তৃণমূল নেতার আপত্তি, ঘাট ইজারা স্থগিত
বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতি যাতে নিজস্ব আয় বাড়াতে পারে, তার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই জোর দিচ্ছে সরকার। কিন্তু শনিবার পুড়শুড়ার ব্লক তৃণমূল সভাপতি জয়দেব জানার আপত্তিতে স্থগিত হয়ে গেল বড়দিগরুই ঘাট-ইজারার ‘ডাক’। প্রক্রিয়ায় বাধা দানেরও অভিযোগ উঠেছে ওই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। জয়দেববাবু অবশ্য বাধা দানের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
পুড়শুড়া পঞ্চায়েত সমিতি এলাকায় মোট ফেরিঘাটের সংখ্যা ৮। এর মধ্যে বড়দিগরুই ঘাট দিয়েই সবচেয়ে বেশি যাত্রী পারাপার করেন। সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ঘাট থেকে দৈনিক প্রায় ৪-৫ হাজার টাকা আয় হয়। শনিবার দুপুর ১২টা নাগাদ ঘাটের ‘ডাক’ হওয়ার কথা ছিল। ৮টি পঞ্চায়েত এলাকায় এ নিয়ে প্রচারও হয়। ব্লক অফিসের ব্যবস্থাপনায় ওই ডাকে অংশ নিতে সকাল ১১টাতেই প্রায় ৬০ জন চলে আসেন বলে সমিতি জানিয়েছে। কিন্তু ‘ডাক’ শুরু হওয়ার আগেই জয়দেববাবু ব্লক অফিসে গিয়ে বিডিও ফৈয়াজ আহমেদ, সভাপতি শিখা সাঁতরা-সহ আধিকারিকদের জানান, দু’বছর আগে যিনি ‘ডাক’-এর মাধ্যমে ঘাট ইজারা নিয়েছিলেন, তিনি পুরো টাকা সমিতিকে শোধ করেননি। সমিতি তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এ বারের ‘ডাক’-এর নিম্নসীমা হিসাবে ৫ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা ধার্য করা হয়। এই পরিস্থিতিতে জয়দেববাবু পুড়শুড়ার তৃণমূল বিধায়ক পারভেজ রহমানের সঙ্গে আলোচনা করে ডাকের নিম্নসীমা নির্ধারণের দাবি জানান। এর পরেই তিনি বিডিও-র পরামর্শে ‘ডাক’ বন্ধের লিখিত আবেদন করেন বলে সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে।
পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সিপিএমের শিখা সাঁতরার অভিযোগ, “ওই তৃণমূল নেতার বাধায় ফেরিঘাটের ডাক বন্ধ রাখতে হল। তিনি নিজেকে বিধায়কের প্রতিনিধি হিসাবে দাবি করেছিলেন।” অভিযোগ, ডাকের জন্য অংশগ্রহণকারীদের ৫ হাজার টাকা করে জমা দিতে দেননি জয়দেববাবু। এ নিয়ে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে তাঁর বাগবিতণ্ডা হয়। বিশৃঙ্খলারও সৃষ্টি হয়।
সমিতির পঞ্চায়েত উন্নয়ন আধিকারিক (পিডিও) মোহনলাল বর বলেন, “সরকারি নিয়ম-কানুন মেনেই ডাকের ব্যবস্থাপনা হয়েছিল। কিন্তু বাধা পড়ল। একটি আবেদনের ভিত্তিতে আপাতত ডাক স্থগিত রাখা হয়েছে।” আজ, সোমবার অর্থ সংক্রান্ত বৈঠক ডেকে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে বলে তিনি জানান।
প্রতি দু’বছর অন্তর ফেরিঘাটের ইজারা দেওয়া হয়। ২০০৯ সালের ‘ডাক’ ৫ লক্ষ ১৫ হাজার টাকায় উঠেছিল। অর্থাৎ, নিয়মমতো ইজারাদারকে প্রতি বছর পঞ্চায়েত সমিতিকে ওই পরিমাণ টাকা দেওয়ার কথা। জয়দেববাবুর অভিযোগ, “দু’বছর আগে যিনি ইজারা নিয়েছিলেন, তিনি এত দিনে মাত্র ৫ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। এমন আগেও হয়েছে। এটা চলতে পারে না। সিপিএম পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতি এত দিন আয় বাড়ানোর নামে দলের লোকেদেরই ঘাট পাইয়ে দিচ্ছিল। ওই ইজারাদাররা যে ডাকে ঘাট নিচ্ছিলেন, তার অর্ধেক টাকাও সরকারের ঘরে ঢুকছিল না। সেটারই বিরোধিতা করেছি আমি।” অংশগ্রহণকারীদের বাধা দেওয়া বা বিশৃঙ্খলার অভিযোগ তিনি উড়িয়ে দিয়েছেন।
সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’বছর অন্তর যখন ঘাটের ‘ডাক’ হয়, তখন আগের বারের সর্বোচ্চ ‘ডাক’ই নিম্নসীমা হিসাবে ধরা হয়। এটাই নিয়ম। বিডিও ফৈয়াজ আহমেদ বলেন, “সরকারি নিয়ম-নীতি মেনেই ৫ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা থেকে ডাক শুরু হওয়ার কথা ছিল। তাতে কেউ অংশগ্রহণ না করলে তবেই পঞ্চায়েত সমিতি বৈঠক ডেকে পুনর্বিবেচনা করবে। কেউ ডাকের টাকা পরিশোধ না করলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।” আজ, সোমবার বিধায়কের সঙ্গে বসে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করা হবে বলেও তিনি জানান।
পুড়শুড়ার তৃণমূল বিধায়ক পারভেজ রহমান বলেন, “জয়দেব জানা আমার প্রতিনিধি ছিলেন না। তিনি দলের তরফেও বাধা দেননি। তবে তাঁর আপত্তি উড়িয়ে দেওয়ার নয়। অহেতুক ডাকের জন্য বেশি টাকা ধার্য করা হয়। বহু ইজারাদারই সমিতিকে ঠিকমতো টাকা পরিশোধ করেন না। তাঁদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা নিয়ে ন্যায্য টাকা ধার্য করে ডাকের ব্যবস্থা হোক।”
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে ঘাটটি ইজারা নিয়েছিলেন মমতা মালিক। ১৯৯৮ সাল থেকে তিনি দু’দফায় সিপিএমের শ্যামপুর পঞ্চায়েতের সদস্য ছিলেন। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে দলের টিকিট না পেয়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন। ডাকের সমস্ত টাকা পরিশোধ না করার বিষয়ে তাঁর বক্তব্য, “ওই ঘাটটি পুড়শুড়া-খানাকুলের সংযোগস্থলে। রাজনৈতিক অশান্তির কারণে গত দু’বছর ভাল ব্যবসা করতে পারেনি। সে কারণেই টাকা দিতে পারিনি।”
First Page South Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.