|
|
|
|
বন-বিধিতে বিপাকে বাসিন্দারা |
নিরাপত্তার জন্য ছ’টা থেকে ছ’টা বন্ধ থাকে চেকপোস্ট |
নারায়ণ দে • আলিপুরদুয়ার |
সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে বন দফতরের চেকপোস্ট পার হয়ে বনবস্তিতে ঢুকতে না-পারলে রাতভর রাস্তায় রাত কাটাতে হচ্ছে। ঘটনাটি ডুয়ার্সের বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জয়ন্তী, সান্তালাবাড়ি, বক্সা-সহ এলাকার বিভিন্ন বনবস্তির বাসিন্দাদের। বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত ১৫ জুন জঙ্গলে সাধারণের যাতায়াত বন্ধ হওয়ার নির্দেশ জারির পরেই বক্সায় এই নিয়ম চালু হয়েছে। ফলে বনবস্তি থেকে বার হয়ে কাজের প্রয়োজনে আলিপুরদুয়ার কিংবা কালচিনিতে যাওয়া বাসিন্দাদের ফিরতে সন্ধ্যে ৬টা পেরিয়ে গেলে রাত কাটাতে হচ্ছে রাজাভাতখাওয়া চেকপোস্ট এলাকায়। বাসিন্দাদের এই হেনস্থা থেকে রেহাই দিতে রাজ্যের বনমন্ত্রী হিতেন বর্মনের দ্বারস্থ হয়েছেন জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের আরএসপি সদস্য রামকুমার লামা।
আরএসপির জেলা পরিষদ সদস্য বলেন, “সন্ধ্যা ৬টা বাজলেই বনকর্মীদের বাধায় রাজাভাতখাওয়া চেকপোস্ট দিয়ে জয়ন্তী বা বক্সা পাহাড়ের বেশ কয়েকটি বনবস্তির বাসিন্দারা বাড়ি ফিরতে পারছেন না। অনেককে রাজাভাওখাওয়ায় রাত কাটিয়ে পরের দিন সকালে গ্রামে ফিরতে হয়েছে। একেই এখানে সারাদিনে হাতেগোনা কয়েকটি গাড়ি চলাচল করে। তার উপরে বন দফতরের এই বিধিনিষেধে চরম বিপাকে পড়েছেন বনবস্তি বাসিন্দারা। সব বনমন্ত্রীকে জানিয়েছি।” বনমন্ত্রী বলেন, “রামকুমারবাবুকে বিষয়টি লিখিত ভাবে জানাতে বলেছি। শুনেছি আলিপুরদুয়ারের থেকে জয়ন্তীতে দিনে মাত্র দু’বার সরকারি বাস চলাচল করে। সেই জন্য গাড়ির অভাবে জয়ন্তী ফিরতে দেরী হয় অনেকের। এলাকায় যাতে সরকারি বাস আরও বেশি করে চালানো যায় সে বিষয়টি নিয়ে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থার চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করব। কিছুদিনের মধ্যে জয়ন্তীর বাসিন্দাদের সঙ্গে সমস্যা নিয়ে আলোচনা করব।” জয়ন্তী এলাকার সিপিএম পঞ্চায়েত কমল বন্দোপাধ্যায় জানান, বিধানসভা নির্বাচনের সময় রাত ১২টার সময় রাজাভাতখাওয়া চেকপোস্ট হয়ে তিনি জয়ন্তী ফিরতে চাইলে বনকর্মীদের আপত্তিতে ফিরতে পারেননি। জয়ন্তী গ্রাম উন্নয়ন কমিটির সম্পাদক শেখর ভট্টাচার্য বলেন, “একেই গত বছর থেকে এলাকায় বন দফতর পিকনিক পার্টি ঢোকা নিষিদ্ধ করেছে। এবছর থেকে গ্রাম থেকে ঢোকা বার হওয়ার জন্য সময় বেঁধে দেওয়ায় নিজেদের বন্দির মতো মনে হচ্ছে। আলিপুরদুয়ার বা কালচিনিতে জরুরি কাজ সেরে রাজভাওখায়া চেকপোস্টে সন্ধ্যা ছয়টার পরে গেলে গ্রামবাসীরা বাড়ি যাওয়ার জন্য বন দফতরের হাতে চরম নাজেহাল হতে হচ্ছে। বিষয়টি বন দফতরের কর্তা থেকে শুরু করে বনমন্ত্রী, উত্তরঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবকে জানিয়েছি। তবে সুরাহা না হওয়ায় আন্দোলনে নামার চিন্তাভাবনা করছি।” বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের উপক্ষেত্র অধিকর্তা (পশ্চিম) রাজেন্দ জাখর জানান, বর্ষার এই মরসুমে প্রতি বছর পর্যটকদের জঙ্গলে বিধিনিষেধ থাকে। এই সময় জঙ্গলে বন্যপ্রাণিদের গতিবিধি অনেক বেড়ে যায়। রাজভাওখাওয়া হয়ে জয়ন্তী বা বক্সা পাহাড়ের গ্রামগুলিতে যেতে হলে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। তিনি বলেন, “রাজাভাতখাওয়া চেকপোস্ট সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। তারপর জঙ্গলের ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করা কারও পক্ষে নিরাপদ নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সন্ধ্যা ৬টার পরে বস্তিবাসীদের ঢুকতে হয়। তবে বেশি রাত হলে নিরাপত্তার খাতিরে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে ঢুকতে বারণ করা হচ্ছে।” |
|
|
|
|
|