|
|
|
|
নিষিদ্ধ প্লাস্টিক বন্ধে এ বার জরিমানার দাওয়াই |
মিলন দত্ত • কলকাতা |
কেবল শুভবুদ্ধির কাছে আবেদন জানিয়ে যে নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করা যাবে না, তা বুঝতে পেরে অগত্যা কলকাতা ও শহরতলিতেও জরিমানার পথে হাঁটছে রাজ্য। কারও হাতে নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ দেখলেই নগদ ৫০ টাকা জরিমানা আদায় করবে পুলিশ। আর দোকানে ৪০ মাইক্রনের চেয়ে কম ঘনত্বের ক্যারিব্যাগে জিনিসপত্র বেচতে গিয়ে ধরা পড়লেই দিতে হবে নগদ ৫০০ টাকা। ইতিমধ্যে রাজ্যের যে ক’টি শহরে দূষণকারী প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করা গিয়েছে, সর্বত্রই প্রাথমিক পর্যায়ে সচেতনতা আনতে জরিমানার দাওয়াই চালু করতে হয়েছে।
এক দশকেরও বেশি পুরনো কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ আইনেই জরিমানা আদায়ের সংস্থান রয়েছে। সেই আইন মেনেই এ বার কলকাতা ও শহরতলির বাজার বা রাস্তা-ঘাটে জরিমানা আদায়ের সিদ্ধান্ত।এ কথা জানিয়ে রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদার বলেন, “কলকাতা পুরসভার সবক’টি ওয়ার্ডে আমরা সচেতনতা অভিযান চালানোর পাশাপাশি জরিমানা আদায়েরও ব্যবস্থা করছি। প্লাস্টিক দূষণের বিপদ এবং দূষণ আইন অমান্য করলে কার কত জরিমানা হবে, তা জানিয়ে প্রচার গাড়ি ঘুরছে কলকাতার বিভিন্ন জায়গায়। তার পরে বাজারে বাজারে অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ব্যবহারকারী দোকানদারদের জরিমানা করা হবে।”
শহর ও শহরতলির প্রায় সমস্ত সব্জি বাজার, হকার্স কর্নার, মাছের বাজার, মাংসের দোকান, মিষ্টির দোকান ও ফলের দোকানে নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ব্যাগের যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে। সবচেয়ে বেহাল অবস্থা কলকাতা পুর-এলাকার। কলকাতায় এখনও অবাধ ব্যবহার ভয়ানক বিষাক্ত কালো রঙের প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের। ৪০ মাইক্রনের চেয়ে পাতলা এবং ন্যূনতম ১২ ইঞ্চিX১৬ ইঞ্চি মাপের প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বহু আগেই নিষিদ্ধ করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু সেই বিধি প্রায় কোথাও মানা হচ্ছে না।
গত কয়েক বছরে নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের ব্যবহার বন্ধ করতে রাজ্য পরিবেশ দফর এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ বিভিন্ন রকম চেষ্টা করেও কলকাতায় তেমন সাফল্য পায়নি। এ ক্ষেত্রে গত বাম পুর-বোর্ড বা এখনকার তৃণমূল বোর্ডের মধ্যে তেমন ফারাক নেই। পর্ষদের আধিকারিকেরা এক বার বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালিয়ে দোকান থেকে নিষিদ্ধ প্ল্যাস্টিক ব্যাগ সংগ্রহ করে বাজারের মধ্যেই পুড়িয়ে দেন। গত বছর কলকাতা এবং শহরতলির বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে ৪১ জন অভিযুক্তকে জরিমানা করার পরে তাঁদের ময়দানে প্লাস্টিক সাফাই অভিযানে সামিল করা হয়। কিন্তু তার পরেও কলকাতায় প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি।
রাজ্যের যে সব শহরে ইতিমধ্যে নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ হয়েছে, তার প্রায় সবক’টিই উত্তরবঙ্গে। শিলিগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, রায়গঞ্জ ছাড়াও গঙ্গার দক্ষিণ পাড়ে বহরমপুর বহু দিন হল প্লাস্টিকমুক্ত। এ ছাড়া, বিচ্ছিন্ন ভাবে উত্তর ২৪ পরগনার দক্ষিণ দমদম পুরসভার বাঙুর অ্যাভিনিউ এলাকায় প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
তবে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের ব্যবহার বন্ধ হলে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে কাগজ বা অন্যান্য পচনশীল সামগ্রীর ব্যাগ বাজারে এসে যায়। তাতে বহু প্রান্তিক মানুষের জীবিকার ব্যবস্থা হয়। সাউথ এশিয়ান ফোরাম ফর এনভায়রনমেন্ট (সেফ)-এর কর্ণধার পরিবেশকর্মী দীপায়ন দে বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে পূর্ব কলকাতা জলাভূমি এলাকায় মৎস্যজীবী পরিবারের মেয়েদের পরিবেশসম্মত বিকল্প সামগ্রী দিয়ে ক্যারিব্যাগ বানানোর প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বন্ধ করা যায়নি বলে তাঁদের তৈরি ব্যাগ যথেষ্ট বাজার পাচ্ছে না। প্লাস্টিক ব্যাগ নিষিদ্ধ হলে ওই প্রান্তিক মহিলারা আলো দেখবেন।” একইসঙ্গে ভয়ানক দূষণ এবং নিকাশি বিপর্যয়ের হাত থেকেও বাঁচবে শহর। |
|
|
|
|
|