|
|
|
|
বহরমপুর রবীন্দ্রসদন সংস্কারে উদ্যোগী হয়েছে পূর্ত দফতর |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বহরমপুর |
শেষ পর্যন্ত বহরমপুর রবীন্দ্রসদন প্রেক্ষাগৃহের আধুনিকীকরণ ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে পূর্ত দফতরের প্রতিমন্ত্রী তৃণমূল কংগ্রেসের সুব্রত সাহা।
এর আগে ২০০৯-১০ আর্থিক বছরে সংস্কার ও রবীন্দ্রসদনকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মুর্শিদাবাদ জেলাপ্রশাসনের তরফে তিন কোটি ৪০ লক্ষ টাকার প্রকল্প তৈরি করে জমা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন রাজ্য সরকার এ ব্যাপারে কোনও উচ্চবাচ্য করেনি বলে দাবি। নতুন সরকার গঠনের দু’মাসের মধ্যেই তৃণমূল রবীন্দ্রসদন সংস্কারে এগিয়ে আসায় বহরমপুর তথা জেলার সংস্কৃতি মহল খুশি। পূর্তদফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে সম্প্রতি সুব্রতবাবু রবীন্দ্রসদন প্রেক্ষাগৃহ ঘুরে দেখেন। সেই সময়ে রবীন্দ্রসদনে হাজির ছিলেন বহরমপুরের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরাও।
সুব্রতবাবু বলেন, “ঐতিহ্যের দিক থেকে কলকাতা রবীন্দ্রসদনের পরেই বহরমপুর রবীন্দ্রসদনের স্থান। সারা বছরই নানা অনুষ্ঠান লেগে থাকে। কিন্তু রবীন্দ্রসদনের উন্নতি বা সংস্কার আটকে রয়েছে। বিষয়টি আমাদের নাড়া দিয়েছে। ফলে কলকাতার স্টার থিয়েটার নতুন করে গড়তে যাঁরা সাহায্য করেছেন, বহরমপুরের রবীন্দ্রসদনের আধুনিকীকরণ ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ করতে তাঁদের সহায়তা নেওয়া হবে। সেই সঙ্গে বহরমপুর তথা জেলার বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীরাও পরামর্শ দিতে এগিয়ে আসবেন, এটাই অনুরোধ।” |
|
রবীন্দ্রসদনে মুক্ত মঞ্চ গড়ার কাজ প্রথমে শুরু হয়েছিল ছাতিমতলাতেই। নিজস্ব চিত্র। |
প্রসঙ্গত, বহরমপুর রবীন্দ্রসদন প্রেক্ষাগৃহের আধুনিকীকরণে বিশেষজ্ঞ দলের পরামর্শ নেয় জেলাপ্রশাসন। বারাসতের রবীন্দ্রসদন নির্মাণ করেছিল, সেই সংস্থার বিশেষজ্ঞ দল বহরমপুর রবীন্দ্রসদন প্রেক্ষাগৃহ সরজমিনে খতিয়ে দেখে একটি প্রকল্প তৈরি করে। সেই প্রকল্পের মধ্য ছিল রবীন্দ্রসদন মঞ্চ ও গ্রিনরুমের সংস্কার, মঞ্চের আলোক ও শব্দ ব্যবস্থার পূণর্বিন্যাসের পাশাপাশি শব্দ প্রেক্ষাপণ ব্যবস্থা ও অ্যাকুয়িস্টিক পদ্ধতিতে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার, প্রেক্ষাগৃহের আসন ও পাখার আধুনিকীকরণ, প্রেক্ষাগৃহের বহিরঙ্গের সংস্কার, অলঙ্করণ, আলোকব্যবস্থা, শৌচালয়, পানীয় জল, টিকিট কাউন্টার থেকে আর্ট গ্যালারি গড়ে তুলে রবীন্দ্রসদন চত্বরকে পাঁচিল দিয়ে ঘেরার কাজও। সব মিলিয়ে ওই প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে ৩ কোটি ৪০৯ লক্ষ টাকা খরচ হবে বলে ওই বিশেষজ্ঞ দল জানান। কিন্তু অভিযোগ, তৎকালীন রাজ্য সরকার উদ্যোগী না হওয়ায় ওই প্রকল্পে ধুলো জমছিল। জেলা তথ্য ও সাংস্কৃতিক আধিকারিক করুণা ভৌমিক বলেন, “পূর্ত দফতর এখন রবীন্দ্রসদন প্রেক্ষাগৃহ সংস্কারের ব্যাপারে উদ্যোগী হলে আমরা মন্ত্রীর হাতে ওই প্রকল্পের ফাইল তুলে দিয়েছে।”
রবীন্দ্রসদন প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণে বহরমপুর তথা জেলার সর্বস্তরের মানুষের কাছে থেকে চাঁদা তোলা হয়১ লক্ষ ১২ হাজার ৬৭৯ টাকা ৬৮ পয়সা। এর পরেই তৎকালীন জেলাশাসক সিএনপেন অ্যান্টনি ১৩৬৮ সালের ২৫ বৈশাখ ওই প্রেক্ষাগৃহের শিলান্যাস করেন। পরে কেন্দ্রীয় সরকার অনুদান হিসেবে দেয় ৪৮ হাজার ৭৮০ টাকা, রাজ্য সরকার ৩ লক্ষ ৬২ হাজার ৬৮০ টাকা ও রাজ্য সরকারের স্বল্প সঞ্চয় সংস্থা দেয় ৫০ হাজার টাকা। পরে অর্থের অভাবে কাজ থমকে যায়। তখন ফের জনসাধারণের কাছ থেকে ২ লক্ষ ৩২ হাজার ৭২০ টাকা ৫৫ পয়সা চাঁদা সংগ্রহ করা হয়। শেষ পর্যন্ত শিলান্যাসের ১৭ বছর পরে ১৯৭৮ সালের ৯ মে (২৫ বৈশাখ) প্রেক্ষাগৃহের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়।
রবীন্দ্রসদনের আধুনিকীকরণের পাশাপাশি সদন চত্বরের পশ্চিম দিক লাগোয়া জায়গায় একটি স্থায়ী মুক্তমঞ্চ গড়ে তোলা হচ্ছে, যা নিয়ে সাংস্কৃতিক কর্মীদের মধ্যে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। ছাতিমতলার নিচে এখন যেখানে অস্থায়ী মঞ্চ গড়ে অনুষ্ঠান হয়, তাঁরা সেখানেই স্থায়ী মুক্তমঞ্চ গড়ার পক্ষে। এ ব্যাপারে সুব্রতবাবু বলেন, “সব মহলের সঙ্গে আলোচনা করেই স্থায়ী মুক্তমঞ্চ গড়ে তোলা হবে। তবে রবীন্দ্রসদনের যে দিকে রয়েছে, সেই দিকেই মুখ করে মুক্তমঞ্চ গড়ার কথা বলা হয়েছে। এখন এ ব্যাপারে কারও আপত্তি থাকলে বিষয়টি আমরা ভেবে দেখব।” এর আগে ছাতিম তলার নিচে মুক্তমঞ্চ গড়ার কথা ছিল বলে সেদিকে প্রথমে মাটি খোঁড়া শুরু হয়। পরে স্থান পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় অন্য প্রান্তে মাটি খোঁড়ার কাজ শুরু হয়েছে। |
|
|
|
|
|