|
|
|
|
|
ডায়েট-ফাঁদে পড়বেন না |
কঠোর ডায়েট মেনেও ওজন কমছে না। এ বার কি উপোস? তিন দিন ডায়েটের পর যদি রগরগে খাবার টানতে থাকে? কী করা উচিত? |
আপনি কেনাকাটা করতে ভালবাসেন। আচমকা আবিষ্কার করলেন, আপনাকে প্লাস সাইজের ডিপার্টমেন্টে ঘোরাঘুরি করতে হচ্ছে। অথবা বাসের সিটে আপনার পাশে অন্য জনকে প্রায় ঝুলতে হচ্ছে। কেন হচ্ছে এমন? আসলে আপনার শরীরটি ক্রমশ একখানা নাদুসনুদুস ফুটবলের আকার নিচ্ছে। নিউট্রিশনে পি এইচ ডি প্রাপ্ত ডিয়ান গ্রিজেল এবং টম গ্রিজেল বিভিন্ন খাবারদাবার নিয়ে গবেষণা করে কিছু বিষয়কে তুলে ধরেছেন, যা মানুষকে ঠিকঠাক ডায়েট মেনে চলতে দেয় না। অর্থাৎ, কেউ হয়তো খুব চিন্তিত তাঁর মেদবহুল চেহারা নিয়ে। ডায়েটও শুরু করলেন। কিন্তু কিছু দিন পরেই সব ছেড়ে আবার আগের অভ্যাসে ফিরে গেলেন। আসলে, ডায়েটকারীর সামনে এমন কিছু ফাঁদ পাতা থাকে, যা এড়ানো যায় না। তাই সাফল্যও আসে না।
ডায়েটে প্রতি দিন এক খাবার থাকলে একঘেয়েমি আসে। গ্রিজেলের মতে, এটাও এক ধরনের ফাঁদ। কারণ, একঘেয়েমি কাটাতে তাঁরা হাই ক্যালরি যুক্ত খাবার খেয়ে ফেলেন। নিউট্রিশনিস্ট রেশমী রায় চৌধুরী জানাচ্ছেন, ডায়েট পরিকল্পনা করার সময় তাই বৈচিত্রের দিকে নজর দিতে হবে। যেমন, ব্রেকফাস্টটা রোজ একই রকম না খেয়ে কর্নফ্লেক্স, খই-দুধ, চিঁড়ে-দই, রুটির সঙ্গের ছোলা বা পনির ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এতে প্রয়োজনীয় প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট দুই-ই পাওয়া যাবে।
জানেন কি, জাঙ্ক ফুড খাওয়া একটা অদ্ভুত নেশার মতো? যাঁরা তৈরি করেন, তাঁরা খাবারটাকে মুখরোচক বানানোর জন্য নানা রকম মশলা মেশান। আর আমরা এই নতুন স্বাদের ফাঁদে পড়ে যাই। তাই, চিপসের প্যাকেটটা খুলেই গোগ্রাসে সেটা শেষ করি। রেশমী জানাচ্ছেন, এতে কিন্তু সুষম খাবারের মতো প্রোটিন বা মিনারেল থাকে না। স্বাদবদলের জন্য বরং দক্ষিণ ভারতীয় খাবার খাওয়া যেতে পারে। তা ছাড়া, ফাস্ট ফুডের প্রিজারভেটিভ আমাদের শরীরে ফ্রি র্যাডিক্যালস তৈরি করে। এই কেমিক্যাল ক্যান্সার বা অকালবার্ধক্যের জন্য দায়ী। বরং প্রিজারভেটিভ মুক্ত অর্গ্যানিক খাবার খাওয়া ভাল।
তা হলে কি বাইরে খাওয়া একেবারে বন্ধ? মোটেই তা নয়। এক দিন বাইরে খাওয়া যেতেই পারে। তবে রেশমী জানাচ্ছেন, খাওয়ার পরিমাণ যেন কম থাকে। একই মত ফিটনেস বিশেষজ্ঞ বিশ্বজিৎ তপাদারেরও। একেবারে সব খাওয়া ছেড়ে দেওয়া অনেকটা শাস্তির মতো। তাঁর মতে, পরিমিত আহার, পুষ্টিকর খাদ্য আর স্বাদু খাবারের মধ্যে একটা সামঞ্জস্য রেখে ডায়েট করতে হবে।
একটা ধারণা আছে যে, উপোস করলে ওজন কমে। বিশ্বজিৎ জানাচ্ছেন, উপোসে মেদ কমা কিন্তু অপুষ্টির লক্ষণ। এতে শরীরে জলের পরিমাণ কমে বলে লিভার, কিডনির নানা রোগ দেখা যায়। এটা অনেকটা রোগকে আমন্ত্রণ জানানোর মতো। এটা কিন্তু ওজন কমানোর স্বাস্থ্যসম্মত উপায় নয়।
ডায়েট চার্ট মানলে এবং নিয়মিত এক্সারসাইজ করলে অবশ্যই ওজন কমে। কিন্তু দেখতে হবে, ওজন কেন বাড়ছে। সেটা বুঝে ডায়েট চার্ট বানাতে হবে। বিশ্বজিৎ জানালেন, এক ডায়েট চার্ট সবার জন্য নয়, এক্সারসাইজও তা-ই। পরিবারে ফ্যাটের ইতিহাস আছে কি না, খাওয়ার অভ্যাস, বয়স, জীবনযাত্রা এই সবের ওপর নির্ভর করে ডায়েট চার্ট বা এক্সারসাইজ। সঙ্গে দরকার রাতে অন্তত ৬-৮ ঘণ্টা গাঢ় ঘুম। রাত জাগলে মেদও বাড়ে বলেছেন গ্রিজেল। ঘুম কাটাতে কফি, চকলেট হামেশাই চলে। এতে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়ে।
গ্রিজেল বলেছেন, আমরা বুঝি না যে, এই মুহূর্তে একটা চকলেট বার আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, না পরিবারের সঙ্গে স্বাস্থ্যকর জীবন কাটানো। এটা বুঝতে পারলে আমাদেরই মঙ্গল।
|
সাক্ষাৎকার: পৌলমী দাস চট্টোপাধ্যায় |
|
|
|
|
|