|
|
|
|
সম্পাদক সমীপেষু...
|
প্রাচীরের প্রয়োজন আছে |
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানায় প্রাচীর বসানোয় নীতিগত ভাবে আপত্তি তুলেছেন। ওঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই বলি, সমস্যাও পরিবর্তনশীল। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ভুবনডাঙার মাঠে বসে ধ্যানমগ্ন চিত্তে এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বীজ কবিগুরুর চিত্তে রোপণ করেন। তার পর বিশ্বভারতীর পত্তন ও তার বিকাশবৈচিত্র এক ইতিহাস। কিন্তু তার পর দ্রুত পরিবর্তনশীল সমাজব্যবস্থা পৃথিবীর সর্বত্রই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিশেষত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর। স্বাধীনতা-উত্তর ভারতে জনবিস্ফোরণে অগ্রগতি শিথিল হয়েছে। শৃঙ্খলার অবনমনে অরাজকতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষত স্বাস্থ্যে ও শিক্ষায়। এ সব নানা কারণের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বভারতীর মুক্তাঙ্গন আর সুরক্ষিত নয়, সেটা বহু দিন আগেই হৃদয়ঙ্গম হয়েছে। নোবেল মেডেলের চুরি এর প্রত্যক্ষ প্রমাণ।
তাই সীমানায় প্রাচীর তোলা যথাযথ এবং যুক্তিসঙ্গত। তবে তাকে আরও নান্দনিক করে তোলা যায় যদি কলাভবনের ছাত্রছাত্রীরা তাকে বর্ণময় করে তোলেন। সেটা হবে কবিগুরুর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য। এটাও মানতে হবে, দ্রুত ধাবমান বিশ্বে বেঁচে থাকতে হলে শুধু কলা আর সঙ্গীতের ভাবনায় চলবে না। |
|
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি তাতে আনতেই হবে। বিশ্বভারতীতে তাই এই সব প্রগতিশীল বিষয়ের অন্তর্ভুক্তি কোনও মতেই আর ঐতিহ্যকে বিনাশ করে না। যাঁরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বিশ্বপরিচয়’ প্রবন্ধ পড়েছেন তাঁরা জানেন তিনি কতটা বিজ্ঞানমনস্ক ছিলেন।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার নিরিখে দুটি বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম বলব। নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন ও খড়্গপুর আই আই টি। আমার ছেলের ছাত্রাবস্থায় এই প্রতিষ্ঠান দুটি দেখবার সুযোগ হয়েছিল। দুটি প্রতিষ্ঠানই প্রাচীরে ঘেরা। কিন্তু তাতে সেখানকার শিক্ষার মান কমেছে বলে জানি না। তিপ্পান্ন একর জুড়ে নরেন্দ্রপুর। মূল গেট দিয়ে আপনি প্রবেশ করলেন। আপনার মন-প্রাণ শান্তিতে ভরে গেল। খড়্গপুর আই আই টি তো আয়তনে তিন গুণ। নিরাপত্তার ফটক পেরিয়ে ঢুকুন। অবাক বিস্ময়ে এই প্রযুক্তির ধর্মশালার দিতে তাকিয়ে থাকতে হবে। না অনুপ্রবেশ নেই অবাঞ্ছিতের।
অমর্ত্য সেনের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে আবার বলি, প্রাচীর হোক সীমানা জুড়ে। নান্দনিক প্রাচীর মানুষকে আকর্ষণ করুক। শালবনের সৃষ্টি হোক। যেখানে অন্যমনস্ক শান্ত চিত্তে মানব স্মরণ করবেন কবির উক্তি ‘যখন রব না আমি মর্ত্তকায়ায়/তখন স্মরিতে যদি হয় মন/তবে তুমি এসো হেথা নিভৃত ছায়ায়/যেথা এই চৈত্রের শালবন।’
প্রণবকুমার চক্রবর্তী। নাকতলা
|
জনমুখী হোক |
