লক্ষ্মণকে মামলা করার পরামর্শ দিলেন গাওস্কর
বিবার ট্রেন্টব্রিজে ৪০০-র ওপর রান উঠল।
বিশ্বচ্যাম্পিয়নের মুকুট ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য ইংল্যান্ড অনেক এগিয়ে গেল।
কিন্তু ক্রিকেট-লগ্নকে ছাপিয়ে সারা দিনে বার বার উঠে এল বিতর্ক-লগ্ন। ‘ভেসলিনগেট’ দিয়ে শুরু হল। শেষ হল রান আউট মহাবিতর্কে। মাইকেল ভন থেকে ইয়ান বেল এবং মহেন্দ্র সিংহ ধোনি।
দিনের চূড়ান্ত বিবৃতি এল আইসিসি মহাসচিবের কাছ থেকে। হারুন লর্গ্যাট বললেন, ক্রিকেটের স্পিরিট ধরে রাখার জন্য ধোনি এবং ভারতকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন তিনি। কিন্তু সেই বিবৃতিকে ‘স্ক্যান’ করলে ধরা পড়ত রবিবার ট্রেন্টব্রিজে সারা দিন যা চলল, তা যদি ক্রিকেটের ‘অ্যাডাল্ট’ ছবি হয় তা হলে গত বারের জেলি বিন্স বিতর্কটা শিশু চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানোর মতো।
বিতর্ক থেকে যিনি শতহস্ত দূরে থাকেন সেই ভিভিএস লক্ষ্মণকে নিয়ে রবিবারের আনন্দবাজারে উল্লেখও করা হয়েছিল ভেসলিন-বিতর্কের কথা। কিন্তু সেটা এত পরের দিকে হয় যে, ক্রিকেটমহলের গরিষ্ঠ অংশ কোনও আঁচই পাননি। বিতর্কের সূত্রপাত মাইকেল ভনের টুইট থেকে। যে টুইটে তিনি বলেন, লক্ষ্মণ আউট হওয়ার পর ওর যে খোঁচাটা হটস্পট ধরতে পারল না, তার জন্য কি ভেসলিনের ভূমিকা রয়েছে? লক্ষ্মণের ব্যাটে কি ভেসলিন লাগানো ছিল?
শোনা যায় টুইটের খবর দ্রুত পৌঁছে যায় ইংল্যান্ড ড্রেসিংরুমে। ইংল্যান্ড প্লেয়াররা বলতে শুরু করেন, শিগগিরই কেউ গিয়ে দেখে এসো লক্ষ্মণের ব্যাটে কিছু লাগানো আছে কি না? স্টুয়ার্ট ব্রড তখন বলেন, “আমি মাঠেই দেখে নিয়েছি। ব্যাটে কিছু লাগানো নেই।” এর পর শুরু হয়ে যায় প্রচণ্ড বিতর্ক। রাতে রাহুল দ্রাবিড়কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, “ব্যাটে যে ভেসলিন লাগানো যায় এই জিনিসটাই আমি প্রথম শুনলাম। ইংল্যান্ড প্লেয়াররা যদি সত্যিই ভিভিএস সম্পর্কে এ রকম কথা বলে থাকে তা হলে সেটা চরম নৈরাশ্যজনক। কিন্তু ওরা সত্যিই বলেছে কি না আমি এখনও জানি না।”
এ দিকে কমেন্ট্রি বক্সে ধারাভাষ্যকারদের মধ্যে তীব্র বাকযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। ম্যাচের দ্বিতীয় দিন নাসের হুসেন বনাম রবি শাস্ত্রী নিয়ে উত্তেজনা ছিল। রবিবার সকালে তা চরমে পৌঁছে যায়। সুনীল গাওস্কর বলেন, “আমি ভিভিএস লক্ষ্মণ হলে আমার আইনজীবী এখনই ভনের সঙ্গে কথা বলত।” একটু পরে সৌরভ বললেন, “একদম ঠিক বলছে সানিভাই। লক্ষ্মণের মামলাই করা উচিত।” রবি শাস্ত্রী তার আগে উগ্র সুরে বলেন, “ভন কী করে জানল যে ভেসলিন লাগালে হটস্পট এড়ানো যায়? ও নিশ্চয়ই নিজে লাগাত।” শো সঞ্চালনা করছিলেন হর্ষ ভোগলে। তিনি আনন্দবাজারকে পরে বললেন, “আরে, পনেরো মিনিট ধরে আমি শুধু নির্বাক শ্রোতা হয়ে বসেছিলাম। রবি আর সানিকে একসঙ্গে এত উত্তেজিত হতে আমি খুব কমই দেখেছি।” গাওস্কর যে লক্ষ্মণকে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছেন, এই খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে প্যাভিলিয়ন থেকে মিডিয়া-বক্স, সর্বত্র। ভারত থেকে বন্যার মতো ই-মেল আসতে শুরু হয় টেলিভিশন প্রোডিউসারদের কাছে।
