|
|
|
|
সংসদ সচল রাখাই চ্যালেঞ্জ সরকারের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
দুর্নীতি-মূল্যবৃদ্ধির মতো নানা বিষয়ে ইউপিএ-সরকারকে বিঁধতে ছুরিতে শান দিচ্ছে বিরোধীরা। আর তার মধ্যেই লোকপাল ও খাদ্য-সুরক্ষা বিল-সহ একগুচ্ছ পুরনো ও নতুন সংসদে পেশ করতে হবে সরকারকে, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষা ও আর্থিক সংস্কারকে এগিয়ে নিয়ে যেতে যেগুলি একান্তই প্রয়োজন। পাশ করিয়ে নিতে হবে আরও কিছু আইন। সব মিলিয়ে সংসদের বাদল অধিবেশন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে চলেছে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের কাছে।
কাল থেকে সংসদ যে কার্যত রাজনৈতিক রণক্ষেত্রের চেহারা নেবে, আজই তার পটভূমি তৈরি হয়ে গিয়েছে। বিজেপি যখন টু জি কেলেঙ্কারিতে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমের ইস্তফার দাবি তুলছে, তখন পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছেন মনমোহন। কর্নাটকে অবৈধ খননের মতো বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব যে বিজেপির কাছেও চাওয়া হবে, তা বুঝিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “দুর্নীতি নিয়ে আলোচনায় আমাদের ভয় নেই। বিরোধীদের সিন্দুকেও অনেক কেলেঙ্কারি রয়েছে। সব কিছু নিয়ে আলোচনা করতে আমরা তৈরি।” প্রত্যুত্তরে বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজ বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর তূণে কত তির আছে, উনি ছুঁড়ে দেখে নিন। আমাদের বিরুদ্ধে সরকারের কিছু বলার থাকলে সরকার আগেই অধিবেশন ডাকত। বাজেটের পর কখনও স্বল্পকালীন, কখনও বিশেষ অধিবেশনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কিছুই হয়নি। জুলাইয়ের বদলে অগস্টে বাদল অধিবেশন ডাকা হচ্ছে।” সুষমার হুমকি, “কাল থেকেই দেখবেন, কে কার উপরে আক্রমণ করে!”
অধিবেশন শুরুর আগের দিন দু’পক্ষই যে ভাবে ‘রণং দেহি’ বলে হুঙ্কার ছেড়েছে, তার পরে সংসদ চলবে কি না তা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সরকারের সামনে সমস্যা হল, সংসদ না চললে একগুচ্ছ জরুরি বিল পাশ করানো যাবে না। শীতকালীন অধিবেশনে অচলাবস্থার জন্য প্রায় সংসদের প্রায় কোনও কাজই হয়নি। পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের জন্য বাজেট অধিবেশনও কাটছাঁট করতে হয়। এ দিকে এই অধিবেশনে ৩৭টি বিল পাশ করাতে চাইছে সরকার। ৩২টি নতুন বিল পেশ করারও পরিকল্পনা রয়েছে। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষা ও আর্থিক সংস্কারকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এগুলি বিশেষ দরকার। বাজেটের পরে বাড়তি অর্থের জন্য ‘সাপ্লিমেন্টারি ডিম্যান্ড ফর গ্রান্ট’-ও অনুমোদন করিয়ে নিতে হবে। কিন্তু দুর্নীতি নিয়ে সরকার ও বিরোধীদের বিবাদে অচলাবস্থা তৈরি হলে তার কোনওটাই হবে না। তাতে সরাসরি কেন্দ্রের কর্মসূচিতেই প্রভাব পড়বে। |
আসছে বিল |
দুর্নীতি রোধে সদিচ্ছা বোঝাতে লোকপাল বিল |
জনতার মন জয়ে খাদ্য সুরক্ষা বিল |
আর্থিক সংস্কারে পণ্য-পরিষেবা কর বিল, প্রত্যক্ষ কর বিধি, বিমা আইন সংশোধনী বিল, ব্যাঙ্কিং আইন সংশোধনী বিল, পেনশন তহবিল নিয়ন্ত্রণ কতৃর্পক্ষ বিল |
কৃষক স্বার্থে জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন বিল |
আদিবাসী উন্নয়নে খনি ও খনিজ (উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ) বিল |
শিক্ষা-সামাজিক ক্ষেত্রে
মহিলা সংরক্ষণ বিল,
উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় জাতীয় রিষদ গঠনের জন্য বিল, সাম্প্রদায়িক হিংসা
প্রতিরোধ বিল |
|
