|
|
|
|
দুর্ঘটনায় বাতিল উত্তরের সব ট্রেন, হয়রানি যাত্রীদের |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
কেউ যাচ্ছেন অসুস্থ আত্মীয়কে দেখতে। কেউ বা পরীক্ষা দিতে। কিন্তু শিয়ালদহ, হাওড়া আর কলকাতা স্টেশনে এসেও তাঁরা জানতে পারেননি যে গুয়াহাটি, মালদহ বা নিউজলপাইগুড়ির ট্রেন ছাড়বে কি না। ট্রেনের সময় এগিয়ে আসার পরেও স্টেশনে কোনও ঘোষণা নেই। তাই যাত্রীরা ছুটলেন অনুসন্ধান কাইন্টারে। আর তখনই জানলেন মালদহে ট্রেন দুর্ঘটনার কথা। আর জানলেন এদিন রাতে আর তাঁদের ট্রেন ছাড়বে না। উত্তরবঙ্গ মুখী সব ট্রেন বাতিল হয়ে গিয়েছে। হাওড়া স্টেশন থেকে রওনা হয়ে গিয়েছে রিলিফ ট্রেন। এদিন রাতে ওই একটি ট্রেনই কেবল গিয়েছে উত্তরবঙ্গ অভিমুখে।
রবিবারের রাতে একই চিত্র নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনের। রাত ৮টা নাগাদ নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে ওই দুর্ঘটনার খবর পৌঁছতেই নড়েচড়ে বসেন রেলের কর্তারা। তড়িঘড়ি একটি রিলিফ ট্রেন তৈরি করে মালদহে উদ্দেশ্যে রওনা হয়। কিন্তু তাঁরা করবেন তা বুঝতে পারছিলেন না অপেক্ষমান যাত্রীরা। সমস্ত কর্মসূচি বাতিল করে সেখানে পৌঁছন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি এনজেপি স্টেশনে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে আশ্বস্ত করা ছাড়াও রেলের আধিকারিকদের সঙ্গেও কথা বলেন। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “দুর্ঘটনা সম্পর্কে রেলের কর্তারা খোঁজ নিচ্ছেন। রাজ্যের পক্ষ থেকে সমস্ত ধরনের সাহায্য দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই সমস্ত বিষয়টির তদারকি করছেন। ট্রেন বাতিল হলেও যাত্রীদের যাতে সমস্যায় পড়তে না-হয় সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”
শিয়ালদহ এবং কলকাতা স্টেশন থেকে উত্তরবঙ্গ অভিমুখী সব ট্রেন বাতিল করা হলেও রাতে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে শিয়ালদহগামী দার্জিলিং মেল এবং পদাতিক এক্সপ্রেস ট্রেন দুটিকে রওনা করিয়ে দেওয়া হয়। ওই ট্রেন দুটি কাটিহার হয়ে শিয়ালদহ পৌঁছবে বলে রেল-কর্তারা জানান। তবে কলকাতা থেকে ছাড়া ট্রেনগুলিকে কেন একই ভাবে উত্তরবঙ্গে পাঠানো হল না সেই প্রশ্ন ওঠে শিয়ালদহে। তবে সেই প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য কোনও রেল-কর্তাকেই পাওয়া যায়নি। এমনকী রেলের যে টোল ফ্রি নম্বর (১৩৯) যাত্রীদের দেওয়া থাকে সেখানেও ট্রেন সময়মতো ছাড়বে বলেই বার বার ঘোষণা করা হয় বলে যাত্রীদের অভিযোগ।
রবিবার সন্ধে থেকেই উত্তরবঙ্গমুখী একের পর এক ট্রেনের যাত্রীর ভিড় বাড়তে থাকে শিয়ালদহ, হাওড়া ও কলকাতা স্টেশনে। থিকথিকে ভিড়ঠাসা স্টেশনচত্বরে চরম ভোগান্তির শিকার হলেন এই যাত্রীরা। কলকাতা স্টেশন থেকে গুয়াহাটি গরীব রথ এক্সপ্রেসের যাত্রী সুবল চক্রবর্তী বলছিলেন, “কেন দেরি হচ্ছে, কিছুই জানতে পারছিলাম না। অনুসন্ধান কেন্দ্র থেকেও কিছু বলতে পারছিল না। অনেক পরে অনুসন্ধান কেন্দ্র থেকেই জানতে পারলাম মালদহের ট্রেন দুর্ঘটনার জন্য ট্রেন বাতিল হয়েছে। কিন্তু কবে যেতে পারব, টিকিটের টাকা ফেরত পাব কি না, কিছুই জানা যাচ্ছে না।”
রাতে পূর্ব রেল সূত্রে বলা হয়, মালদহের দুর্ঘটনার জেরে এদিন বাতিল করা হয় উত্তরবঙ্গমুখী সব ট্রেন। ট্রেনগুলি হল হাটেবাজারে এক্সপ্রেস, গুয়াহাটি গরীবরথ, দার্জিলিং মেল, কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস, পদাতিক এক্সপ্রেস, গৌড় এক্সপ্রেস এবং হাওড়া-মালদহ টাউন প্যাসেঞ্জার।
দুর্ঘটনার জেরে নিউ জলপাইগুড়ি এবং লাগোয়া স্টেশনগুলি বহু ট্রেন আটকে পড়ে। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন সূত্রে জানা গিয়েছে, আলুয়াবাড়িতে দার্জিলিং মেল, এনজেপিতে পদাতিক ও কাঞ্চনকন্যা, আজিমগঞ্জে উত্তরবঙ্গ এবং ওল্ড মালদহে বালুরঘাট-গৌড় লিঙ্ক এক্সপ্রেস আটকে পড়েছে। তিস্তা তোর্সা এক্সপ্রেস সামসিতে এবং সরাইঘাট এক্সপ্রেস কিসানগঞ্জে আটকে পড়েছে। রেলের তরফ এদিন পদাতিক ও কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেসের যাত্রীদের আশ্বস্ত করা হয়, ট্রেন বাতিল করা হলে যাত্রীদের টিকিটের মূল্য ফেরত দেওয়া হবে। যাত্রীদের যাতে কোনও সমস্যা না-হয় সেই বিষয়ে নজর দেওয়ার জন্য রেলের আধিকারিকদের নির্দেশ দেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। তাতেও যাত্রীদের দুর্ভোগের খুব একটা সুরাহা হয়নি। |
সাহায্যের জন্য |
হাওড়ার হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৬৪১১৪১৬, ০৩৩-২৬৪১৩৬৬০
মালদহের হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৫১২-২৮৩৪৪৪, ০৩৫১২-২৬৬০০০
নিউ জলপাইগুড়ির হেল্পলাইন নম্বর: ০৫০৩-২৬৯২২১৩, ০৫০৩-২৬৯২২১৪, ০৫০৩-২৬৯২২১৫ |
|
|
|
|
|
|