|
|
|
|
‘পুলিশি অত্যাচারে’ আত্মঘাতী বধূ, পাঁচ পুলিশ সাসপেন্ড |
কৌশিক সাহা • কান্দি |
‘পুলিশি-নির্যাতন’ সহ্য করতে না পেরে এক মহিলার আত্মহত্যার অভিযোগ পেয়ে দ্রুত তৎপর হল রাজ্য প্রশাসন। ঘটনার খবর পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মুর্শিদাবাদের কান্দি থানার ৫ পুলিশকর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়।
শুক্রবার মহাকরণে রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায় বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করতে বলেছেন। ওই মহিলার বাড়ির লোকের অভিযোগের ভিত্তিতে কান্দি থানার পাঁচ পুলিশকর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয়-তদন্ত শুরু হয়েছে।” প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ঘটনার কথা জানতে পেরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডিজি-কে ‘কড়া ব্যবস্থা’ নিতে বলেন। এর পরেই ডিজি ব্যবস্থা নেন।
স্থানীয় সূত্রের খবর, মিঠু দে (৪২) নামে ওই মহিলার স্বামী রাজকুমার দে-র বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু অভিযুক্তকে না পেয়ে বুধবার রাতভর নাবালক পুত্রের সঙ্গে মিঠুদেবীকে থানায় আটকে রাখা হয়। এমনকী, বৃহস্পতিবার বিকেলে ফের কান্দি শহরের উমাপাড়ার বাড়িতে গিয়ে কান্দি থানার পুলিশকর্মীরা মিঠুদেবীকে মারধর, গালিগালাজও করেন, অভিযোগ রয়েছে এমনও। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার ভরতলাল মিনা বলেন, “রাতভর এক মহিলা ও তাঁর নাবালক ছেলেকে আটকে রাখা সম্পূর্ণ বেআইনি। সেই কারণেই কান্দি থানার সাব ইন্সপেক্টর প্রেমাশিস চট্টরাজ, হরলাল বিশ্বাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইন্সপেক্টর প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, কনস্টেবল তপন চন্দ এবং মহিলা কনস্টেবল কাকলি মুখোপাধ্যায়কে সাসপেন্ড করা হয়েছে।” অভিযুক্ত নন এমন এক মহিলাকে কেন থানায় ডেকে আনা হল, এই প্রশ্নের জবাবে ডিজি বলেন, “এই অভিযোগ উঠেছে বলেই আমরা তদন্ত করছি।” |
|
মিঠুর মৃতদেহ ঘিরে শোকার্ত পরিবার। শুক্রবার নিজস্ব চিত্র। |
ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ কোনও মহিলা বা অপ্রাপ্তবয়স্ককে থানায় ডেকে পাঠাতে পারে না। ওই ধরনের কাউকে থানায় ডাকতে হলে কারণ ব্যাখ্যা করে লিখিত অনুরোধপত্র পাঠাতে হবে। পুলিশ সুপার বলেন, “কান্দি থানার আইসি জ্যোতিষচন্দ্র রায় ওই ঘটনার সময় জলপাইগুড়িতে গিয়েছিলেন। তখন ওই পুলিশকর্মীরা ওই মহিলা ও তাঁর নাবালক পুত্রকে থানায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বুধবার ভোরে মিঠুদেবীর শাশুড়ি বীণাপাণিদেবীর বাড়ির সামনের ডোবা থেকে সুকুমার দে নামে স্থানীয় এক যুবকের দেহ পাওয়া যায়। এলাকাবাসীর সন্দেহ গিয়ে পড়ে বৃদ্ধার বড় ছেলে, কান্দির একটি মনোহারি দোকানের কর্মী রাজকুমারের উপরে। রাজকুমার তারপর থেকেই পলাতক। দম্পতির ছেলে, ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র সৌরভের দাবি, “বাবাকে না পেয়ে আমাকে এবং মা-কে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। বুধবার সারা রাত আমাদের আটকে রাখা হয়। পর দিন আমাদের ছেড়ে দিলেও সন্ধ্যায় ফের পুলিশ আসে আমাদের বাড়ি। তখন মা-কে খুব গালাগাল করে পুলিশেরা। মা-কে মারধরও করা হয়। ওরা বাড়ির জিনিসপত্র ভেঙে দেয়। পরে পুলিশ চলে গেলে মা অনেকক্ষণ ধরে কাঁদছিল।” শুক্রবার সকালে দেখা যায়, রান্নাঘরের চালে গলায় ওড়নার ফাঁস লাগানো অবস্থায় মিঠুদেবীর দেহ ঝুলছে।
মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে বাপেরবাড়ি এসেছেন মিঠুদেবীর দুই বিবাহিত মেয়ে মণি দে এবং মৌমিতা ঘোষ। তাঁদের অভিযোগ, “পুলিশের অত্যাচারে প্রচণ্ড অপমানিত হয়েই মা আত্মহত্যা করেছেন।” পুলিশ সুপারের বক্তব্য, “ওই মহিলার কী ভাবে মৃত্যু হয়েছে, তা ময়নাতদন্তের পরেই জানা যাবে। আমরা তদন্ত করছি।”
রাজকুমারের মা বীণাপাণিদেবী বলেন, “আমার টাকার উপরে বড় ছেলে রাজকুমারের নজর ছিল। ও মাঝেমধ্যেই আমাকে ওর সঙ্গে থাকতে বলত। আমি তাতে রাজি না হওয়ায় রাগারাগি করত।” এলাকাবাসীর বক্তব্য, সম্প্রতি রাতের দিকে বীণাপাণিদেবীর বাড়ির টিনের চালে ঢিল মারা হত। সে কথা শুনে স্থানীয় কিছু যুবক বৃদ্ধার বাড়ি পাহারা দেওয়া শুরু করেন। মঙ্গলবার রাতে একাই পাহারা দিচ্ছিলেন সুকুমার দে। সুকুমারের ভাই অজিত দে বলেন, ‘‘রাজকুমারই সম্ভবত রাতবিরেতে নিজের মা-কে ভয় দেখাতে আসত। আমাদের ধারণা, ও-ই দাদাকে খুন করেছে।” এর পরেই পুলিশ রাজকুমারের সন্ধানে তাঁর বাড়িতে হানা দেয়।
বীণাপাণিদেবী বলেন, “সুকুমারকে খুনের ঘটনায় রাজকুমারই প্রধান অভিযুক্ত। কিন্তু ও পালিয়েছে। ওর জন্য বৌমা লজ্জায় মুখ দেখাতে পারছিল না। তার উপরে পুলিশের অত্যচার! সেই কারণেই আত্মহত্যা করেছে বৌমা।” |
|
|
|
|
|