|
|
|
|
সংসদ অচল হোক, চান না আডবাণী |
জয়ন্ত ঘোষাল • নয়াদিল্লি |
এ বারও কি সংসদ অচল করে দেওয়ার কৌশল নেবে প্রধান বিরোধী দল? জেলবন্দি প্রাক্তন টেলিকম মন্ত্রী এ রাজার মন্তব্যকে কেন্দ্র করে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ইস্তফার দাবিতে সরব হয়ে বিজেপি কি সংসদের শুরু থেকেই অধিবেশন ভেস্তে দেওয়ার পথ নেবে?
বিজেপি গত বার যে ভাবে সংসদে হাঙ্গামা করে অধিবেশন ভেস্তে দিয়েছিল, দলের প্রবীণ নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী তাতে খুবই অসন্তুষ্ট। এ বারের অধিবেশন শুরু হওয়ার আগেই বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ীকে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, কোনও ভাবেই যেন দল এ বার সংসদ অচল করার পথ না নেয়। তিনি মনে করেন, এই কৌশলে লাভের থেকে লোকসানই বেশি হয় বিজেপির।
অধিবেশন শুরুর আগেই কৌশল নির্ণয়ের বিষয়ে দলের ‘অভিভাবক’ আডবাণীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন লোকসভার বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজ ও রাজ্যসভার বিরোধী নেতা অরুণ জেটলি। বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ীও এই আলোচনায় ছিলেন। প্রাথমিক ভাবে স্থির হয়েছে, প্রথমেই সংসদ অচল করার পথে হাঁটবে না বিজেপি। বরং সংসদে বিভিন্ন বিল নিয়ে সরকারের কড়া সমালোচনা করা হবে। বিজেপির মুখ্য সচেতক সুরেন্দ্র সিংহ অহলুয়ালিয়া বলেন, “আমরা আলোচনাই চাই। সরকার যদি বিতর্কের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় না রাখে এবং আলোচনা এড়িয়ে চলতে চায়, তখনই বিরোধী দল হিসেবে আমাদের ব্রহ্মাস্ত্র প্রয়োগ করতে হয়। না হলে আমরা সংসদ বয়কট করার পক্ষে নই।” শুধু সংসদ অচলই নয়, সাম্প্রতিক বেশ কিছু বিষয়ে বিজেপির উপরে অসন্তুষ্ট আডবাণী। কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পা আজ ইস্তফা দিলেও আডবাণী মনে করেন, অনেক আগেই তাঁকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করা উচিত ছিল। এখন ইস্তফা দিলেও কংগ্রেস বলবে, লোকায়ুক্ত রিপোর্টে দোষী সাব্যস্ত হয়েই তিনি ইস্তফা দিয়েছেন, এটা বিজেপির স্ফতঃস্ফূর্ত সিদ্ধান্ত নয়। সর্তীথ নেতাদের আডবাণী বোঝান, দলের এক একটা সিদ্ধান্ত আপাত ভাবে সামান্য মনে হলেও তার দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া থাকে। যেমন এনডিএ-জমানায় কন্দহরের ঘটনায় জঙ্গিদের ফেরত দিয়ে আসার সিদ্ধান্ত। আডবাণী তখন এর বিরোধিতা করেছিলেন। |
বাগ্বিতণ্ডা |
|
|
বিরোধীদের সিন্দুকে
অনেক কেলেঙ্কারি আছে
মনমোহন সিংহ |
দেখা যাক, কার তূণে
বেশি তির আছে
সুষমা স্বরাজ |
|
বিজেপির এই প্রবীণ নেতার বক্তব্য, এখনও মুম্বই বা যে কোনও সন্ত্রাসের ঘটনায় সরকারের সমালোচনা করলেই কংগ্রেস পাল্টা কন্দহরের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বিজেপিকে কোণঠাসা করে দেয়। আডবাণী নিজে সক্রিয় রাজনীতি থেকে ধীরে ধীরে সরে আসছেন। পরবর্তী সারির প্রায় সব নেতাই আডবাণীর থেকে দূরে সরে এসেছেন। আগামী লোকসভা নির্বাচনে নিজে প্রার্থী না-ও হতে পারেন, এমন ইঙ্গিত আডবাণী দিয়েছেন দলের কাছে। কিন্তু অটলবিহারী বাজপেয়ীর অনুপস্থিতিতে দল পরিচালনায় তিনি এখনও পিতামহ ভীষ্মের ভূমিকা পালন করতে চান।
বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের অনেকেই বুঝছেন, লাগাতার সংসদ অচল করে রাখলে জনমানসে বিজেপির একটি নেতিবাচক ছবি তৈরি হবে। কিন্তু বিজেপির অন্য কিছু নেতা মনে করেন, শুধু খাদ্য নিরাপত্তা বিল বা জমি অধিগ্রহণ বিল নিয়ে বিতর্কেই থামলে চলবে না। টু জি কেলেঙ্কারি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ইস্তফার দাবিতে সবর হয়ে আক্রমণাত্মক-ভূমিকা নেওয়াটাও জরুরি। তবে আডবাণীর যুক্তি, লোকসভা নির্বাচনের ঢের দেরি। দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনও অনেক দূর। দলের উচিত আগে নিজেদের ঘর গোছানো এবং সংগঠনকে সব রাজ্যের গ্রাম স্তর পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া। সোমবার গডকড়ী দিল্লির তালকাটোরা স্টেডিয়ামে ‘গ্রামে চলো’-র ডাক দিয়ে নতুন কর্মসূচি নিয়েছেন। আডবাণীর বক্তব্য, এই আন্দোলনের সঙ্গে ইতিবাচক ও সক্রিয় বিরোধী দলের ভূমিকাকেও যুক্ত করতে হবে। তাই সংসদ অচল করার কৌশল নেওয়া অনুচিত হবে।
কিন্তু বিজেপি পি আডবাণীর মতামত গ্রহণ করবে? এই টানাপোড়েনের মধ্যে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব এখন কোন পথে এগোয়, সেটাই দেখার। |
|
|
|
|
|