কবে মুক্তি পাবেন তা এখনও স্পষ্ট নয়। সবে রাজ্য সরকার গ্রেটার নেতা বংশীবদন বর্মন সহ ৫২ জনের মুক্তির সুপারিশ কার্যকর করার ব্যাপারে তৎপর হয়েছে। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই সরকারের ওই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীর ওই ঘোষণার পরে তিনটে দিন কাটতে-না-কাটতেই বংশীবদনের সম্ভাব্য মুক্তির কৃতিত্ব দাবি নিয়ে তরজায় মেতেছেন যুযুধান রাজনৈতিক দলের নেতারা। কোচবিহারের ডান-বাম দুই শিবিরের নেতাদের বক্তব্যেই তা সেটা স্পষ্ট হয়েছে। পাশাপাশি চলছে ওই গ্রেটার নেতার সঙ্গে দেখা করে আলোচনার হিড়িকও। শুক্রবার ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় কমিটির নেতৃত্ব বংশীবাবুর সঙ্গে জেলে গিয়ে কথা বলেন। প্রাক্তন কেএলও জঙ্গি ও লিঙ্কম্যানদের সংগঠন কামতাপুর ডেমোক্রেটিক লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (জিসিডিপি) ৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল। গ্রেটার কোচবিহার ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি আশুতোষ বর্মা বলেন, “রাস্তায় নেমে বংশীবদনের মুক্তির জন্য আমরা ছাড়া কোনও সংগঠন আন্দোলন করেনি। নতুন মুখ্যমন্ত্রী তা অনুভব করেছেন বলেই ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বংশীবাবু আমাদের নেতা। প্রশাসন অনুমতি দিলে যে কেউ দেখা করতে পারেন।” ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক তথা বিধায়ক উদয়ন গুহ বলেন, “বিনা বিচারে দীর্ঘদিন কাউকে জেলে আটকে রাখার পক্ষপাতি নই। |
বংশীবদন বর্মনকে বন্দিদশা থেকে মুক্তি দিয়ে বিচার চালানোর দাবি তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কাছে করা হয়। বাম সরকার শোনেনি। নতুন সরকার সেটাই কার্যকর করতে চাইছে।’’ বিজেপির কোচবিহার জেলা সম্পাদক নিখিলরঞ্জন দে রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “রাজনৈতিক বন্দিদের মূলস্রোতে ফেরানোর দাবি বহুদিন থেকে করছি।” কোচবিহার জেলা কংগ্রেস সভাপতি শ্যামল চৌধুরীর মতে, বংশীবদন বর্মনকে আটকানোই ঠিক হয়নি। যে ঘটনার জন্য তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়েছে তদন্ত হলে দেখা যাবে ওই ঘটনার পিছনে সিপিএমের মদত ছিল। তিনি বলেন, “রাজ্য সরকার ওর মুক্তির যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা পুরোপুরি সঠিক।” সিপিএমের রাজ্যসভার সাসংদ তারিণী রায় বলেন, “বংশীবদন বর্মনের সঙ্গে আমাদের ব্যক্তিগত শত্রুতা নেই। নির্দিষ্ট অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়। কংগ্রেস ওই ব্যপারে যা বলছে তার কোনও ভিত্তি নেই।” রাজ্যের বনমন্ত্রী তথা তৃণমূল বিধায়ক হিতেন বর্মন বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সদিচ্ছার জন্য বংশীবদন সহ ৫২ জনের মুক্তির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।” দিনহাটা থেকে বাংলাদেশের মোগলহাট পর্যন্ত সড়কপথ চালুর আন্দোলনে বংশীবদন বর্মনের সহযোগিতা চেয়ে কোচবিহার জেলে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সহ সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত-সহ চার জন। দীপ্তিমানবাবু বলেন, “রাজনৈতিক বন্দি মুক্তির দাবি করেছিলাম। দিনহাটা-মোগলহাট সড়ক চালুর ব্যাপারে বংশীবদনবাবুর সহযোগিতা চাইতে দেখা করেছি।” প্রাক্তন কেএলও জঙ্গি লিঙ্কম্যানদের সংগঠনের চেয়ারম্যান পুলস্ত্য বর্মনের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের এক দলও এ দিন বংশীবদনবাবুর সঙ্গে দেখা করেন। পুলস্ত্য বলেন, “গ্রেটারের মতো পৃথক রাজ্যের দাবি আমাদের। এ দিনের সাক্ষাৎ সৌজন্যমূলক। একসময় ওই বন্দিদের মুক্তি চেয়ে জেলে আন্দোলন করেছি।” ২০০৫ সালে বংশীবদন বর্মনের নেতৃত্বে পৃথক রাজ্যের দাবিতে আন্দোলনে উত্তপ্ত হয়ে ওঠা কোচবিহারে ৩ পুলিশ কর্মী-সহ ৫ জনের মৃত্যু হয়। ২০০৬ সালের ২৫ মে বংশীবদনবাবু আত্মসমর্পণ করেন। |