বিল পেরিয়েই ঢুকতে হয় উপানন্দ কলোনি গ্রামে
টনা ১- বছর খানেক আগের কথা। কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন কীর্তিবাস বিশ্বাস (২৭)। গ্রামের লোকজন যখন তা বুঝতে পেরে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেন, কিন্তু গ্রামে ঢোকা বেরোনোর প্রধান রাস্তাটাই জল ভরা বিল হওয়ায় অনেক দেরি হয়ে গেল। মারা যান তিনি।
ঘটনা ২- মাস কয়েক আগে সাপে কেটেছিল গ্রামের শোভারানি বিশ্বাসকে (২২)। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল হাসপাতালে। কিন্তু, রাস্তা তো নেই। হাসপাতাল পর্যন্ত তাঁকে নিয়েই যাওয়া যায়নি। পথেই মৃত্যু হয় তাঁর।
ঘটনা ৩- দিন কয়েক আগে কৃষ্ণনগর থেকে পাত্র দেখতে এসেছিলেন পাত্রীপক্ষ। পাত্র পছন্দ, তার বাড়িঘরও ঠিকঠাক। কিন্তু মেয়ের বিয়ে দিলে তার শ্বশুরবাড়ির গ্রামে ঢোকার রাস্তা কোথায়? অতএব বিয়ে বাতিল।
সম্বৎসর সমস্যা নিয়েই থাকে অধিকাংশ গ্রাম। কিন্তু যে গ্রামে বছরে ১১ মাসই ঢোকার রাস্তাটাই নেই, সেখানে ঠিক কী হতে পারে, তা উপানন্দ কলোনির মানুষই সব থেকে ভাল বোঝেন। করিমপুর ২ ব্লকের রহমতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত এই কলোনিতে প্রায় চল্লিশ ঘর লোকের বাস। শিক্ষিতের হার প্রায় ২০ শতাংশ। গ্রামের অধিকাংশ মানুষই দারিদ্রসীমার নীচে বসবাস করেন।
বর্ষায় এ ভাবেই যাতায়াত করতে হয় গ্রামবাসীদের। নিজস্ব চিত্র।
গ্রামের সামনে বিল। বাকি তিন দিকে চাষের জমি। বিলটি বাঁধ দিয়ে দিয়ে ছোট ছোট জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। তাই সেখানে আগে নৌকা চড়ে যাতায়াত করা যেত। কিন্তু এখন জলাশয়ে বাঁধ দিয়ে দেওয়ার ফলে ডোঙা আর পুরোটা চলে না। গ্রামে ঢোকার পথটা তাই কাদা-জল পেরিয়েই যেতে হবে। সেখানে কখনও এক বুক জল। কখনও কোমর পর্যন্ত। সেখানে একটা ডোঙা রয়েছে। সেই ডোঙায় কিন্তু এক জনের বেশি ওঠা যায় না। গ্রামের পিছন দিকে চাষের খেত পেরিয়ে যাওয়া যায় নিশ্চয়ই। কিন্তু তাতে ঘুরতে হয় অনেকটা বেশি পথ। গ্রামের গৌতম বিশ্বাস বলেন, “আসলে যে দিকে পাকা সড়ক এবং স্কুল রয়েছে, সেই দিকটাই বিলের কারণে বন্ধ। সেখানে কাদা-জল পেরিয়ে যেতে হয়। পিছন দিক দিয়ে গেলে গ্রামের কাছাকাছি স্কুল, বাজার বা পাকা সড়কের সুবিধাটা পাওয়া যায় না। তা-ও যদি পিছন দিক থেকে যেতে হয়, তা হলেও দূরত্ব কিন্তু যথেষ্টই।” পিছন দিক থেকে গেলে এক কিলোমিটার অতিরিক্ত ঘুরতে হয়। মাঠ পেরিয়ে সেক্ষেত্রে তাঁরা চলে যান দিনেশ কলোনি এবং সুকান্ত কলোনি। খেত ধরে তিন কিলোমিটার ঘুরলে রহমতপুর বাজার। কিন্তু সেটা প্রায় কেউই করেন না। বরং বর্ষাকালে বিলের ১৫-২০ মিটার গলা পর্যন্ত জল পেরিয়ে চলাচল করতে অভ্যস্ত তাঁরা। এই গ্রামের মানুষ তাঁদের সাইকেল রাখেন বিলের ওপারে রহমতপুর বাজারে। কিন্তু তার ফলে কোনও রোগীকে নিয়ে যেতে হলে হয় জল পেরিয়ে যেতে হবে অথবা তিন কিলোমিটার অতিরিক্ত ঘুরতে হবে। এই এলাকায় বসবাস আগে তেমন বেশি ছিল না। সত্তরের দশকে বাসিন্দা বাড়ে। প্রধানত মৎস্যজীবী পরিবারের বাস এখানে। গ্রামের মধ্যে রয়েছে বলতে একটি অঙ্গনওয়াড়ি স্কুল। ফলে বিল পার না হলে জীবনের পথে হাঁটা বন্ধ হয়ে যাবে। করিমপুর ২ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি প্রকাশ চক্রবর্তী বলেন, “দীর্ঘ দিন ধরে এই কলোনির মানুষেরা সমস্যায় রয়েছেন। গ্রামে যাওয়ার রাস্তা নেই। বিদ্যুৎ নেই। পরিশ্রুত পানীয় জল নেই। পোলিও খাওয়ানোর জন্য বাচ্চাদের কোনও মতে বিল পার করে এই দিকে নিয়ে আসতে হয়।” তিনি বলেন, “এই সমস্যার কথা প্রশাসনকে বলেছি।” এই পরিস্থিতিতে তেহট্টের মহকুমাশাসক অচিন্ত্যকুমার মণ্ডল গ্রামে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “গ্রামে ঢোকার রাস্তা নেই। তার জন্য যা যা করা দরকার, সবটাই আমরা করছি। আশা করছি, তাড়াতাড়ি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।” গ্রামে ৭০ বছরের বৃদ্ধা নন্দরানি বিশ্বাস বলেন, “কত দিন মা দুর্গার মুখ দেখিনি।” কারণ এই বয়সে তিনি আর ওই বিল পেরিয়ে যেতে পারেন না। বিল পেরিয়ে মা দুর্গাও গ্রামে ঢোকেন না।
First Page Murshidabad Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.