নিজস্ব সংবাদদাতা • খয়রাশোল |
পঞ্চায়েত প্রধান ‘স্বৈরাচারী’ এবং অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পঞ্চায়েত চালাচ্ছেনএই অভিযোগে সহযোগী কংগ্রেস এবং বিরোধী সিপিএম সদস্যদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দলীয় পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধেই অনাস্থা আনল ফরওয়ার্ড ব্লক। খয়রাশোল ব্লকের হজরতপুর পঞ্চায়েতের ঘটনা। দিন কয়েক আগে রাজনগরের তথা খয়রাশোলের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত বিডিও প্রভাংশু হালদারের কাছে পাঠানো এই পঞ্চায়েতের সাত জন সদস্য সই করেছেন বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। বিডিও প্রভাংশুবাবু বলেন, “ঘটনাটি সত্যি। সদস্যদের তরফে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছে।”
তবে বিডিও-র কাছে অনাস্থা প্রস্তাব দিন কয়েক আগে পাঠালেও বিষয়টি জানাজানি হয় শুক্রবার। ওই দিন অনাস্থা প্রস্তাবের একটি প্রতিলিপি ডাকযোগে হজরতপুর পঞ্চায়েতে এসে পৌঁছয়। তবে কেন হজরতপুর পঞ্চায়েতের মহিলা প্রধান চন্দনা সৌমণ্ডলের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনা হল সেই প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর কোনও পক্ষের কাছ থেকেই মেলেনি।
পঞ্চায়েত ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৮-এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে ওই পঞ্চায়েতের ১০টি আসনের ৫টি তে জিতেছিল ফব, তিনটিতে কংগ্রেস এবং দু’টি আসনে সিপিএম। তবে সিপিএমের সঙ্গে ফব’র বোঝাপড়া না হওয়ায় বোর্ড গঠন করে ফব ও কংগ্রেস। বিরোধী আসনে ছিল সিপিএম। পঞ্চায়েত সূত্রে খবর, প্রধানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থায় ফব’র পাঁচ সদস্যের তিন জন, কংগ্রেসের তিন সদস্যের দু’জন এবং বিরোধী সিপিএমের দুই সদস্য সই করেছেন। পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রধান চন্দনা সৌমণ্ডলের সঙ্গে ফব সদস্য অজয় ঘোষ এবং কংগ্রেসের জয় বাউরি ছাড়া এই মূহুর্তে কেউ নেই। এর কারণ হিসেবে এক বিক্ষুব্ধ ফব সদস্য অরুণ রুজ বলেন, “প্রধান ইচ্ছামত পঞ্চায়েত চালান, আমাদের কারও সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়াই সিদ্ধান্ত নেন।” তাঁর অভিযোগ, “ক্রমাগত প্রধানের এই ধরনের কাজ এলাকার মানুষের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং সেই জন্য আমাদের কথা শুনতে হয়। তাই এই অনাস্থা।”
যদিও অভিযোগ মানেননি প্রধান চন্দনাদেবী। তিনি বলেন, “সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ। আমি সকলের সঙ্গে আলোচনা করেই কাজ করি। কেন ওঁরা আমার বিরুদ্ধে অনাস্থা আনলেন তা জানা নেই।” তবে খোলাখুলি আক্রমণ করেছেন প্রধানের সঙ্গে থাকা ফব সদস্য অজয় ঘোষ। তিনি বলেন, “এলাকায় যে সব ঠিকাদার উন্নয়নের কাজ করেন তাদের হয়ে দালালি বা ভাগ বুঝে নেওয়ার জন্যই প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনা হল।”
কংগ্রেসের খয়রাশোল ব্লক সভাপতি পরেশ সেন বলেন, “ওই সদস্যরা আমাদের দলের টিকিটে নির্বাচিত হলেও ওঁরা ইতিমধ্যেই তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তাই এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।”
তৃণমূলের খয়রাশোলের ব্লক সভাপতি অশোক ঘোষ বলেন, “এটা সম্পূর্ণ ফব’র সিদ্ধান্ত। আমরা সেটাকে সম্মতি দিয়েছি মাত্র। কারণ এলাকায় কংগ্রেসের টিকিটে জিতে আসা সব সদস্যই গত লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে আমাদের দলকেই সমর্থন করছেন।” তবে তাঁরও অভিযোগ, প্রধান পদের অপব্যবহার করেছেন।
সিপিএমের হজরতপুর লোকাল কমিটির সম্পাদক পঞ্চানন ঘোষ বলেন, “অনাস্থা আনা হয়েছে। শুধু এ টুকু জানি। তবে এর পর আমাদের কর্তব্য কী হবে বা তলবি সভায় আমাদের সদস্যরা ভোটদানে বিরত থাকবেন কি না তা এখন বলতে পারব না।” এলাকার বিধায়ক তথা ফব নেতা বিজয় বাগদি বলেন, “দলের টিকিটে জিতলেও প্রধানের কাজকর্মে দল খুশি নয়। এলাকার উন্নয়নও ঠিকমতো হয়নি। তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে শুনেছি।” |