|
|
|
|
চিল্কিগড় মন্দির থেকে চুরি অষ্টধাতুর দুর্গামূর্তি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • চিল্কিগড় (জামবনি) |
আড়াইশো বছরেরও বেশি পুরনো মন্দির। সেখান থেকেই চুরি গেল অষ্টধাতুর দুর্গামূর্তি। দেবীর সোনা-রুপোর গয়না, গৌরীপীঠ-সহ শিবলিঙ্গ, শালগ্রাম শিলা, কষ্টিপাথরে খোদিত প্রাচীন মহিষমর্দিনী মূর্তি ও প্রণামীর বাক্সও খোওয়া গিয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে এই কাণ্ড ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের জামবনিতে চিল্কিগড় কনকদুর্গা মন্দিরে।
ডুলুং নদীর ধারে ৬৩ একর জঙ্গল এলাকার মধ্যে এই মন্দিরে অধিষ্ঠিত ছিলেন চিল্কিগড় রাজ পরিবারের কুলদেবী কনকদুর্গা। মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ঐতিহ্য, ইতিহাস, জনশ্রুতি। রাজ পরিবারের এক সদস্যের সভাপতিত্বে বাসিন্দাদের নিয়ে গঠিত ২৩ জনের কমিটি মন্দির পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে। রাতে মন্দির লাগোয়া অতিথিশালার ঘরে থাকেন কেয়ারটেকার গুণধর মাহাতো। বৃহস্পতিবার রাতে বৃষ্টি হচ্ছিল। ফলে, কোনও শব্দ শোনেননি বলে জানিয়েছেন গুণধর। এ দিন ভোরে তিনিই প্রথম দেখেন মন্দিরের পিছনে গ্রিলের দরজার তালা ভাঙা। গর্ভগৃহের বাঁ দিক দিয়ে ভেতরে ঢোকার গ্রিল ও কাঠের দু’টি দরজার তালাও ভাঙা ছিল। ভেতরে ঢুকে দেখা যায়, দেড় ফুট উঁচু ২৫ কেজি ওজনের অষ্টধাতুর অশ্ববাহিনী দুর্গার সালঙ্কারা মূর্তিটি নেই। চুরি গিয়েছে অন্য সামগ্রীও। মূর্তি-সহ সব জিনিস উদ্ধার ও দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে বিকেলে চিল্কিগড়ে ঘণ্টাখানেক পথ অবরোধ করেন এলাকাবাসী। ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার সুপার গৌরব শর্মা বলেন, “তদন্তে সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” |
|
এই মূর্তিটিই চুরি হয়েছে।ফাইল চিত্র |
এই নিয়ে গত পাঁচ দশকে চার বার মন্দিরের দরজা ভেঙে কনকদুর্গার বিগ্রহ চুরি হল। ১৭৪৯ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন ‘তিহারদ্বীপা গড়’ বা জামবনি পরগনার সামন্তরাজা গোপীনাথ সিংহ মত্তগজ এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। প্রাচীন মন্দিরটি জরাজীর্ণ হয়ে যাওয়ায় ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে পাশেই নতুন মন্দির তৈরি হয়। ১৯৬৮ সালে দেবীর আদি মূর্তিটি চুরি যায়। সেই মূর্তিতে সোনার ভাগ ছিল বেশি। পরে তৈরি হয় অষ্টধাতুর মূর্তি। সত্তরের দশকের গোড়ায় সেই মূর্তিও চুরি যায়। তবে সে বার দুষ্কৃতীরা ঘোড়াটি নেয়নি। এর পর অষ্টধাতুর ঘোড়ার উপর প্লাস্টার অফ প্যারিসের মূর্তি গড়া হয়। কিন্তু ১৯৭৭ সালে ঘোড়াসমেত মূর্তিটি ফের চুরি যায়। এর পর দীর্ঘ ১৯ বছর মূর্তি ছাড়াই দেবীর পুজো হয়েছে। ১৯৯৬ সালে অষ্টধাতুর নতুন মূর্তি তৈরি করা হয়। এ বার সেটিই খোওয়া গেল। এই মূর্তিতে পিতলের ভাগই বেশি। বারবার মূর্তি চুরি যাওয়ায় উদ্বিগ্ন মন্দির পরিচালন কমিটি। কমিটির সভাপতি তথা চিল্কিগড় রাজ পরিবারের সদস্য বিজয়েশচন্দ্র ধবলদেব বলেন, “এলাকাবাসীরা চাইছেন মন্দির-সংলগ্ন এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্ব নিক সরকার। মন্দির পরিচালনার জন্য অছি-পরিষদ গঠনের বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে।” চুরির ঘটনা অবশ্য নিত্যপুজোয় ব্যাঘাত ঘটায়নি। ঘট স্থাপন করে সারা হয়েছে দেবীর এ দিনের পুজো। |
|
|
|
|
|