|
|
|
|
রেশনের ২১১ কুইন্টাল গম ‘পাচার’ |
ডিস্ট্রিবিউটর-সহ গ্রেফতার চার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • পুরুলিয়া |
রেশনের জন্য বরাদ্দ গম ময়দাকলে ‘পাচার’ করার সময় তা ধরা পড়েছিল পুলিশ ও খাদ্য দফতরের যৌথ অভিযানে। ওই ঘটনার জেরে পুরুলিয়া শহরের এক রেশন ডিস্ট্রিবিউটর, ওই ময়দাকলের মালিক ও ম্যানেজার-সহ চার জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পাশাপাশি ওই ঘটনার ব্যাপারে বিস্তারিত রিপোর্ট তলব করেছেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। শুক্রবার তিনি বলেন, “আমি পুরুলিয়ার জেলা খাদ্য নিয়ামককে রিপোর্ট নিয়ে কলকাতায় ডেকেছি। বৃহস্পতিবার রেশনের জন্য বরাদ্দ ২১১ কুইন্টাল গম ওখানে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।”
জেলা পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকেলে পুরুলিয়া মফস্সল থানা এলাকার ছড়রায় এফসিআইয়ের গুদাম থেকে রেশনের জন্য বরাদ্দ গম পুরুলিয়া শহরের এমআর ডিস্ট্রিবিউটর পিডি ঝুনঝুনওয়ালার গুদামে যাওয়ার কথা ছিল। পুলিশের কাছে খবর আসে, দু’টি লরিতে বোঝাই করে ওই গম ডিস্ট্রিবিউটরের গুদামের বদলে অন্যত্র পাচার করা হচ্ছে। খবর পেয়েই পুলিশ ও খাদ্য দফতরের আধিকারিকেরা ওই থানা এলাকারই গোলকুন্ডা মোড়ের একটি ময়দাকলে হানা দেন। পুলিশ জানিয়েছে, গম বোঝাই দু’টি লরিই ময়দাকল চত্বরের মধ্যে দাঁড়িয়েছিল। একটি লরি থেকে অনেকটা পরিমাণ গম ময়দাকলে নামানোও হয়ে গিয়েছিল। নথিপত্র পরীক্ষা করে খাদ্য দফতরের আধিকারিকেরা দেখেন, ওই গম যে ময়দাকলটির, সে সম্পর্কিত কোনও প্রমাণ নেই।
জেলা খাদ্য নিয়ামক সুনয়কুমার গোস্বামী বলেন, “বিধি অনুসারে ওই গম পুরুলিয়া শহরের সংশ্লিষ্ট ডিস্ট্রিবিউটরের সেই নির্দিষ্ট গুদামে নামার কথা, যার কথা খাদ্য দফতরের কাছে থাকা নথিপত্রে উল্লেখ রয়েছে। অথচ সেখানে লরি দু’টি খালি না করে ওই ময়দাকলে গম নামানো হচ্ছিল।” তিনি জানান, ওই ডিস্ট্রিবিউটর পুরুলিয়া ১, আড়শা ও হুড়াএই তিন ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্ত। যে গম বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, তা আড়শা ব্লকের গ্রাহকদের জন্য বরাদ্দ ছিল। জেলা পুলিশের এক কর্তাও বলেন, “খাদ্য দফতরের তালিকাভুক্ত পরিবেশকের নির্দিষ্ট গুদামে না গিয়ে বেআইনি ভাবে ময়দাকলটিতে গম নামানো হচ্ছিল। সময়মতো পৌঁছনোয় পুরো গমই পাচার হওয়ার হাত থেকে ঠেকানো গিয়েছে।” |
|
ময়দাকল চত্বরে গম বোঝাই ট্রাক আটক। ছবি: সুজিত মাহাতো। |
খাদ্য দফতর সূত্রের খবর, ডিস্ট্রিবিউটরের লাইসেন্স পি ডি ঝুনঝুনওয়ালার নামে থাকলেও বর্তমানে সেই ব্যবসা দেখাশোনা করেন তাঁরই ছেলে বিষ্ণু। পুলিশ বিষ্ণু ঝুনঝুনওয়ালা, ওই ময়দাকলটির মালিক অমিক খেড়িয়া, ময়দাকলের ম্যানেজার পরিমল দাস মোদক এবং একটি লরির চালক মুকশেদ আনসারিকে গ্রেফতার করেছে। অন্য লরিটির চালক পলাতক। তাঁর খোঁজ চলছে। ধৃতদের বিরুদ্ধে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইনের একাধিক ধারার পাশাপাশি ভারতীয় দণ্ডবিধির বিশ্বাসভঙ্গ ও পাচারকাজে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। শুক্রবার ধৃত চার জনকে পুরুলিয়ার মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাঁদের ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেন। এমআর ডিস্ট্রিবিউটর অ্যাসোসিয়েশনের পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক দেবকুমার দাঁ বলেন, “আমি ঘটনাটি শুনেছি। বিশদে জানি না। খোঁজ নিচ্ছি।”
গণবণ্টন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত এক ডিস্ট্রিবিউটরের বিরুদ্ধে রেশন-পণ্য ‘পাচারের’ অভিযোগ ওঠায় বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। রাজনৈতিক নেতারাও তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার (অজিত) নেতা অজিত মাহাতো বলেন, “সাধারণ মানুষের খাবার এ ভাবে যাঁরা পাচার করছেন, তাঁদের সকলকে আইন মোতাবেক শাস্তি দিতে হবে।” কাশীপুরের তৃণমূল বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়ার কথায়, “কিছুদিন আগে খাদ্যমন্ত্রী এই জেলায় এসে এমআর ডিলার ও ডিস্ট্রিবিউটরদের নিয়ে বৈঠক করে অনুরোধ করেছিলেন, আপনারা খাদ্যদ্রব্য গরিব ও সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিন। তার পরেও যদি কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এমন ভাবে রেশনের সামগ্রী পাচারের অভিযোগে জড়িয়ে পড়েন, তা হলে তাঁদের উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত। অভিযোগ প্রমাণিত হলে লাইসেন্স বাতিল হওয়াও দরকার।”
ক্ষুব্ধ খোদ খাদ্যমন্ত্রীও। যিনি বলেছেন, “এই ধরনের ঘটনা কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। সে তিনি যেই হন না কেন। রেশন-পণ্য পাচারের ব্যাপারে এক ধরনের অসাধু চক্র যে সক্রিয় রয়েছে, এ সব ঘটনায় তা পরিষ্কার। এই চক্র ভাঙা হবেই।”অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) হৃষিকেশ মুদি বলেন, “এই ঘটনা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। কতদিন ধরে এ জিনিস চলছে কে জানে! প্রশাসন এই ঘটনাকে হাল্কা ভাবে নিচ্ছে না। খাদ্য দফতর ও পুলিশ তদন্ত করছে। অভিযুক্তেরা গ্রেফতারও হয়েছেন।” পি ডি ঝুনঝুনওয়ালার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অবশ্য গম পাচারের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। |
|
|
|
|
|