|
|
|
|
মোবাইলের আলোটুকুই বাইরে যাওয়ার ছাড়পত্র |
স্বপন বিশ্বাস
(লেখক গুয়াহাটি-বেঙ্গালুরু এক্সপ্রেসের যাত্রী) |
আমাদের ট্রেনের ইঞ্জিনে আগুন জ্বলছে! ইঞ্জিনের উপরে ওগুলো কী? আর একটা ইঞ্জিন, তার উপরে
আবার কামরা!
থাকি বেলাকোবায়। ভাড়ারগাড়ি চালাই। সঙ্গে আমার ভাই রতন। ওরই চিকিৎসার জন্য যাচ্ছিলাম অন্ধ্রপ্রদেশের পুট্টাপুর্তিতে। ছিলাম এস-৬ কামরায়।
নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ছাড়ার পরে ঠিকই চলছিল ট্রেন। পুরাতন মালদহ পর্যন্ত সমস্যা হয়নি। কিন্তু তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই এল বিপদ। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ। আচমকা প্রচণ্ড ঝাঁকুনি। বিকট শব্দ। কানে তালা ধরার উপক্রম। কিছু বোঝার আগেই কামরার মধ্যে সবাই ছিটকে পড়লাম। নিভে গেল সব আলো। শুরু হল চিৎকার-চেঁচামেচি। মাথায়-হাতে বড্ড জোরে লাগল। অন্ধকারের মধ্যে যে যে ভাবে পারছে হাঁচড়পাঁচড় করছে। কয়েকজন মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে কামরার দরজাটা খুঁজছিলেন। টিমটিমে সেই আলোটুকুই যেন হয়ে উঠল বাইরের দুনিয়ায় যাওয়ার ছাড়পত্র। সবাই ঝাঁপ দিচ্ছে যেখান দিয়ে, সে দিকে এগোলাম। হাতড়ে দরজার হাতল ধরে বাইরের অন্ধকারে নামলাম।
সামনে তাকিয়ে দেখলাম, ইঞ্জিনে আগুন জ্বলছে। আর তার পরে ওই বীভৎস দৃশ্য! আমাদের ট্রেনের ইঞ্জিনের প্রায় উপরে চেপে গিয়েছে আর একটা ইঞ্জিন। দ্বিতীয় ইঞ্জিনের একাংশে ঠেকে রয়েছে একটা কামরার বেশ কিছুটা। ওই কামরাটা থেকে শুনতে পাচ্ছিলাম আর্তনাদ। বুঝলাম, দুর্ঘটনাটা বড় মাপের। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচেছি। বুঝতেই, শিরদাঁড়া দিয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল। ইতিমধ্যে অন্যান্য কামরার যাত্রীরাও নেমে পড়েছেন। আতঙ্কে লোকজন দৌড়ঝাঁপ করছেন।
একটু ধাতস্থ হতে অনেকে জড়ো হলাম। ভাইকে পেলাম। বেলাকোবার অন্য লোকদেরও। প্রতিবেশী রিনা ভূমিজ তাঁর মা আশাদেবীকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছিলেন আমাদের সঙ্গে। কাঁপছিলেন মা-মেয়ে। সবার বাড়ির লোকজনই টিভিতে খবর দেখে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। মোবাইলে অনর্গল ফোন আসছিল। আমাদের কারও যে কিছু হয়নি, সেটা বোঝাতে হচ্ছিল। এরই মধ্যে দেখলাম কাত হয়ে থাকা একটি কামরা থেকে হাত বার করে চেঁচাচ্ছেন এক জন। লোকজন টর্চ নিয়ে ছুটে গেল উদ্ধার করতে। কামরাটার পাশে এক মহিলা অচেতন হয়ে পড়ে রয়েছেন। উল্টো দিক থেকে আসা ট্রেনটার ধারেও দেখলাম, কয়েকজন পড়ে গোঙাচ্ছেন। ক’জন বাঁচবেন কে জানে? ‘রিলিফ ট্রেন’ রাত ১০টা পর্যন্ত পৌঁছয়নি। এ দিকে মোবাইলের চার্জও ফুরিয়ে যাচ্ছে। আর বেশি কথা বলতে পারছি না..... |
|
|
|
|
|