|
|
|
|
নয়া স্বপ্ন নিয়ে ‘সংশোধিত’ বামপন্থী, দাওয়াই গৌতমের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
রাজ্যে ক্ষমতা হারানোর পরে ‘সংশোধিত বামপন্থী’ হয়ে সিপিএমকে ফিরে আসতে হবে বলে দাওয়াই দিলেন দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য গৌতম দেব। তাঁর মতে, ঘুরে দাঁড়াতে হলে সিপিএমকে ‘নতুন স্বপ্ন’ হাজির করতেই হবে। এবং সেটা করতে পারলে ‘কালীঘাটের মমতা’ বামেদের ঠেকিয়ে রাখতে পারবেন না!
বস্তুত, শুধু তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে আঙুল তুলে যে লাভ নেই, সে কথা ফের বলেছেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতমবাবু। বরং তাঁরা যে নিজেদের দোষেই হেরেছেন, তা বুঝে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন থেকে শিক্ষাগ্রহণ করার উপরেই জোর দিয়েছেন তিনি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের আয়োজনে ‘বামপন্থা ও এই সময়’ শীর্ষক এক আলোচনাসভায় রবিবার গৌতমবাবু বলেন, “মমতাকে ঘিরে যা হচ্ছে, দু-চার মাসের বেশি এ সব চলবে না! কিন্তু বামেদের ফিরে আসতে হবে নতুন দর্শন নিয়ে। সংশোধিত বামপন্থী হতে হবে। নতুন স্বপ্ন হাজির করতে হবে বামেদের।” পরাজয়ের পরে দলের বিভিন্ন স্তরের কমরেডরা আলিমুদ্দিনে নিয়মিত চিঠি পাঠাচ্ছেন এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের তত্ত্বাবধানে সেই সব চিঠির উত্তর দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়ে গৌতমবাবু বুঝিয়েছেন, ‘সংশোধিত বামপন্থী’ হওয়ার পথে দলের কর্মী-সমর্থক এবং সাধারণ মানুষের মতামতকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রাক্তন ছাত্র এবং অধুনা সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতমবাবু এ দিনের ঘরোয়া আসরে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের দৃষ্টান্ত টেনে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, মহাকরণে তাঁরা এখন আর যেতে পারছেন না এটা ‘মাথায় আঘাত’ নয়। সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেও কেন সোভিয়েতের পতন হল, তার কারণ থেকে শিক্ষা নেওয়া বরং সারা বিশ্বের কমিউনিস্টদের কাছেই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণ আমেরিকায় সমাজতন্ত্রের উত্তরণের কাহিনি ব্যাখ্যা করে এই রাজ্যের প্রসঙ্গে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে গৌতমবাবুর মন্তব্য, “মমতা-টমতা ইতিহাসের চলার পথে কমা, ফুলস্টপ মাত্র! ইতিহাস তো অনেক বড়। জরুরি অবস্থা পারেনি আর কালীঘাটের মমতা আমাদের ঠেকাবে? আমরা হেরেছি আমাদের দোষে। খালি মমতার দিকে আঙুল তুলে লাভ নেই।”
মমতার সরকারকে তাঁরা যে আরও কিছু দিন সময় দেওয়ার পক্ষপাতী, তা-ও ফের স্পষ্ট করে দিয়েছেন গৌতমবাবু। তাঁর কথায়, “মমতা কয়েক মাস যা পারে, করুক! খুন-খারাবি না-হলে কিছু বলতামই না। তবে কয়েক মাস পরে আমাদের রাস্তায় নামতে হবে, দু-চার কথা বলতে হবে। সেটা জানা থাকা ভাল!” তাই বলে একেবারে নিজস্ব কায়দায় মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করতে ছাড়েননি প্রাক্তন মন্ত্রী। বলেছেন, “বামপন্থী স্লোগানের আড়ালে মমতা দক্ষিণপন্থী শক্তি। বামপন্থী কথাটার এমন এক আকর্ষণ, মমতাকেও যার জন্য বামপন্থী নানা দলকে সঙ্গে নিতে হয়, বামপন্থী স্লোগান দিতে হয়। একটা রাজ্যে হিটলার হওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু মমতা চূড়ান্ত স্বৈরাচারী শক্তি! নিজে ছুটছে! বাকি মন্ত্রীদের ফেভিকল দিয়ে আটকে রেখেছে!” তবে এ সব নিয়ে বেশি মাথা না-ঘামিয়ে নিজেদের ‘আয়নার সামনে বারবার দাঁড়ানো’র পরামর্শই দিয়েছেন গৌতমবাবু।
গত বিধানসভা ভোটের প্রচারে দলের প্রচারের অন্যতম প্রধান ‘মুখ’ গৌতমবাবু জানান, বিপর্যয়ের কারণ নিয়ে সিপিএমের অন্দরে ‘চুলচেরা বিচার’ চলছে।
রাজ্যের ১০৬টা বিধানসভা কেন্দ্রে কেন বামেদের ভোট বাড়ানো গেল না, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার মতো জেলায় কেন সব কেন্দ্রে ভোট কমল আবার কোচবিহারে সব কেন্দ্রে ভোট বাড়ল এই যাবতীয় প্রশ্নেরই উত্তর খোঁজার চেষ্টা হচ্ছে। তাঁর কথায়, “কংগ্রেসের লোক কংগ্রেসকে ভোট দেবে, তৃণমূলের লোক তৃণমূলকে দেবে। কংগ্রেস-তৃণমূল জোট বেঁধেছে, তাতেও কিছু যায়-আসে না। কিন্তু অতীতে আমাদের ভোট দিয়েছে, এমন ২০-২৫ লক্ষ মানুষ কেন ওই দিকে ভোট দিল? ৩৪ বছরে মোট ২৮টা নির্বাচন জিতেছি, আমাদের বিরুদ্ধে একটা বড় অংশের ভোট পড়তই। কিন্তু কখনও তো হারাতে পারেনি! ওই ২০-২৫ লক্ষ ভোট কেন চলে গেল, বার করতেই হবে।” আলোচনার শেষে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনীদের সঙ্গে মুখোমুখি আসরে অবশ্য বেশ কিছু ‘অস্বস্তিকর প্রশ্ন’ সামলাতে হয়েছে গৌতমবাবুকে। কেরলের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভি এস অচ্যুতানন্দন যেখানে ছোবড়া শিল্পের প্রসারের জন্য বাড়ি বাড়ি ঘুরেছেন, সেখানে এ রাজ্যে কেন ‘গুজরাত মডেলে’ উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে, বুদ্ধবাবুকে কেন খোকন ঘোষ দস্তিদারের মতো নেতাকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হয়েছে এই জাতীয় প্রশ্নবাণের মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁকে! |
|
|
|
|
|