|
|
|
|
জয়রামের সঙ্গে বৈঠক দেবব্রতর |
জনস্বার্থেও বেসরকারি সংস্থাকে জমি দিতে আপত্তি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
কেন্দ্রের প্রস্তাবিত জমি বিলে ‘জনস্বার্থে’ বেসরকারি প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের যে সুযোগ রাখা হয়েছে তা বতিলের দাবি জানালেন রাজ্য সরকারের জমি নীতির প্রণেতা তথা তৃণমূল সাংসদ দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়।
শনিবার প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ও কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর দূত হয়ে আসা কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী জয়রাম রমেশের সঙ্গে মিনিট পনেরো বৈঠকের পরে প্রস্তাবিত বিলটিকে ‘ইতিবাচক’ বললেও চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত জানাননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বরং ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, দু’-একটি বিষয়ে তাঁর ‘অন্য রকম’ বক্তব্য রয়েছে। রবিবার জয়রামের সঙ্গে বৈঠকে সেই আপত্তির কথা স্পষ্ট করেছেন দেবব্রতবাবু। তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে বলেছেন, খসড়া বিলের ১এ ধারার ১বি এবং সি উপধারায় ‘জনস্বার্থে’ বেসরকারি সংস্থার জন্য জমি অধিগ্রহণ করা যাবে বলা হয়েছে। এর ফলে একটা সংশয়ের জায়গা তৈরি হচ্ছে। বেসরকারি সংস্থার কোনও কাজই জনস্বার্থে হতে পারে না। অতএব এই দু’টি উপধারাই বাতিল করা হোক। তার বদলে স্পষ্ট বলা হোক, সরকার কোনও বেসরকারি সংস্থার জন্য জমি নেবে না। একমাত্র ব্যতিক্রম হতে পারে যদি সেই সংস্থা সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগের (পিপিপি) কোনও কাজ করে। বস্তুত, মমতাও গত কাল বলেছিলেন, “আমরা বলেছি, রেলের কাজ, বাঁধ নির্মাণ, প্রতিরক্ষার মতো জরুরি প্রয়োজন ছাড়া জমি অধিগ্রহণ করা হবে না।” |
|
বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী জয়রাম রমেশ ও তৃণমূল সাংসদ দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার সল্টলেকে। নিজস্ব চিত্র |
দেবব্রতবাবু এ দিন বলেন, “এখন তো পিপিপি মডেলের যুগ। যেমন দিল্লি বা হায়দরাবাদে বিমানবন্দর তৈরির কাজ সরকার করেনি। তারা একটি বেসরকারি সংস্থাকে দায়িত্ব দিয়েছে। যে বিমানবন্দর সাধারণ মানুষের কাজে লাগবে, যে রাস্তা দিয়ে মানুষজন যাতায়াত করবেন, তা বেসরকারি উদ্যোগে হলে তার জন্য জমি অধিগ্রহণ করা যেতে পারে।” তাঁর প্রস্তাব, বেসরকারি সংস্থাটি সরকারি প্রকল্পের কাজ করছে কি না, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দফতরকে শংসাপত্র দিতে হবে।
এ দিন সল্টলেকে নিজের বাড়িতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে প্রায় দু’ঘণ্টার বৈঠকে জমি অধিগ্রহণের বিষয়টি নিয়ে তাঁকে হাতে লেখা আট পাতার একটি পরামর্শপত্র দিয়েছেন দেবব্রতবাবু। সেই সুপারিশ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে বলে জয়রাম জানান। তিনি বলেন, “দেবব্রতবাবুর সঙ্গে খুব ভাল আলোচনা হয়েছে। সেখানে যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি উঠে এসেছে তা হল, বেসরকারি সংস্থার জন্য সরকার তখনই জমি অধিগ্রহণ করবে, যদি তা জনস্বার্থে ব্যবহার হয়। অর্থাৎ, রেলপথ, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বিমানবন্দর ইত্যাদি ক্ষেত্রে। কখনও সেই অধিগ্রহণ বেসরকারি সংস্থার ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যের জন্য হবে না। দেবব্রতবাবুর ওই সুপারিশ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হবে। আগামী এক মাস বিলটি নিয়ে আলোচনা করার সময় পাওয়া যাবে।”
খসড়া বিলের আরও একটি বিষয় নিয়ে আপত্তি করেছেন দেবব্রতবাবু। সেটি হল, অধিগৃহীত জমি ফেরত দেওয়ার বিষয়টি সুস্পষ্ট ভাবে এতে বলা হয়নি। তাঁর কথায়, “খুব ঘোরালো ভাবে অল্প কথায় বিষয়টির উল্লেখ করা হয়েছে। এটা পাল্টানো দরকার।” দেবব্রতবাবুর মতে, যদি জমি নিয়ে প্রকল্প করা না হয়, বা প্রয়োজনের অতিরিক্ত জমি নেওয়া হয়, অথবা যে উদ্দেশ্যে জমি নেওয়া হয়েছে তার বদলে অন্য কিছু করা হয়, তা হলে জমি ফেরতের সুস্পষ্ট বিধান বিলে থাকা দরকার।
কিছু আপত্তি থাকলেও কেন্দ্রের প্রস্তাবিত বিলটি যে সামগ্রিক ভাবে ভাল, তা অবশ্য এ দিন স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন দেবব্রতবাবু। তিনি বলেন, “এই বিলটি অসম্ভব ভাল। কারণ এটি সাহসী এবং যথেষ্ট উদ্ভাবনী শক্তির পরিচয় রয়েছে। এটা কোনও সংশোধনী নয়, একেবারে নতুন বিল। এতে এক দিকে যেমন জমি অধিগ্রহণের সঙ্গে ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের বিষয়টি একত্রিত করে দেওয়া হয়েছে, তেমনই জমি যে শুধু সম্পদ নয়, জীবিকা নির্বাহের উপায়ও, সে কথাও মেনে নেওয়া হয়েছে।” জয়রামও পরে বলেন, “তৃণমূলের সঙ্গে আমাদের নীতির কোনও তফাৎ নেই। গত কালই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিল নিয়ে আলোচনা হয়েছে। উনি বলেছেন, আমরা ঠিক দিকেই এগোচ্ছি।” |
|
|
|
|
|