ভাস্করজ্যোতি মজুমদার • সাঁইথিয়া |
ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা সাঁইথিয়ার লাউতোড় কৃষি সমবায় উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক ও ম্যানেজারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই সমবায় কর্তৃপক্ষ। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ সমবায়ের ম্যানেজার প্রভাস মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছে। তবে সম্পাদক অম্বিকাচরণ দত্ত পলাতক বলে দাবি পুলিশের।
এক আমানতকারীর টাকা ফেরৎ না দেওয়ায় সাঁইথিয়ার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে ফব-র ওই নেতার বাড়ি নিলাম করা হবে বলে জানিয়েছেন সমবায় কর্তৃপক্ষ। সমবায় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সাঁইথিয়ার লাউতোড় সমবায়ে নানা প্রকল্পে টাকা রেখে ঠিক মতো ফেরৎ পাচ্ছেন না বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানিয়ে আসছেন আমানতকারীরা। শুধু তাই নয়, বহুবার টাকা ফেরত দেওয়ার দাবিতে ঝামেলাও করেছেন তাঁরা। এই সব ঝামেলার জেরে প্রায় চার বছর ধরে বন্ধ রয়েছে কার্যালয়। পুলিশ জানিয়েছে, সমবায়ের সম্পাদক তথা ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অম্বিকাচরণ দত্ত ও ম্যানেজার প্রভাস মণ্ডলের বিরুদ্ধে সমবায়ের ডি আর সি এস (ডেপুটি রেজিস্টার অব কোঅপারেটিভ সোসাইটি) ১৩ জুলাই ডাকযোগে অভিযোগ দায়ের করেন। ২০ জুলাই ওই অভিযোগপত্র থানায় পৌঁছয়। এর পরেই বৃহস্পতিবার রাতে প্রভাসবাবুকে গ্রেফতার করা হয়। শুক্রবার তাঁকে সিউড়ি আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক ১৪ দিন জেলহাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
সমবায়ের এক আধিকারিক জানান, অম্বিকাবাবু সাঁইথিয়ার মাঠপলশা কোঅপারেটিভ এগ্রিকালচার মার্কেটিং সোসাইটির চেয়ারম্যানও। ওই আধিকারিকের দাবি, লাউতোড় সমবায় থেকে পাঁচ দফায় ৫ লক্ষ টাকা লোন নেয় মাঠপলশার ওই সোসাইটি। ২০০৪-এর ২২ মার্চ শেষ বার লাউতোড় সমবায়ের দেওয়া এক লক্ষ টাকায় সই করেছিলেন ম্যানেজার প্রভাস মণ্ডল। আর মাঠপলশার হয়ে তা গ্রহণ করেন অম্বিকাচরণ দত্ত। কিন্তু অম্বিকাবাবুর টাকা নেওয়ার তারিখ ২০০৩-এর ২২ মার্চ। আমানতকারী আশিস চৌধুরী বলেন, “প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা এমআরএস করেছিলাম। দেড় লক্ষ টাকা আদায় করা গেলেও বাকি টাকার জন্য প্রতি দিনই ঘোরাতে থাকেন অম্বিকাবাবুরা। শেষ পর্যন্ত ক্রেতা সুরক্ষা দফতরে অভিযোগ করি। সেখানেও অম্বিকাবাবুরা উপস্থিত হননি। এর পরে সমবায়ের এ আর সি এস-এর ফাস্ট কোর্টে কেস করা হয়। সেখানে বাকি টাকা ফেরৎ দিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় সমবায় কর্তৃপক্ষ।” তিনি জানান, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা ফেরৎ না দেওয়ায় ফের এ আর সি এস-এর সেকেন্ড কোর্টে সার্টিফিকেট কেস করেন। সেখানে সমবায় কর্তৃপক্ষ টাকা ফেরৎ দেওয়ার কথা অঙ্গীকার করে। এ বারও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফেরত না দেওয়ায় এ আর সি এস তাঁর বাড়ি নিলামের ফতোয়া জারি করে।
এ ব্যাপারে ডি আর সি এস বলেন, “আমানতকারী আশিস চৌধুরীর ৯৯১৭৭ টাকা ফেরত না দেওয়ার জন্য নিয়ম অনুযায়ী অম্বিকাবাবুর বাড়ি নিলাম করে টাকা শোধ করা হবে। কাল মঙ্গলবার সাঁইথিয়া কোঅপারেটিভ ব্যাঙ্কে অম্বিকাবাবুর বাড়ি নিলাম করা হবে।” সমবায়ের সাঁইথিয়া সার্কেল ইনস্পেক্টর প্রাণতোষ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “অডিট রিপোর্টে ৩২,৯২,৪৬৯ টাকার মধ্যে ২১,৩৮,১৭১ টাকার হিসেব পাওয়া যাচ্ছে। বাকি টাকার হিসেব পাওয়া যাচ্ছে না।” এ দিকে, আমানতকারী সমীর চট্টরাজ, সুকুমার মুখোপাধ্যায়, কান্তপ্রসাদ চন্দ-সহ সব আমানতকারীদের প্রশ্ন, তাঁদের টাকা কী ভাবে ফেরত পাবেন। অবশ্য জেলা সমবায় কর্তৃপক্ষ তেমন কোনও আশার কথা শোনাতে পারেননি। ফোনে অম্বিকাবাবু বলেন, “আমি চিকিৎসার জন্য কলকাতায় এসেছি। পালিয়ে যাওয়ার প্রশ্ন নেই। তবে বাড়ি নিলামের ব্যাপারটি খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের দাবি, “শুধু লাউতোড় নয়, এঁরা সর্বত্রই দুর্নীতি করেছেন।” ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক তথা নলহাটির প্রাক্তন বিধায়ক দীপক চট্টোপাধ্যায় বলেন, “অম্বিকাবাবুকে ফাঁসানো হয়েছে, না কি উনি সত্যিই দুর্নীতি করেছেন, তা দলীয়স্তরে তদন্ত করে দেখা হবে। যদি দুর্নীতি প্রমাণিত হয়, তা হলে দলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। |