|
|
|
|
মমতার কণ্ঠে স্বৈরতন্ত্রের সুর, অভিযোগ সূর্যকান্তের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠে এ বার ‘স্বৈরতন্ত্রে’র সুর শোনা যাচ্ছে বলে অভিযোগ করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি তাঁর পাল্টা কটাক্ষ, “বাম কর্মীদের উপরে রাজ্য জুড়ে যে সন্ত্রাস চলছে, তা দূরবীন দিয়ে দেখতে হবে না। মুখ্যমন্ত্রী চশমা পরলেই দেখতে পাবেন! কারণ, কোথায় কত জন বাম কর্মী খুন হয়েছেন, তার পূর্ণাঙ্গ তালিকা আমরা মুখ্যমন্ত্রীকে দিয়েছি।” সূর্যবাবুর দাবি, “মুখ্যমন্ত্রী অস্বীকার করলেও বাম কর্মীদের উপরে যে সন্ত্রাস হচ্ছে, তা প্রতিষ্ঠিত সত্য। মানুষ তা দেখছেন। তাঁরা প্রতিবাদে সামিলও হচ্ছে।”
বামেদের তোলা ‘সন্ত্রাস’ এবং ‘গণতান্ত্রিক অধিকার হরণে’র অভিযোগকে গুরুত্ব না-দিয়ে ২১ জুলাইয়ের ব্রিগেড সমাবেশ থেকে মমতা তাঁদের ‘১০ বছর চুপ’ করে থাকতে বলেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “রাজ্যে গণতন্ত্র আছে। কোথায় সন্ত্রাস? আকাশ থেকে পড়ছে? না দূরবীন দিয়ে দেখতে হয়?”
তার ২৪ ঘণ্টা পরে আনুষ্ঠানিক ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর কথার জবাব দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা। মমতার কথার সূত্র ধরে শুক্রবার সূর্যবাবু বলেন, “উনি আমাদের ১০ বছর চুপ করে থাকার উপদেশ দিয়েছেন। ’৭৫-’৭৭ সাল দু’বছর জরুরী শাসনের সময়েও আমাদের চুপ করিয়ে রাখার চেষ্টা হয়েছিল। উনি চান, বিরোধীরা কোনও কথা বলবেন না! আগে দলতন্ত্রের অভিযোগ করেছিলাম। কিন্তু এ বার পরিষ্কার স্বৈরতন্ত্রের কণ্ঠস্বর শোনা গেল!” সূর্যবাবুর আরও অভিযোগ, জরুরি অবস্থার সময়ে পুলিশ-প্রশাসনকে ব্যবহার করে তাঁদের কণ্ঠ রুদ্ধ করার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু তৃণমূল ‘দলীয় বাহিনীকে’ কাজে লাগিয়ে বিরোধীদের কণ্ঠ বন্ধ করতে চাইছে।
রবীন্দ্রনাথের জন্মের সার্ধশতবর্ষে মুখ্যমন্ত্রী ২২ শ্রাবণ পালনের যে নির্দেশ দিয়েছেন, তার উল্লেখ করে বিরোধী দলনেতার মন্তব্য, “উনি বলেছেন, তিন দিন ধরে রাজ্যে রবীন্দ্রসঙ্গীত ও নজরুল গীতি বাজবে। পাশাপাশি সন্তানহারা মায়ের আর্তনাদও শোনা যাবে!” ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকে ২৭ জন বাম নেতা-কর্মী খুন হওয়া ছাড়াও আহতদের মধ্যে কয়েক’শো মানুষ পঙ্গু হয়ে যাবেন বলে সূর্যবাবুর আশঙ্কা। তাঁর অভিযোগ, “বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূলের আক্রমণে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ ঘরছাড়া।
১৯১১ জন বাম কর্মী-সমর্থকের উপরে প্রায় সাড়ে ১১ কোটি টাকা জরিমানা হয়েছে। বাম পরিচালিত পঞ্চায়েতগুলিকেও কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না।” মমতা বামেদের ‘পিছন থেকে’ নয়, ‘সামনা-সামনি’ বিরোধিতা করতে বলেছেন। সূর্যবাবুর পাল্টা প্রশ্ন, “সামনা-সামনি মানে কি সংঘর্ষ হবে? আমরা শান্তি চাই। তবে আমরা মেঘনাদ নই যে, আড়াল থেকে লড়ব!”
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সূর্যবাবু এ দিন মমতার সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্ক নিয়েও কটাক্ষ করেছেন। তাঁর কথায়, “কংগ্রেস জোট সঙ্গী হলেও তাদের কাউকে তো ব্রিগেডে দেখলাম না! জঙ্গলমহল, পাহাড়েও দেখলাম না! তবে এটা ওদের ব্যাপার!” কেন মমতা বারবার অর্থের জন্য কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হচ্ছেন, সেই প্রশ্ন তুলে বিরোধী দলনেতার বক্তব্য, “সরকার পূর্ণাঙ্গ বাজেট না-করলে পয়সা পাবে কী করে? আর পূর্ণাঙ্গ বাজেট না-করলে তো রাজস্ব বসানোও যাবে না!” মমতা বারবার অভিযোগ করছেন, বামফ্রন্ট সরকারি কোষাগার শূন্য করে দিয়ে গিয়েছে। নিজেই সেই প্রসঙ্গ উত্থাপন করে সূর্যবাবু বলেছেন, “পূর্ণাঙ্গ বাজেট না-করলে সরকারি ভাঁড়ার শূন্যই থেকে যাবে!” তবে সমালোচনার পাশাপাশি মমতা যে ভাবে উন্নয়ন, কর্মসংস্থানের কথা বলেছেন বা তৃণমূল কর্মীদের রাস্তায় ইট পাতা, গাছ লাগানো, হাসপাতাল পরিষ্কার করার নির্দেশ দিয়েছেন, তা সমর্থন করেছেন বিরোধী দলনেতা। তাঁর কথায়, “এ সব কাজ যদি হয়, ভালই হবে!” |
|
|
|
|
|