|
|
|
|
চিল্কিগড় কনকদুর্গা মন্দির |
বিগ্রহ উধাও, ঘটেই সারা হল নিত্যপুজো |
নিজস্ব সংবাদদাতা • চিল্কিগড় (জামবনি) |
চুরি গিয়েছে সালঙ্কারা দেবী মূর্তি। শিবলিঙ্গ, শালগ্রাম শিলাও উধাও। তাতেও থেমে রইল না চিল্কিগড় কনকদুর্গা মন্দিরের নিত্য পুজো। মন্দিরের গর্ভগৃহে শূন্যবেদির সামনে নতুন ঘটস্থাপন করে পুজো সারলেন পুরোহিত।
জামবনিতে ২৬২ বছরের ঐতিহ্য-প্রাচীন এই মন্দিরে অধিষ্ঠিতা চিল্কিগড় রাজ পরিবারের কুলদেবী কনকদুর্গা। ডুলুং নদীর ধারে মনোরম নৈসর্গিক পরিবেশে মন্দিরটির অবস্থান। আশপাশে ৬৩ একরের জঙ্গল এলাকা। সেখানে রয়েছে প্রায় সাড়ে তিনশো প্রজাতির দুষ্প্রাপ্য প্রাচীন গাছগাছড়া। বৃহস্পতিবার রাতে বৃষ্টির মধ্যেই দুষ্কৃতীরা মন্দিরে হানা দেয় বলে অনুমান। মন্দির লাগোয়া অতিথিশালার ঘরে থাকেন কেয়ার-টেকার গুণধর মাহাতো। শুক্রবার সকালে তিনিই প্রথম দেখেন মন্দিরের পিছনে গ্রিলের দরজা ও গর্ভগৃহের বাঁ দিক দিয়ে ভেতরে ঢোকার গ্রিল ও কাঠের দু’টি দরজার তালা ভাঙা। দেড় ফুট উচ্চতার ও ২৫ কেজি ওজনের অষ্টধাতুর অশ্ববাহিনী দুর্গার মূর্তি, তার সোনা-রুপোর গয়না, গৌরীপীঠ-সহ শিবলিঙ্গ, প্রাচীন শালগ্রাম শিলা, কষ্টিপাথরের উপর খোদাই করা প্রাচীন মহিষমর্দিনী মূর্তি ও প্রণামীর বাক্স সবই চুরি গিয়েছে।
|
|
চলছে ঘটপুজো। ছবি: দেবরাজ ঘোষ। |
১৭৪৯ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন ‘তিহারদ্বীপা গড়’ বা জামবনি পরগনার সামন্তরাজা গোপীনাথ সিংহ মত্তগজ স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে আশ্বিন মাসের শুক্ল সপ্তমী তিথিতে কনকদুর্গার মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। রানি গোবিন্দমণির হাতের কঙ্কণ দিয়ে তৈরি করা হয় দেবীর মূর্তি। গোপীনাথের কন্যা সুবর্ণমণির সঙ্গে বিয়ে হয় ধলভূম পরগণার রাজা সপ্তম জগন্নাথ দেও ধবলদেবের। পরে তাঁদের জ্যেষ্ঠপুত্র কমলাকান্ত দেও ধবলদেব চিল্কিগড়ের রাজা হন। সেই থেকে রাজা কমলাকান্তের উত্তরসূরিরাই মন্দিরের সেবাইত। মন্দিরের প্রথম পূজারি রামচন্দ্র ষড়ঙ্গির উত্তরসূরিরা বংশানুক্রমে মন্দিরের পূজকের দায়িত্বে।
কনকদুর্গার প্রাচীন মন্দিরটি জরাজীর্ণ হয়ে যাওয়ায় ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে পাশেই নতুন মন্দির তৈরি করা হয়। ১৯৬৮ সালে কনকদুর্গার আদি মূর্তি, যাতে সোনার ভাগ বেশি ছিল তা চুরি যায়। সত্তরের দশকে আরও দু’বার চুরি গিয়েছে মূর্তি। এ বার যেটি খোওয়া গেল, সেই অষ্টধাতুর বিগ্রহ তৈরি করা হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। এতে পিতলের ভাগই বেশি। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। তবে দুর্গাপুজোর নবমীতে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয় চিল্কিগড়ে। ফলে, পুজোর আগে নতুন মূর্তি তৈরির ব্যাপারে চিন্তিত মন্দির পরিচালন কমিটি। কমিটির সভাপতি তথা রাজ পরিবারের সদস্যষ বিজয়েশচন্দ্র ধবলদেব বলেন, “এলাকাবাসীরা চাইছেন মন্দির-সংলগ্ন এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্ব নিক সরকার।” সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত। আর চিল্কিগড়কে সেরা পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নতুন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ঝাড়গ্রামের প্রক্তন সিপিএম বিধায়ক অমর বসু। বর্তমান বিধায়ক তথা পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদাও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে চিল্কিগড়ের গুরুত্ব স্বীকার করে নিয়েছেন। |
|
|
|
|
|