|
|
|
|
সম্পাদকীয় ২... |
অপ্রিয় সত্য |
শিক্ষার উৎকর্ষ সাধনের উপায় কী? ‘পরিবর্তিত’ পশ্চিমবঙ্গে প্রশ্নটি ইতস্তত শোনা যাইতেছে। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মাণের প্রস্তুতি দৃশ্যত অগ্রগামী। উচ্চশিক্ষা সংস্কারের উপায় খুঁজিতে বিশেষ কমিটি গঠিত। মাধ্যমিক তথা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রেও নানা পরিবর্তনের পরিকল্পনা কিংবা প্রস্তাব হাওয়ায় ভাসিতেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অবশ্য এখনও মোটের উপর অনালোচিত, হয়তো বা বিস্মৃত। তবু, শিক্ষা লইয়া যেটুকু নড়াচড়া এবং নাড়াচাড়া হইতেছে, পশ্চিমবঙ্গ নামক অচলায়তনে তাহা কম কথা নহে। এই রাজ্যের মেধাসম্পদ ঐতিহাসিক ভাবে তাহার অন্যতম প্রধান সম্ভবত প্রধানতম সামর্থ্য, অথচ গত কয়েক দশকে সেই সম্পদেরই অবর্ণনীয় অবক্ষয় ঘটিয়াছে। সুতরাং ঘুরিয়া দাঁড়াইতে চাহিলে তাহার প্রথম কর্তব্য শিক্ষার উৎকর্ষ বিধান। সর্ব স্তরের শিক্ষা। তবে, দ্রুত পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতির হাল ফিরাইতে চাহিলে উচ্চশিক্ষার দ্রুত সংস্কার অত্যন্ত জরুরি। সেই হিসাবে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়কে যে গুরুত্ব দেওয়া হইতেছে, তাহা জরুরি ছিল। কিন্তু একটি অপ্রিয় সত্য প্রথমেই স্মরণীয়।
সমস্ত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়কে একযোগে যথেষ্ট উন্নত মানে পৌঁছাইয়া দেওয়া যাইবে, এমনটি ঘটিলে চমৎকার হইত, কিন্তু তাহা বাস্তবে কঠিন, কার্যত অসাধ্য। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তুতি পর্বেই একটি সত্য স্পষ্ট হইয়া উঠিয়াছে। বিশেষ আর্থিক বরাদ্দের বন্দোবস্ত ব্যতীত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যথেষ্ট উচ্চমানের শিক্ষক গবেষককে আকষর্ণ করা কঠিন হইবে। অর্থই তাঁহাদের নিকট একমাত্র আকর্ষণ নয়, ইহা যেমন সত্য, তেমনই ইহাও কম সত্য নহে যে, একটি ন্যূনতম আর্থিক উৎসাহ ছাড়া তাঁহাদের আনা কঠিন। যেহেতু আন্তর্জাতিক স্তরের শিক্ষকদের কথাই এখানে প্রাসঙ্গিক, সুতরাং এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক স্তরের বেতন ভাতা ইত্যাদির মাপকাঠিটি ভুলিয়া গেলে চলে না। সরকারি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত কাঠামোয় তাহার দাবি মান্য করা কঠিন। সুতরাং বিশেষ বন্দোবস্তের প্রয়োজন। এই কারণেই সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে একযোগে যথেষ্ট উন্নত করিবার প্রকল্প অ-বাস্তব। উচ্চশিক্ষায় ‘সাম্য’বাদ চলিবে না।
একই কথা মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার ক্ষেত্রেও প্রাসঙ্গিক। উচ্চশিক্ষার তুলনায় স্কুল স্তরে নিশ্চয়ই আরও বেশিসংখ্যক উৎকর্ষ কেন্দ্র গড়িয়া তোলা জরুরি, এবং সম্ভবপরও। কিন্তু তাহা সংখ্যার প্রশ্ন, মূল সত্যটি তাহাতে বদলায় না। সমস্ত স্কুলকে একযোগে সমমানে উন্নীত করা সম্ভব নহে। অভাব কেবল অর্থের নহে, অর্থ থাকিলেও যথেষ্ট সংখ্যায় উচ্চমানের শিক্ষক পাওয়া কঠিন। সুতরাং এ ক্ষেত্রেও কিছু আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈয়ারি করা দরকার। ব্রিটিশ আমলে জেলা স্কুলগুলিকে এই লক্ষ্যেই তৈয়ারি করা হইয়াছিল, অনেক ক্ষেত্রেই সেগুলি যথার্থ উৎকর্ষ কেন্দ্র হিসাবে স্বীকৃত এবং সমাদৃত হইয়াছিল। নীতিগত ভাবে সেই কাঠামোটি ফিরাইয়া আনার কথা ভাবিয়া দেখা চলে। সম্ভব হইলে বড় জেলাগুলিতে একাধিক আদর্শ স্কুল তৈয়ারি করা যায়, আর জেলার সংখ্যা বাড়িলে তো স্বভাবতই স্কুলের সংখ্যা বাড়ানো চলিবে। অনেক ক্ষেত্রেই জেলা স্কুলের জন্য বাড়িঘর বা অন্যান্য প্রাথমিক পরিকাঠামো নূতন করিয়া তৈয়ারি করিতে হইবে না, বেশ কিছু স্কুলে তাহা বিলক্ষণ উপস্থিত, এবং কিছু কিছু স্কুল শিক্ষণ-মানেও রীতিমত উন্নত। অর্থাৎ, শিক্ষার উন্নতি শূন্য হইতে শুরু করিবার প্রয়োজন নাই। প্রয়োজন উৎকর্ষকে লক্ষ্য হিসাবে নির্ধারণ করা। লক্ষ্য স্থির হইলে পথ চেনা সহজ হয়। |
|
|
|
|
|