোজিৎ ডাক্তার অশোককুমার কুণ্ডু • আরামবাগ |
|
দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় এমন অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা কোনও দিন সে অর্থে
আলোকবৃত্তে আসেননি। অথচ, তাঁরা গোটা জীবন ধরে জেলার মনন এবং সাংস্কৃতিক মানচিত্রকে
রঙিন করে তুলেছেন। মাটি থেকে উঠে আসা সেই সব মানুষের কথা। |
মহকুমার মানুষের কাছে তিনি ‘ধন্বন্তরি।
রোগের কাছে তিনি সাক্ষাৎ যম। আর রোগীদের কাছে? বলাই বাহুল্য বড় ভরসার জায়গা। আর তাঁর ফলের বাগান? সেটাও গোটা মহকুমায় একটা দর্শনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এত কিছু লেখায় অত্যন্ত লজ্জিত হয়েই মনোজিৎ মুখোপাধ্যায় বলে ওঠেন, “এ সব লিখবেন না। ওই বাগান আমার নয়। ওটা আরামবাগ হাসপাতালের পড়ে থাকা বিঘে দশেক জায়গা। যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল হাসপাতালের বর্জ্য ফেলার ঠাঁই। সব সময় জমে থাকত নোংরা জল। জমির অনেকটাই জবরদখল হয়ে গিয়েছে। আমি একটু উদ্যোগী হয়ে বাগান করে জমিটাকে সুদৃশ্য করার চেষ্টা করেছি মাত্র।”
গ্রামীণ এলাকায় কিছু হাসপাতাল চত্বর সন্ধ্যার পরে যেমন নানা সমাজ কল্যাণ বিরোধী কাজকর্মের জায়গা হয়ে দাঁড়ায় এই হাসপাতালও তার থেকে রেহাই পায়নি। তাই হঠাৎ এমন প্রচেষ্টায় বাধা স্বাভাবিক ভাবেই এসেছিল। প্রথমে নানা রকম লোভ, তারপরে হুমকি, এমনকী প্রাণনাশের ভয়ও ছিল। তবে এখন আর সে সব নিয়ে ভাবতে চান না আরামবাগ হাসপাতালের রোগীদের প্রিয় মনোজিৎ ডাক্তার। এ সব প্রসঙ্গ তোলায় সঙ্গে সঙ্গে ফুলের দিকে হাত বাড়িয়ে পাপড়িগুলো নেড়ে দিয়ে বলেন, “ভুলে যান ও সব। বরং বলুন, ‘ফুলের বনে যারেই দেখি, তারেই লাগে ভালো’।”
আরামবাগের বেশিরভাগ মানুষই মনোজিৎ ডাক্তারের এমন কাজের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। নিজের পকেট থেকে খরচ করে এমন বাগান তৈরি করে শহরকে উপহার ক’জনই বা দিতে পারেন! ক’জনই বা পারেন এ ভাবে পরিবেশের কথা ভাবতে!
আরামবাগ হাসপাতালে ২৬ বছরের কর্মজীবন। বয়স ষাট ছুঁয়েছে। জন্মগ্রাম বীরভূমের রূপসীপুর। স্কুলের পাঠ সিউড়ি রামকৃষ্ণ বিদ্যাপীঠ। কলকাতার ন্যাশনাস মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস। তারপর পিজি (এসএসকেএম)-তে হাউসস্টাফ।
প্রথম পোস্টিং?
তার পিছনে রয়েছে কাহিনী। সালটা ১৯৮০। নকশাল রাজনীতি ঘেঁষা মানুষটি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সামনে বুক চিতিয়ে বলেছিলেন, “পশ্চিম বাংলার যে গ্রামে কেউ যেতে চায় না সেখানে আমাকে পোস্টিং দিলে কৃতজ্ঞ থাকব।” চলে গেলেন পুরুলিয়ার শিরকাবাদে। সেখানে গিয়ে হাসপাতালটাকে নিজের মতো করে গড়ে তুলেছিলেন। তাই আজও শিরকাবাদ প্রথম প্রেম ডাক্তারবাবুর। আর আরামবাগের মানুষের আক্ষেপ, অবসরের আগেই তাঁদের হাসপাতাল ছেড়ে দিলেন ডাক্তারবাবু। তবে না থেকেও অন্য ভাবে জড়িয়ে আছেন তিনি। এখনও অনেকে নানা সমস্যায় তাঁকে ফোন করে সমাধানের পথ খোঁজেন। আর তা ছাড়া বাগান তো রয়েছেই। গাছে গাছে ফুটে থাকা ফুলের দিকে তাকিয়ে ডাক্তারবাবু জানালেন, “এরা তো আমার সন্তান। এদের ফেলে কোথা যাই।” আর তাই সন্তানদের গায়ে এতটুকু আঁচড়ও বরদাস্ত করতে পারেন না। কেউ ফুল চাইলে বলে দেন, “এখান থেকে নয়, আমি আপনাকে বাজার থেকে ফুল এনে দেব।” তবে নিজের এই কাজে তিনি সাহায্যকারী হিসাবে পেয়ে গিয়েছেন শোলমা-কে। স্থানীয় বৃক্ষপ্রেমিক এই কন্যাকে ডাক্তারবাবু ডাকেন ‘মৃত্তিকা মাতা’ বলে। ডাক্তারবাবুর মতোই যাঁর কাছে এ বাগান তাঁর সন্তানের মতো। |
|
|
|
|
|