|
|
|
|
বৃষ্টিতে দুর্ভোগ দুই জেলায় |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
নিম্নচাপের বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে ওন্দা ও বাঁকুড়া-২ ব্লকের বেশ কয়েকটি গ্রাম। জলের তোড়ে সোনামুখী ও ওন্দা ব্লকের দু’টি জায়গায় রাস্তা ভেঙে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে।
বাঁকুড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অন্তরা আচার্য বলেন, “বৃষ্টির জন্য কোথায় কেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে। ডিভিসি জানিয়েছে, মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধার থেকে প্রায় ২৫ হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়া হবে। ব্লকগুলিকে সতর্ক করা হয়েছে।” জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃষ্টির জেরে পাত্রসায়র, সোনামুখী, বড়জোড়া, ওন্দা, বাঁকুড়া ২, গঙ্গাজলঘাটি, সিমলাপাল সহ বেশ কয়েকটি ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় চাষের কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভেঙে পড়েছে কয়েকশো কাঁচা বাড়ি।
মঙ্গলবার থেকে বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি শুরু হলেও বৃহস্পতিবার ভাল পরিমাণে বৃষ্টি হয়। এরফলে, বাঁকুড়া-২ ও ওন্দা ব্লকের উপর দিয়ে বয়ে চলা কানা নদী ফুলেফেঁপে উঠে বৃহস্পতিবার রাতে নদীর দু’পাড়ের সাহাপুর, ওলা, বিক্রমপুর, জন্দা, চন্দ্রহাটি, কোষ্ঠিয়া, কলাবেড়িয়া, চামটা প্রভৃতি এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। তবে, শুক্রবার সকাল থেকে বৃষ্টি কমে যাওয়ায় জল নামতেও শুরু করে। জলের নীচে চলে যায় বিঘের পর বিঘে চাষের জমি। চাষিদের আশঙ্কা, জমি থেকে জল না সরলে রোপণ করা ধান চারা পচে তাঁদের বড় আর্থিক ক্ষতি হবে। সাহাপুরের বিশ্বনাথ দাস, কোষ্ঠিয়ার বিধান পালরা বলেন, “এলাকা জলমগ্ন। তার উপর বাড়ির ক্ষতি হয়েছে। খুব সমস্যার মধ্যে রয়েছি।” |
|
হাত ধরে পড়ুয়াদের কালভার্ট পার করে দিচ্ছেন স্থানীয় যুবক। বোরোর নোওয়াডি গ্রামে সমীর দত্তের তোলা ছবি। |
ওন্দার সাহাপুরে, মাকুড়গ্রাম-জয়কৃষ্ণপুর সড়কে কালভার্টের কাছে অনেকখানি অংশ জলের তোড়ে ভেঙে যাওয়ায় এ দিন থেকে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। একই ভাবে বৃহস্পতিবার রাতে বিষ্ণুপুর-সোনামুখী রাস্তায় বলরামপুর গ্রামের কাছে, একটি কালভার্ট ভেঙে পড়ায় যান চলাচল বন্ধ। সোনামুখী-দুর্গাপুর রাস্তায় শালি নদীর নিচু সেতুর উপরে জল উঠে যাওয়াতেও থমকে গিয়েছে বাস-সহ অন্য যান চলাচল। তার জেরে দুর্ভোগে পড়েছেন বাসিন্দারা। বাঁকুড়া জেলা মোটর মজদুর ইউনিয়নের সম্পাদক সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “প্রশাসনকে দ্রুত রাস্তাগুলি মেরামত করার আর্জি জানানো হয়েছে। শালি নদীতে উঁচু সেতুর দাবি দীর্ঘদিনের হলেও, তা অবহেলিত হচ্ছে।” বাঁকুড়া সদরের মহকুমাশাসক শ্যামলকুমার মণ্ডল ও বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক সুশান্ত চক্রবর্তী বলেন, “পূর্ত ও সড়ক বিভাগের আধিকারিকদের রাস্তা মেরামতি করার জন্য বলা হয়েছে।”
অনেকটা একই সমস্যা দেখা দিয়েছে পুরুলিয়ার বোরো থানা এলাকাতেও। বৃহস্পতিবারের ভারী বৃষ্টিতে স্থানীয় নদী ও খালগুলিতে জলস্ফীতি দেখা দিয়েছে। এর ফলে মানবাজার-বান্দোয়ান পাকা রাস্তা থেকে দিঘি গ্রাম মুখী সড়কের এবং বোরো থেকে আগুইবিল যাওয়ার সড়কে থাকা দু’টি নিচু সেতুর উপরেই প্রবল জলের তোড়। যাতায়াত করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন এলাকাবাসী। |
|
জলের তোড়ে ভেঙে গিয়েছে ওন্দার সাহাপুর গ্রামের রাস্তা। ছবি: অভিজিৎ সিংহ। |
এ দিন সকালে দিঘি গ্রামের অদূরে নোওয়াডি গ্রামের কাছে গিয়ে দেখা গেল, সেতুর দু’ধারেই পারাপারের জন্য দাঁড়িয়ে স্কুলপড়ুয়া, শিক্ষক থেকে শুরু করে সাধারণ গ্রামবাসী। দিঘি হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া অলকা কিস্কু, ভাগ্যবতী হেমব্রম বলে, “আধ ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি। জলের যা তোড়, তাতে সেতু পেরোতে ভরসা পাচ্ছি না।” দিঘি গ্রামের যুবক সুধীর মাহাতো হাত ধরে ওই দুই ছাত্রীকে পার করে দিলেন। স্থানীয় বাসিন্দা, পেশায় সংবাদপত্র বিক্রেতা সুকুমার চন্দের কথায়, “মানবাজার থেকে কাগজ নিয়ে এলাকায় বিক্রি করি। এ দিন ভোরে জলের স্রোত তীব্র থাকায় অনেকটা ঘুরে মানবাজারে যেতে হয়েছে।” একই অবস্থায় বোরো থানা থেকে তিন কিলোমিটার দূরের জয়পুর নদীঘাটে। এই নিচু সেতুর উপরে এ দিন দুপুর ১২টাতেও কোমর সমান জল বইছিল। টটকো নদীর উপরের এই ঘাটে কেউ পারাপারের সাহস করেননি। এই রাস্তা বান্দোয়ানের কুইলাপালে গিয়ে মিশেছে।
স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, দু’টি সেতুই অপরিকল্পিত ভাবে নির্মিত হওয়ায় একটু ভারী বৃষ্টিতেই জলের তলায় চলে যায়। খাল ও নদীতেও এই সময় তীব্র স্রোত থাকে। এই অবস্থায় সেতু পারাপার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। মানবাজার ২ পঞ্চায়েত সমিতির সিপিএম সভাপতি অসিত মাহাতো এই সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন। তাঁর কথায়, “বাড়ি থেকে ব্লক অফিস যেতে গেলে আমাকেও দিঘি গ্রামের রাস্তা ধরতে হয়। এ দিনও ঝুঁকি নিয়ে ওই নিতু সেতু পেরিয়েছি। তবে সেতুগুলির সংস্কারের জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতির আর্থিক সামর্থ অনুযায়ী যতটা সম্ভব সেতুর সংস্কার করা হবে।” |
|
|
|
|
|