চোয়ালে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে মারা হল এক সিটু নেতার আত্মীয়কে। ওই সিটু নেতারও বুকে গুলি করা হয়। শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে শিলিগুড়ির মাল্লাগুড়ির নিয়ন্ত্রিত বাজারে। মাল্লাগুড়ি বাজার সমিতি শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি ওই সিটু নেতা রাজকুমার যাদব আশঙ্কাজনক অবস্থায় মাটিগাড়ার একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন। তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, রাজকুমারবাবুর আত্মীয়, নিহত সুরেন্দ্র যাদব (৪৬) বিহারের দ্বারভাঙ্গা জেলার বাসিন্দা। তিনি দিন তিনেক আগে মাল্লাগুড়ি বাজার লাগোয়া পোখাইজোতে রাজকুমারবাবাবুর বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। হামলাকারীরা তৃণমূল-আশ্রিত বলে অভিযোগ করেছে সিটু। ঘটনার প্রতিবাদে আজ, সোমবার নিয়ন্ত্রিত বাজারে ধর্মঘট পালনের ডাকও দিয়েছে তারা। পুলিশ ওই হামলায় জড়িত অভিযোগে বাজারেরই দুই শ্রমিককে গ্রেফতার করেছে।
রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্যের অভিযোগ, “রাজকুমারবাবু দক্ষ সংগঠক। এলাকায় আতঙ্ক ছড়াতে তৃণমূল-আশ্রিত দুষ্কৃতীরা ওই হামলা করেছে।” তিনি বলেন, “অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। তবে মানুষ এ সব সহ্য করবেন না। বিচার চাইতে জনতার আদালতে যাব।” তবে ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেন, “সমাজবিরোধীদের নিজেদের গোলমাল। এ ধরনের কার্যকলাপ কিছুতেই বরদাস্ত করা হবে না। কড়া হাতে দমন করা হবে।” আজ, সোমবার শিলিগুড়ির সার্কিট হাউসে জেলার পুলিশ-কর্তা ও প্রশাসনের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করবেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। সেখানে শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। |
সিটুর সংগঠনের সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে যুক্ত রাজকুমারবাবু। আগে তিনি শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। তবে এখন তাঁর নিজস্ব পেঁয়াজের ব্যবসা হয়েছে। শনিবার রাতে ব্যবসা সেরে সুরেন্দ্র যাদবকে নিয়ে রাজকুমারবাবু বাড়ি ফিরছিলেন। পথে নিয়ন্ত্রিত বাজারের গুদামপট্টিতে ৪-৫ জন দুষ্কৃতী তাঁদের উপরে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। পুলিশ সূত্রের খবর, সুরেন্দ্রবাবুর চোয়ালে পিস্তল ঠেকিয়ে পর পর তিনটি গুলি করা হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। হামলায় যুক্ত থাকার অভিযোগে পুলিশ মোহন যাদব ও অমরজিৎ যাদব নামে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ জানায়, ধৃতদের বাড়িও পোখাইজোতে। তাঁরা নিয়ন্ত্রিত বাজারেই শ্রমিকের কাজ করেন। রাজকুমারবাবুর ভাই রামবালক যাদব বলেন, “দাদার সঙ্গে কারও শত্রুতা নেই। ব্যবসায় ভাল উন্নতি করছিলেন। বাজারের অনেকেই দাদার কথা শোনেন। জ্ঞান হারানোর আগে আমাকে দু’জনের নাম বলেছিলেন দাদা। পুলিশকে তা জানিয়েছি।” শিলিগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “কী কারণে ওই দু’জনকে গুলি করা হয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। পুরনো শত্রুতা থেকে এমন হয়ে থাকতে পারে। তদন্ত চলছে।”
রবিবার সকালে রাজকুমারকে দেখতে নার্সিংহোমে যান উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি ঘটনাস্থলেও যান। প্রাক্তন পুরমন্ত্রীও জখম ব্যক্তিকে দেখতে যান নার্সিংহোমে। ঘটনার প্রতিবাদে এ দিন শহরে মিছিল ও পথসভা করে সিটু। তৃণমূলের দার্জিলিং জেলার সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণ অবশ্য পাল বলেন, “ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। সিপিএম এবং সিটুর অন্তর্কলহে ওই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। দীর্ঘ দিন ধরে ওই বাজারে তোলাবাজি, নানা দুর্নীতি হচ্ছে। সে সব থেকেও এটা হয়ে থাকতে পারে।” তবে ‘অন্তর্কলহের’ প্রসঙ্গ ুনিয়ে দিয়েছেন স্থানীয় সিপিএম এবং সিটু নেতারা।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরেই কিছু দুষ্কৃতী শ্রমিক হিসেবে কাজ করার অছিলায় নিয়ন্ত্রিত বাজারে সমাজবিরোধী কার্যকলাপ করছে। প্রতিবাদ করায় সম্প্রতি এক সব্জি ব্যবসায়ীকে পিস্তল ঠেকিয়ে খুনের হুমকিও দেয় তারা। মাছ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক বাপি চৌধুরী বলেন, “সন্ধ্যার পরে সমাজবিরোধীদের দখলে চলে যায় নিয়ন্ত্রিত বাজার। বিভিন্ন জায়গা থেকে দুষ্কৃতীরা সেখানে জড়ো হয়। পুলিশ ওই এলাকায় সন্ধ্যায় এক বার টহল দিয়ে ফিরে যায়। কিন্তু রাত বাড়লে পরিস্থিত এমন হয়ে যায়, যে বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীরা লাঠি নিয়েও নিয়ন্ত্রিত বাজার এলাকায় ঘুরতে ভয় পান।” |