|
|
|
|
বিপাকে যান-শাসন পরিকল্পনা |
দুর্ঘটনার রিপোর্ট পাচ্ছে না লালবাজার |
অমর্ত্য মুখোপাধ্যায় |
দুর্ঘটনার পরে স্থানীয় থানা লালবাজারে ঠিকমতো পাঠাচ্ছে না অ্যাক্সিডেন্ট রিপোর্ট ফর্ম। আর তাই মহানগরীর কোন কোন মোড়ে দিনের কোন সময়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে এবং সেগুলির সঠিক কারণ কী, তা জানতে পারছে না কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ। তৈরি করা যাচ্ছে না দুর্ঘটনা মোকাবিলার সবিস্তার পরিকল্পনা।
কী এই অ্যাক্সিডেন্ট রিপোর্ট ফর্ম? শহরের বিভিন্ন রাস্তায় দিনে বা রাতে যে সব দুর্ঘটনা ঘটছে, সে সময় আবহাওয়া কেমন, রাস্তার অবস্থা কী, কোন দুর্ঘটনাগুলি চালকের ভুলে হচ্ছে, দুর্ঘটনার সময় চালক ও আরোহী ট্রাফিক আইন মেনে চলছেন কি না, চালকের শারীরিক অবস্থা কেমন, তা ফর্মে লিখে ট্রাফিক বিভাগে পাঠানোর কথা সংশ্লিষ্ট পুলিশকর্মীদের।
কে পাঠাবে এই রিপোর্ট? লালবাজার ট্রাফিক বিভাগ সূত্রের খবর, পথ-দুর্ঘটনায় কারও মৃত্যু হলে ফর্ম ভরতে হয় ‘ফেটাল স্কোয়াড ট্রাফিক পুলিশ’ (এফএসটিপি)-কে। আর দুর্ঘটনায় কারও মৃত্যু না হলে এই ফর্ম পূরণ করে লালবাজারে পাঠানোর দায়িত্ব বর্তায় সংশ্লিষ্ট থানাগুলির উপরে। ২০০৮ থেকে এই ফর্ম পূরণের ব্যবস্থা চালু হলেও কী থানা পর্যায়ে, কী এফএসটিপি পর্যায়ে এখনও কোনও হেলদোল নেই। ফর্ম পূরণের মূল উদ্দেশ্যটা তাই মাঠে মারা যাচ্ছে।
কলকাতার বিভিন্ন মোড়ে কখন, কী পরিস্থিতিতে দুর্ঘটনা হয় তার সঠিক তথ্য না থাকার বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে দুর্ঘটনাপ্রবণ মোড়গুলিতে ট্রমা অ্যাম্বুল্যান্স রাখার পরেই। এখন ১৩টি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে এখন দাঁড়ানো থাকে ‘ট্রানজিট ট্রমা কেয়ার অ্যাম্বুল্যান্স’। আরও কয়েকটি মোড়ে ওই অ্যাম্বুল্যান্স রাখার ভাবনা রয়েছে কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের। কিন্তু সে-সব মোড় চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে তথ্যের অভাবে সমস্যায় পড়েছে ট্রাফিক পুলিশ।
লালবাজার সূত্রের খবর, ৪৮টি থানার ওসি ও অতিরিক্ত ওসি-কে ফর্মের ব্যবহার শেখানো সত্ত্বেও কেন তা ঠিক সময়ে ভরে ট্রাফিক বিভাগে ফেরত পাঠানো হচ্ছে না, বারবারই সে প্রশ্ন উঠেছে। থানাগুলির বক্তব্য, স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যস্ত থাকায় সব সময়ে ফর্ম ভরা যায় না।
ট্রাফিক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১০-এ কলকাতার বিভিন্ন রাস্তায় পথ-দুর্ঘটনায় গুরুতর ও সামান্য আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে ১৯২৭টি। কিন্তু থানার তরফে ট্রাফিক বিভাগে জমা পড়েছে মাত্র ৫৯টি ফর্ম। চলতি বছরে ৩০ মে পর্যন্ত কলকাতা শহরে পথ দুর্ঘটনায় আহত কিংবা গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে ৭৮৭টি। আর থানাগুলি থেকে ট্রাফিক বিভাগে ফেরত এসেছে মাত্র ৫১টি ফর্ম। এ ব্যাপারে ট্রাফিক বিভাগের ফেটাল স্কোয়াডও তাদের দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করছে না বলে জানাচ্ছে লালবাজারের পরিসংখ্যান।
এই অবস্থায় কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ-কর্তারা কী বলছেন? ডিসি (ট্রাফিক) দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টিকে তাঁদের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলে এড়িয়ে গিয়েছেন। থানা কিংবা এফএসটিপি- কে এ ব্যাপারে বাধ্য করতে কলকাতা পুলিশ কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা যে এই মুহূর্তে ভাবছেন না তা-ও পরিষ্কার করে দিয়েছেন দিলীপবাবু। |
|
|
|
|
|