|
|
|
|
অনুমতি ছাড়াই দত্তক, সংস্থার বিরুদ্ধে মন্ত্রীর দ্বারস্থ বাবা-মায়েরা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
কেউ বাচ্চা হাতে পেয়েছেন দু’বছর আগে। কারও সন্তানের বয়স সদ্য এক পেরিয়েছে। এদের কারও জন্মের শংসাপত্র নেই!
রাজ্যের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার বিরুদ্ধে শিশু দত্তক দেওয়ার ব্যাপারে কাঁড়ি কাঁড়ি বেনিয়মের অভিযোগ। অনেক ক্ষেত্রেই সরকারি অনুমোদন ছাড়াই বাচ্চা দিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং পরে শংসাপত্র পেতে অসুবিধা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। এমনই এক সংস্থার কাছ থেকে দত্তক নেওয়া শিশুদের বাবা-মায়েরা শুক্রবার দুপুরে ঢুকে পড়লেন মহাকরণে সমাজকল্যাণমন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রর ঘরে। সমস্বরে তাঁদের সকলেরই অভিযোগ, যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে বাচ্চা ‘দত্তক’ নিয়েছেন, তারা এখনও জন্মের শংসাপত্র দেয়নি।
সুমন্ত ও রিনা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন। মন্ত্রীর সামনেই ওই দম্পতি বললেন, “বাচ্চার প্রায় আড়াই বছর বয়স হল। স্কুলে ভর্তি করার সময় এসে গেল। তবু এখনও বার্থ সার্টিফিকেট পাইনি।” সুমন্তবাবু নিজে এ ব্যাপারে ক’দিন আগেই লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন মন্ত্রীর কাছে। সাবিত্রীদেবী নিজেও সে কথা উল্লেখ করে বলেন, “কয়েক দিন আগে একটি দত্তক বাচ্চার অভিভাবক আমাকে লিখিত ভাবে জানান, তিনি কেষ্টপুরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছ থেকে দু’লক্ষ ২৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি বাচ্চা দত্তক নেন ২০০৯-এ। এখনও তার জন্মের শংসাপত্র পাননি।” |
|
মহাকরণে মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রের (ডান দিকে) ঘরে। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র |
দু’লক্ষাধিক টাকা লাগল কেন? বেশি টাকা দিয়ে বাচ্চা ‘বিক্রি’র অভিযোগ অস্বীকার করলেন ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অন্যতম কর্তা মনোরঞ্জন চক্রবর্তী। অন্য বাবা-মায়েরা জানান, তাঁরা নিয়মমাফিক ৩৫ হাজার ২০০ টাকা দিয়েই দত্তক নিয়েছেন। কিন্তু শংসাপত্র পাননি কেউই। কেন? মনোরঞ্জনবাবুর দাবি, “সরকারি সংস্থা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি (সিডব্লিউসি) ষড়যন্ত্র করে শংসাপত্র দিতে দিচ্ছে না।”
কীসের ষড়যন্ত্র? দত্তক দেওয়ার নিয়মই বা কী? মন্ত্রীর ঘরে উপস্থিত সমাজকল্যাণ দফতরের সচিব রিনচেন টেম্পো জানান, কোনও বাচ্চা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাতে আসার পরে দু’মাস অপেক্ষা করতে হয়। দু’মাসের মধ্যে বাবা-মা যদি সন্তানকে ফেরত না চান, তার পর সেই বাচ্চাটিকে ‘ফ্রি ফর অ্যাডপশন’ বলে ঘোষণা করার জন্য সিডব্লিউসি-এর কাছে আবেদন করতে হয়। সরকারি অনুমোদন আসার পরে আদালত দত্তক শিশু ও তার নতুন বাবা-মায়ের বৈধতা ঘোষণা করে। আদালতের ছাড়পত্র মেলার পর বাচ্চার জন্মের শংসাপত্র মেলে। সচিব বলেন, “স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি নিয়ম না মেনেই বাচ্চা দত্তক দিয়েছে।”
মন্ত্রীর ঘরে তখন তিল ধারণের স্থান নেই। সব মিলিয়ে প্রায় পনেরো জোড়া মা-বাবা, দফতরের একাধিক কর্মী-অফিসার এবং সংবাদমাধ্যমের ভিড়ে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা একরত্তি বাচ্চাগুলোর। তারই মধ্যে বাবা-মায়ের সঙ্গে এবং মন্ত্রীর কোলে বাচ্চাদের ছবি তোলার হিড়িক। এই গোলমালের মধ্যেই অভিযোগে জেরবার ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্তারা স্বীকার করে নেন, সিডব্লিউসি-র অনুমতিপত্র ছাড়াই তাঁরা বাচ্চা দত্তক দিয়ে দিয়েছেন। তাঁরা স্বীকার করেন, লাইসেন্স নবীকরণে দেরি হওয়ায় ২০০৯-এর এপ্রিল থেকে ২০১০-এর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লাইসেন্সহীন অবস্থায় ছিলেন তাঁরা। পরে ছ’মাসের জন্য অস্থায়ী লাইসেন্স দেওয়া হয়। তার মেয়াদও শেষ হয়েছে এ বছর ফেব্রুয়ারিতে। এখন তাঁরা ফের লাইসেন্সহীন। মনোরঞ্জনবাবুদের দাবি, তাঁরা এই মুহূর্তে নতুন করে বাচ্চা দত্তক দিচ্ছেন না। তবে গত দু’বছরে ৭২ জন বাচ্চাকে দত্তক দেন তাঁরা। আরও ১০টি বাচ্চাকে বাইরে পাঠানোর জন্য কাগজপত্র তৈরি হচ্ছে। কিন্তু ২০০৮-’৯-এ লাইসেন্স থাকাকালীন অবস্থাতে যে সব বাচ্চাকে দত্তক দেওয়া হয়েছে, তাদেরও সিডব্লিউসি অনুমতিপত্র দেয়নি বলে সংস্থার অভিযোগ। সরকারের বক্তব্য, শিশু হাতে পাওয়ার দু’মাসের মাথাতেই তাদের বিভিন্ন দম্পতির হাতে তুলে দিয়েছে ওই সংস্থা। সেখানেও টাকাপয়সার বেআইনি লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। উপরন্তু সিডব্লিউসি-র অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত শিশু দত্তক দেওয়ারই নিয়ম নেই।
সিডব্লিউসি-র অনুমতিপত্র ছাড়াই কী ভাবে দত্তক দেওয়ার কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল ওই সংস্থা? মন্ত্রী তা তদন্ত করে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে সংস্থাটিকে এখনই তড়িঘড়ি ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করার কথা ভাবছেন না বলে তিনি জানান। আগে এই বাচ্চাগুলির জন্মের শংসাপত্র পাওয়ার জট খুলতেই তিনি উদ্যোগী হবেন। আপাতত কোনও বাচ্চাকে বাইরে পাঠানোর উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বাচ্চা দত্তক দেওয়ার সঙ্গে যে সব সংস্থা যুক্ত, তাদের সকলকেই শীঘ্র একটি বৈঠকে ডাকবেন বলে জানান সাবিত্রী দেবী। |
|
|
|
|
|