তাই জট কাটাতে সরকারের পক্ষ থেকে ময়দানে নেমেছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। বিজেপির শীর্ষনেতৃত্ব-সহ অন্যান্য দলের নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক ভাবে বৈঠক করছেন তিনি। আহমেদ পটেল, পবন বনসল, সলমন খুরশিদের মতো নেতারাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। নতুন সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী রাজীব শুক্লও অন্য দলগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। সুষমা অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁরা চাইছেন সংসদ চলুক। প্রধানমন্ত্রীও সংসদ চলতে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু লোকসভার স্পিকার মীরা কুমারের ডাকা দলনেতাদের বৈঠকে বিজেপি কার্যত সমস্ত বিষয় নিয়েই আলোচনা চেয়েছে। যার মধ্যে মূল্যবৃদ্ধি ও দুর্নীতি প্রধান। ইউপিএ-র শরিক তৃণমূলও আজকের বৈঠকে জানিয়েছে, তারাও দুর্নীতি, মূল্যবৃদ্ধি ও কালো টাকা নিয়ে আলোচনা চায়। তামিল মৎস্যজীবীদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা চাইছে ডিএমকে।
সরকারের বিরুদ্ধে বিজেপি তথা বিরোধীদের প্রধান অস্ত্র টু-জি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারি। বিষয়টি প্রথমেই খারিজ করে দিতে আজ প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যে সব মামলা আদালতে বিচারাধীন, তা নিয়ে আগে থেকেই কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনো ঠিক নয়।” কিন্তু বিরোধীরা প্রাক্তন টেলিকম মন্ত্রী এ রাজার সাম্প্রতিক বিবৃতি নিয়ে আক্রমণে যেতে চাইছেন। রাজা জানিয়েছেন, স্পেকট্রাম বণ্টনের বিষয়ে সবই জানতেন প্রধানমন্ত্রী। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আজই প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে জানানো হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী সবই জানতেন, এ কথা যেমন ভুল, তেমনই দুর্নীতির আশঙ্কা দেখেও তিনি না দেখার ভান করেছিলেন, এ কথাও ঠিক নয়। প্রধানমন্ত্রী আজ বলেছেন, টু-জি, কমনওয়েল্থ গেমসের মতো দুর্নীতি রোধেই সরকার লোকপাল বিল আনছে। প্রধানমন্ত্রীকে লোকপালের আওতার বাইরে রাখা নিয়ে আপত্তি তুলেছে বিজেপি ও বামদলগুলি। এ বিষয়ে আজ নিজেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সরকার সব দিক খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দফতর ছাড়ার আগে পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে লোকপালের আওতায় রাখা ঠিক হবে না।” আপাতত ঠিক হয়েছে, মঙ্গলবার লোকসভায় মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হবে। সিপিআই-নেতা গুরুদাস দাশগুপ্ত এ নিয়ে মুলতুবি প্রস্তাব আনছেন। তাঁর দাবি, বসপা, বিজেডি, এডিএমকে-ও তাঁর পাশে রয়েছে। সংসদের অন্য আলোচ্যসূচি স্থগিত রেখে আলোচনা হলে বার্তা যাবে, সংসদ এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন। তবে সরকার রাজি নয়। বিজেপিও মুলতুবি প্রস্তাবের পক্ষে। কিন্তু প্রথমেই মুলতুবি প্রস্তাব দিয়ে আলোচনা শুরু করতে কংগ্রেস রাজি নয়।
সমস্যা হল, শুধু দুর্নীতি বা মূল্যবৃদ্ধিতেই শেষ নয়, কালো টাকা, তেলেঙ্গানা, এয়ার ইন্ডিয়ার সঙ্কট, জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে কৃষকদের আন্দোলন, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের মতো বিষয়েও আলোচনা চাইছে বিজেপি। এর মধ্যে অধিকাংশ বিষয়েই বামেরা বিজেপি-র পাশে থাকবে। দুর্নীতি রোধে সরকারের ব্যর্থতায় বিচার ব্যবস্থার অতিসক্রিয়তা নিয়েও আলোচনা চান গুরুদাস।
সিপিএম আবার দুর্নীতি-পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি রেলে একের পর এক দুর্ঘটনা, পুরুলিয়া অস্ত্রবর্ষণ নিয়েও আলোচনা চাইছে। সিপিএমের দলনেতা বাসুদেব আচারিয়া জানান, সংসদের রণনীতি ঠিক করতে আগামী কাল বামদলগুলি বৈঠকে বসবে। পশ্চিমবঙ্গে হারের পর কোণঠাসা বামেরা এ বার অকংগ্রেসি দলগুলির পাশাপাশি বিজেপির সঙ্গেও কক্ষ সমন্বয় রেখে চলতে চাইছে।
সংসদে বিরোধীদের এই ‘মহাজোট’ কী ভাবে ছত্রভঙ্গ করা যায়, তা-ও নিয়েও মাথা ঘামাতে হচ্ছে ইউপিএ-সরকার তথা কংগ্রেসের ‘বিপত্তারণ’-দের। |
|
|
|
|
|