মাইকেল ভন এ সময় বিমর্ষ মুখে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। ততক্ষণে ভারত সমর্থকরা তাঁকে প্রচুর গালাগাল দিয়ে টুইট করতে শুরু করেছেন। সেই টুইটগুলোকে ভন রি-টুইট করে দিতে থাকেন তাঁর হাজার হাজার সমর্থকের কাছে। এর পর ভন লেখেন, ‘ভারত সমর্থকরা সত্যি কথাটা শুনতে চায় না। আমি বলেছি, ইংল্যান্ড ২-১ সিরিজ জিতবে। এটা কি আমার অপরাধ?’ কিছু পরে অবশ্য তিনি বোঝেন, পরিস্থিতি আয়ত্ত্বের বাইরে চলে যাচ্ছে। ফের তিনি টুইট করেন, ‘আমি ইয়ার্কি করে একটা কথা বলেছি। কিছু লোকের (গাওস্কর?) দেখছি ঠাট্টা বোঝার মতোও মানসিকতা নেই।’
সৌরভ তখন বলতে থাকেন, “বাবা, এমনই রসিকতা করলে যে চব্বিশ ঘণ্টা বাদে রসিকতাটার কথা বলছ!” আর গাওস্কর বলেন, “ভন যদি ইয়ার্কি মেরে থাকে তা হলে আমারটাও ইয়ার্কি ধরে নিক। ইয়ার্কি করার অধিকার কি শুধু ওর একারই আছে নাকি?” পরিস্থিতি এমন উত্তপ্ত হয়ে যায় যে, ভনকে ইংরেজ সাংবাদিকরা কেউ কেউ গিয়ে বলেন, এই বিতর্কে তুমি আর জড়িও না। এ বার বিতর্কে ইস্তফা দাও।
ইংল্যান্ড ক্রিকেটমহলে কেউ কেউ বলছিলেন, “ভন ফালতু এর মধ্যে ফেঁসে গেল নিজের নির্বুদ্ধিতায়। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে, ব্যাটে ভেসলিন যে মাখানো হচ্ছে হটস্পটকে এড়ানোর জন্য, এই অভিযোগ গত বছর থেকে এখানে চলছে। পাকিস্তান সিরিজ থেকে এটার শুরু। তখন মনে করা হচ্ছিল, পাকিস্তান ক্রিকেটারেরা হয় ব্যাটের কিনারায় তরল পদার্থ মাখাচ্ছে, নয়তো স্টিকার মারছে। সাইডে স্টিকার মারা থাকলে হটস্পটে সূক্ষ্ম খোঁচা ধরা পড়বে না।”
ভেসলিন নিয়ে বিতর্ক অবশ্য দিনের শেষে চাপা পড়ে গেল বেল-বিতর্কের স্তুপে। রবি শাস্ত্রীকে অবশ্য ম্যাচের শেষে দেখে মনে হল, এখনও রণেভঙ্গ দেননি। বলছিলেন, “ভেসলিন কি শুধু আমাদের ছেলেরাই লাগাবে? আর ভিভিএস লক্ষ্মণের মতো এক জন ক্রিকেটারকে ওরা টার্গেট করছে?” শাস্ত্রী যোগ করছেন, “আসল সমস্যাটা হল ঈর্ষা। আমরা যে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন, আইপিএলের মতো এত বড় একটা টুর্নামেন্ট সফল ভাবে করি, বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর টিমএগুলো ইংরেজদের সহ্য হচ্ছে না। ঈর্ষাকাতর সব লোকজন এখানে।”
ধোনি ক্রিকেটীয় স্পিরিটের ডাকে সাড়া দেওয়ায় মাঠের বাইরের বিতর্ক হয়তো কমবে। কিন্তু সিরিজ ঘিরে যা তীব্রতা তাতে সেই কমাটা সাময়িকই হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি হবে না।
Previous Story Khela Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.