|
|
|
|
|
মগজাস্ত্র উন্নত থেকে উন্নততর করে ভিটামিন
ভুলো মনের সমস্যা অনেক। ঘরে-বাইরে হাজারো বিপত্তিতে
পড়তে হয়। কাজ দিতে পারে ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার।
কী ভাবে? জানাচ্ছেন ডা. শান্তনু নন্দী |
|
|
দরকারি জিনিসগুলো যত্ন করে তুলে রেখে, কাজের সময় এই যাহ্! কোথায় রেখেছিলাম কিছুতে মনে পড়ে না। তার পর, কী যেন ওর নামটা, স্কুলে তো এক ক্লাসেই পড়ত, ভুলে গেলাম কী করে? ধুর বাবা, আজ কাল এমন ভুলো মন হয়েছে, কিছুই মনে থাকে না। আর স্মৃতিরই বা কী দোষ? ছোট্ট মাথাটা কি আর এত কিছু জমা রাখতে পারে? আলবাত পারে। ওইটাই তো মস্তিষ্কের কাজ। এই রকম ভুলতে থাকার মানেটা হল, আপনার মস্তিষ্কের পুষ্টিতে বড় মাত্রায় ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। তাই মস্তিষ্ক নিজের কাজটা গুছিয়ে করতে পারছে না। প্রতি দিনের খাবারে যথেষ্ট পরিমাণ ভিটামিন থাকলে, অবস্থার কিন্তু কিছুটা উন্নতি হতেই পারে।
দেখা গেছে, স্মৃতিশক্তি বাড়াতে ভিটামিনগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হয়তো এই প্রভাবটা রাতারাতি দেখা যাবে না, কিন্তু নিয়মিত ভিটামিন ভরপুর সবজি, ফল বা অন্য খাবার খেলে নিশ্চিত ভাবে তা স্মরণশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এর কিছু শারীরবৃত্তীয় কারণ আছে। প্রতিটা ভিটামিন এন এ ডি (নিকোটিনামাইড অ্যাডিনাইন ডাই নিউক্লিয়োটাইড) ও এন এ ডি পি (নিকোটিনামাইড অ্যাডিনাইন ডাই নিউক্লিয়োটাইড ফসফেট) দিয়ে গঠিত হয়। আর এই দুটি উপাদান স্নায়ুতন্ত্রেরও অন্যতম অংশ। এই ভিটামিনগুলো স্নায়ুকোষগুলির পুষ্টির সময় উৎসেচক রূপে কাজ করে। এই প্রক্রিয়ায় প্রতিটি ভিটামিনের আলাদা আলাদা ভূমিকা রয়েছে। অর্থাৎ শুধু স্মৃতি রক্ষাই নয়, ভিটামিন মস্তিষ্কের অন্যান্য কাজগুলোও সুষ্ঠ ভাবে করতে সাহায্য করে। এর মধ্যে পড়ে একাগ্রতা, সজাগ-তৎপর থাকা, মানসিক ভাবে চনমনে থাকা বলা যায় বুদ্ধিবৃত্তির গোটা ব্যাপারটাই।
ডায়েট-এর মাধ্যমে ভিটামিন
• প্রিজার্ভেটিভস আর কীটনাশক ছাড়া ফল বা সবজি খেতে পারলে সব থেকে ভাল হয়। তাতে মনে রাখার ক্ষমতা অনেকটাই ধরে রাখা যায়।
• ওমেগা থ্রি ও ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার খান। যেমন আখরোট, ড্রাই ফ্রুটস, টুনা, স্যামন প্রভৃতি সামুদ্রিক মাছ ও মাছের তেল। হার্টের অসুখ থাকলে সামুদ্রিক মাছ ও মাছের তেল খাওয়া চলবে না।
• খাবারের তালিকায় অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রাখুন। যেমন ধরুন রঙিন সবজি অর্থাৎ বীট, কুমড়ো, টম্যাটো ইত্যাদি তাজা ফল। আর গ্রিন টি তো খুবই উপকারী।
• ভিটামিন বি-সিক্স, বি-টুয়েলভ, ফলিক অ্যাসিড ইত্যাদির উৎস হল আঙুর, সয়াবিন, পালং ও অন্যান্য সবুজ শাক সবজি।
• সবুজ শাক-সবজি ও মরশুমি ফল নিয়মিত খেলেই ভিটামিনের চাহিদা প্রায় পুরোটাই মিটবে।
• এ ছাড়া আয়রন জাতীয় খাবার, যেমন ব্রকোলি, টোফু, অঙ্কুরিত ছোলা, ডিম অবশ্যই খাবেন। স্মরণশক্তি রক্ষায় এগুলি অপরিহার্য।
যা করবেন না
বাজারে অনেক স্মৃতিবর্ধক ওষুধ বা ভিটামিন সাপ্লিমেন্টস পাওয়া যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে এগুলো একদম খাবেন না। তার থেকে খাবারের মাধ্যমে ভিটামিনের প্রয়োজন মেটানো অনেক বেশি নিরাপদ। আসলে দৈনিক ঠিক কতটা ভিটামিন খেলে স্মৃতির ক্ষেত্রে সহায়ক হবে, তার পরিমাণ কিন্তু কখনওই নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। আর না জেনে ভিটামিন বেশি খেয়ে নেওয়ার ফল কিন্তু ভাল না-ও হতে পারে। যে ভিটামিনগুলো ফ্যাট সলিউবল (এ, ডি, ই, কে), সেগুলো বেশি খেয়ে ফেললে বডি ফ্যাটে জমা হতে থাকে, তার প্রভাবও কিন্তু বিষাক্ত। এক সঙ্গে অনেকটা পরিমাণ ভিটামিন খাওয়াও যেমন ক্ষতিকর, অনেক দিন ধরে অতিরিক্ত মাত্রায় ভিটামিন খাওয়াও কিন্তু একেবারেই ঠিক নয়।
আর একটা তথ্যও জেনে রাখা দরকার। ভিটামিন স্মৃতিশক্তি ও মস্তিষ্কের সামগ্রিক ক্ষমতা পরোক্ষ ভাবে বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। হারানো স্মৃতি, অ্যালঝাইমার্স বা অন্য কোনও স্মৃতিজনিত অসুখ কিন্তু সম্পূর্ণ ভাবে নিরাময়ের ক্ষমতা
ভিটামিনের নেই। |
|
|
|
|
|