নীহার মজুমদারের সচিত্র পত্র (৬-৭) প্রসঙ্গে জানাই, পূর্বতন বিদ্যুৎ পর্ষদের বণ্টন শাখায় জেলায় জেলায় আমার দীর্ঘ জীবন কেটেছে। ঠিক এই বর্ষার মরসুমে অকারণে বহু বার হেনস্থার শিকার হতে হতে বেঁচে গিয়েছি। কারণ সম্ভবত নীহারবাবুই জনসংযোগ দফতরের দায়িত্বশীল আধিকারিক হিসাবে বর্ষার অনেক আগে থেকেই সচেতনতামূলক আবেদন জানিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে পর্ষদের পক্ষে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিতেন। আমরা তার কাটিং নিয়ে অফিসের সদর দরজায় সেঁটে দিতাম। ফলে, জনরোষ সে ভাবে বণ্টন বিভাগের স্থানীয় অফিসে এসে পড়ত না।
এ ছাড়াও মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার সময় যখন আমন ধানের চাষের জল ভীষণ প্রয়োজন, সে সময় আগে থাকতেই বিভিন্ন কল-কারখানা, বিশেষ করে চাষের কাজের জন্য সন্ধেবেলায় যাতে শিল্প কারখানাগুলি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিদ্যুৎ ব্যবহার বন্ধ রাখে এবং তার বদলে রাতে বিদ্যুৎ ব্যবহারে (সুলভ হারে) গণ চেতনা গড়ায়, সময়ান্তরে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তা প্রকাশ করা হত। সুলভ হারে রাত দশটার পরে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ গ্রাহক (শিল্প ও কৃষিতে) সাধারণের মধ্যে সচেতনতা গড়ার সেই যে প্রচার-তত্ত্ব তা বিগত বছরগুলিতে আর কাজে লাগানো হচ্ছে না। প্রাক্তন বিদ্যুৎকর্মী হিসাবে বর্তমান জনসংযোগ দফতরকে আরও জনমুখী এবং সংবাদমাধ্যম-বান্ধব হতে অনুরোধ জানাচ্ছি।
এস কে দত্তচৌধুরী। প্রাক্তন এস ই, সিটি সেন্টার, এ জোন, দুর্গাপুর
|
কাবুলিওয়ালারা ‘অমিশ্র আর্য’? |
সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ আমার ভুল শুধরে দিয়ে জানিয়েছেন, আমাদের কাছে যাঁরা ‘কাবুলিওয়ালা’ তাঁরা আফগান নন (১৬-৫)। তবে তিনি বলেছেন, তাঁরা ‘ভারতীয় পাঠান’, সে বিষয়ে সংশয় রয়ে গেল। কারণ, সৈয়দ মুজতবা আলির দেশে বিদেশে সূত্রে জানা যায়, কলকাতার কাবুলিওয়ালারা সীমান্ত, খাইবার, বড়জোর চমন কান্দাহারের বাসিন্দা। সে ক্ষেত্রে, তাঁদের ভারতীয় পাঠান না-বলে পাকিস্তানি পাঠান বলা সমীচীন।
মুস্তাফা সিরাজ আরও বলেছেন, তিনি (বিমলেন্দু ঘোষ) জনৈক হেনরি ভ্যান্সিটার্টের রচনা থেকে কয়েকটি লাইন উদ্ধৃতি দিয়েছেন, আফগানরা নাকি ইহুদিদের হারিয়ে যাওয়া একটি গোষ্ঠীর বংশধর। উদ্ধৃতিতে সে রকম কোনও কথা নেই। ভ্যান্সিটার্ট তখনকার আফগানদের পরম্পরাগত বিশ্বাসের কথা উল্লেখ করেছেন, নিজস্ব কোনও মতবাদ ব্যক্ত করেননি। আর ঋগ্বেদে (৭-৮৩-১) ‘পক্ত’ জাতির কথা নেই। ঋক্টিতে ‘পৃথুপর্শবো যযুঃ’ (বিশাল পরশুবিশিষ্ট যোদ্ধাগণ’ রমেশচন্দ্র দত্তের অনুবাদ) বলে এক যোদ্ধৃবর্গের উল্লেখ আছে। সে যাক, আমার পত্রাঘাতের পরোক্ষ উদ্দেশ্য ছিল, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কাবুলিওয়ালাদের যে ‘অমিশ্র আর্য’ বলেছেন, সেই তথ্যটি যাচাই করে নেওয়া। মনে হয়, আমার অজ্ঞতা ‘কাবুলিওয়ালা তথা আফগানদের জাতি পরিচয়’ কথাটির প্রতি মনোযোগ নিবিষ্ট হয়ে যাওয়ায় ‘অমিশ্র আর্য’ প্রসঙ্গটি সিরাজ মহাশয়ের নজর এড়িয়ে গিয়েছে।
বিমলেন্দু ঘোষ। কলকাতা-৬০ |
|
|
|
|
|