|
|
|
|
বহরমপুরে স্ত্রীকে নিগ্রহের নালিশ, ধৃত প্রাথমিকের শিক্ষক |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বহরমপুর |
স্ত্রীকে শারীরিক নিগ্রহের অভিযোগে বহরমপুরে গ্রেফতার করা হল একটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষককে। তাঁর মা-ও প্রাক্তন প্রধান শিক্ষিকা। তাঁকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।
রবিবার দুপুরে বহরমপুর থানার পুলিশ স্বর্ণময়ী সুতির মাঠ এলাকায় মানকুমারী রোডের ‘মানতারা’ আবাসনে শ্বশুরবাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন পিঙ্কি চট্টোপাধ্যায় নামে এক মহিলা। প্রতিবেশী এক মহিলা তাঁকে উদ্ধার করেন। তারপরে পিঙ্কি বহরমপুর থানায় স্বামী ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করেন। বহরমপুর থানার আইসি প্রমোদরঞ্জন বর্মণ বলেন, “ওই মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে স্বামী ও শাশুড়িকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।”
পিঙ্কির স্বামী প্রসূন কুমার চট্টোপাধ্যায় নওদা থানার গোবিন্দপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। শাশুড়ি সুলেখা চট্টোপাধ্যায় পঞ্চাননতলা সতীশচন্দ্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানতে পেরেছে, বছর দু’য়েক আগে রেজিস্ট্রি করলেও তিন মাস আগে পিঙ্কিদেবীকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান প্রসূনবাবু। তার আগে পিঙ্কি নিজের শহরের মধুপুর এলাকায় বাবার বাড়িতেই থাকতেন। পিঙ্কি বলেন, “সাত বছরের সম্পর্ক আমাদের। তারপরে ২০০৯ সালে প্রসূন আমাকে বিয়ে করে। তখন বেকার ছিল বলে বিয়ের রেজিস্ট্রির খবর বাড়িতে জানাতে পারেনি। পরে ২০১০ সালে ফেব্রুয়ারিতে স্কুলের চাকরি পেয়ে বাড়িতে আমাদের বিয়ের কথা জানায়। শাশুড়ি প্রথমে মানতে চাননি। পরে মেনে নিলে তিন মাস আগে বাবার বাড়ি থেকে আমি শ্বশুরবাড়িতে যাই।” |
|
বাপের বাড়িতে পিঙ্কি। নিজস্ব চিত্র। |
শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার পর থেকেই ছোটখাটো নানা ব্যাপারে শাশুড়ি গঞ্জনা দিতেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এমনকী শারীরিক নির্যাতনও চালান তিনি। গত শুক্রবার সকাল থেকে ওই অত্যাচার চরমে ওঠে। পিঙ্কির অভিযোগ, “শারীরিক অত্যাচারের কথা পাশের ফ্ল্যাটের কেউ জানতে না পারে, এজন্য মুখের মধ্যে কাপড় গুঁজে মারধর শুরু হয়। শাশুড়ি মারধর করলেও আমার স্বামী তার কোনও প্রতিবাদ করত না। তার মাকেই সমর্থন করত।” শনিবার রাতেও একপ্রস্থ মারধর করে বলে পিঙ্কি জানান। তাঁর অভিযোগ, “আমার বাবার পরিবারের সামাজিক অবস্থান নিয়েও এদিন সকালে পরিচারিকার সামনে আমাকে অপমান করা হয়। প্রতিবাদ করতে গেলে চুলের মুঠি ধরে আমাকে মারধর করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত শারীরিক অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে গলায় ওড়নার ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করব বলে দরজা বন্ধ করে দিই।”
তখন শাশুড়ি পাশের ফ্ল্যাটের লোকজনকে বিষয়টি জানান। এর পরেই পাশের ফ্ল্যাটের আবাসিক চুঁয়াপুর বিদ্যানিকেতন স্কুলের পার্শ্বশিক্ষিকা সুপ্রিয়া পাণ্ডে আবাসনের অন্য আবাসিকদের ডেকে ঘরের দরজা ভেঙে পিঙ্কিকে উদ্ধার করেন। সুপ্রিয়া বলেন, “এদিন দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে পিঙ্কিকে আত্মহত্যা করা থেকে আটকাই। পরে ‘আমাকে বাঁচাও বৌদি’ বলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। তখন আমাদের ফ্ল্যাটে নিয়ে এসে তাঁর গায়ে-মাথায় জল ঢেলে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করি। পরে ফোন নম্বর নিয়ে ওর বাবাকে বিষয়টি জানাই।”
এর পরেই পিঙ্কির পরিবারের সদস্যরা পুলিশে খবর দেন। খবর পেয়ে বহরমপুর থানার পুলিশ ওই আবাসনে পৌঁছে মা ও ছেলেকে থানায় নিয়ে যায়। পরে পিঙ্কির অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁদের দুজনকেই গ্রেফতার করে পুলিশ। পিঙ্কির বাবা ধীরাজ কুমার দাস বলেন, “বিয়ের সময়ে জামাইকে নগদ ৪০ হাজার টাকা, ৬ ভরি সোনা ও অন্য সামগ্রী দিয়েছি। তা সত্ত্বেও বাড়ি করার জন্য বহরমপুরে তিন কাঠা জায়গা কেনার টাকা ও সোনার গহনা বাড়ি থেকে নিয়ে আসার জন্য শাশুড়ি আমার মেয়ের উপরে চাপ সৃষ্টি করেন।
শাশুড়ি সুলেখাদেবী অবশ্য বলেন, “আমার বৌমা মানসিক ভারসাম্যহীন। কখন কি করে মাথার কোনও ঠিক নেই। আমার কাছ থেকে ছেলেকে আলাদা করার জন্যই মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে। যার কোনও ভিত্তি নেই।” |
|
|
|
|
|