উত্তরসূরি অনিশ্চিত
ইয়েদুরাপ্পা ইস্তফা দিয়েও সমস্যায় রাখলেন দলকে
রেস কোর্স রেসিডেন্স থেকে ৭০ জন সমর্থক-বিধায়ক নিয়ে দু’কিলোমিটার পদযাত্রা করে রাজভবনে।
এমন নাটকীয় ভাবে কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী পদে আজ ইয়েদুরাপ্পা ইস্তফা দিলেন ঠিকই। তবে তাতেও বিজেপি’র অভ্যন্তরীণ সঙ্কট কাটল বলা যাচ্ছে না। কারণ, উত্তরসূরি হিসেবে নিজের অনুগত ডি ভি সদানন্দ গৌড়ার নাম আজ প্রকাশ্যে প্রস্তাব করে ইয়েদুরাপ্পা বুঝিয়ে দিয়েছেন, রাজ্যের রিমোট তিনি হাতেই রাখতে চান। অন্য দিকে বেঙ্গালুরুতে তাঁর প্রবল বিরোধী অনন্তকুমার-শিবিরও গভীর রাত পর্যন্ত সক্রিয়, যাতে ইয়েদুরাপ্পার ঘনিষ্ঠ কেউ মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসতে না-পারেন।
কর্নাটকের রাজ্যপাল হংসরাজ ভরদ্বাজের হাতে পদত্যাগপত্র তুলে দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পা। পি টি আই
এবং এই সঙ্কটেরই সমাধান-সূত্র খুঁজতে আজ গভীর রাত পর্যন্ত এক দিকে বেঙ্গালুরু, অন্য দিকে নয়াদিল্লির অশোক রোডের বিজেপি সদরে চলছে দফায় দফায় বৈঠক। কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি। ৩ অগস্ট ফের বৈঠক করে উত্তরসূরি নির্বাচন করা হবে বলে বিজেপির কর্নাটক বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত নেতা ধর্মেন্দ্র প্রধান জানিয়েছেন। লোকসভার অধিবেশন শুরু হচ্ছে কাল। দুর্নীতি থেকে মূল্যবৃদ্ধি বিজেপি নেতৃত্বের এখন এমন বিভিন্ন বিষয়ে সরকারকে কোণঠাসা করার কৌশল তৈরিতে ব্যস্ত থাকার কথা। অথচ কর্নাটক-কাঁটাই তাঁদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে! পাশাপাশি অবৈধ খনন সংক্রান্ত অভিযোগের পরিণতিতে ইয়েদুরাপ্পাকে গদিচ্যুত হতে হলেও তার প্রেক্ষাপটে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে বিজেপি’র ঘরোয়া টানাপোড়েন। সরকারে কর্তৃত্ব কায়েম রাখতে ইয়েদুরাপ্পা প্রাণপণ চেষ্টা করছেন নিজের ঘনিষ্ঠ মহলের কাউকে পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী করতে। আর সে জন্যই আজ বেঙ্গালুরুতে উপস্থিত বিজেপি নেতৃত্বকে (অরুণ জেটলি ও রাজনাথ সিংহ) তিনি দুপুরে জানিয়ে দেন, উত্তরসূরির পদে সদানন্দকেই তাঁর পছন্দ। একই সঙ্গে সুরেশ কুমার এবং ভিএস আচারিয়ার নামও তিনি বিবেচনায় রাখতে নেতৃত্বকে অনুরোধ করেছেন। এবং এ-ও স্পষ্ট জানিয়ে দিতে কসুর করেননি যে, অনন্তকুমার বা তাঁর গোষ্ঠীর কাউকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি কিছুতেই মেনে নেবেন না।
মুখ্যমন্ত্রী পদের দৌড়ে এগিয়ে ( বাঁ দিক থেকে) ভি এস আচারিয়া, সুরেশ কুমার ও সদানন্দ গৌড়া।
ইয়েদুরাপ্পা এর আগে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়েছিলেন, ৩১ তারিখ তিনি পদত্যাগ করবেন। কিন্তু তাঁর দাবি ছিল, ইস্তফার আগে দল তাঁর পছন্দমতো নতুন মুখ্যমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করে দিক। বিজেপি নেতৃত্বের পক্ষে সে দাবি সহজে মানা সম্ভব হয়নি। কেন?
দলীয় সূত্রের বক্তব্য, নেতৃত্বকে একই সঙ্গে অনেক দিক সামলাতে হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট বল্লারিতে খনি খনন বন্ধ রাখতে বলেছে। এ অবস্থায় যাকে-তাকে কুর্সিতে বসালে হলে সমস্যা বাড়তে পারে। আবার কর্নাটকে ‘রিমোট কন্ট্রোলের’ সুইচ ইয়েদুরাপ্পার হাতে থাকাটাও বর্তমান পরিস্থিতিতে কতটা স্বস্তিজনক, সেটাও ভাবতে হেচ্ছে। অন্য দিকে অনন্তকুমার-ধর্মেন্দ্র প্রধানের মতো ইয়েদুরাপ্পা-বিরোধীরা বেঙ্গালুরুতে ঘাঁটি গেড়ে বসে প্রবল চেষ্টা চালাচ্ছেন, যাতে সদানন্দ গৌড়া বা ইয়েদুরাপ্পা-ঘনিষ্ঠ অন্য কেউ মুখ্যমন্ত্রী হতে না-পারেন। উল্লেখ্য, অনন্তকুমার হলেন লালকৃষ্ণ আডবাণীর ঘনিষ্ঠ। বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের সমর্থনও তাঁর পিছনে।
তাই ইয়েদুরাপ্পার উদ্দেশ্যসাধনের পথে কাঁটাও কিছু রয়েছে। আজ সকালে রাজভবনে গিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পরে ইয়েদুরাপ্পা বলেন, “পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ডি ভি সদানন্দ গৌড়ার নামই প্রস্তাব করছি।” কিন্তু গৌড়াকে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এক কথায় মেনে নেবেন, এমন নিশ্চয়তা এখনও নেই। নেতৃত্বের আপত্তির প্রধান যুক্তি, গৌড়ার প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা বলতে গেলে শূন্য।
বস্তুত কর্নাটকের কুর্সিতে বিজেপি এমন কাউকে চাইছে, যাকে সামনে রেখে রাজ্যে পরবর্তী দু’বছরের মেয়াদ সুষ্ঠু ভাবে চালিয়ে নেওয়া যায়। আবার আজ পর্যন্ত যে রকম রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শন করেছেন ইয়েদুরাপ্পা, তাতে তাঁকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে কাউকে মুখ্যমন্ত্রী করলে রাজ্য বিজেপি-তে বড় বিদ্রোহের আশঙ্কা। যার জেরে দল, এবং শেষ পর্যন্ত সরকারও ভেঙে যাওয়া বিচিত্র নয়! এই জট কাটাতেই চলছে সমাধান খোঁজার মরিয়া চেষ্টা।
Previous Story Desh Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.