|
|
|
|
ধর্মাবতার, অঙ্কে ৫৪ কেন, শূন্য চাই আমি |
অরুণোদয় ভট্টাচার্য • কলকাতা |
তিনি পেয়েছেন ৫৪। কিন্তু তাঁর দাবি, শূন্য!
পরীক্ষায় সকলেই বেশি নম্বর চায়। প্রত্যাশিত নম্বর না পেলে মামলা ঠুকে দেওয়ার নজিরও রয়েছে ভূরি ভূরি। কিন্তু এ তো একেবারে উলটপুরাণ। পূর্ব মেদিনীপুরের হরিপুর হাইস্কুলের ছাত্রী মালবিকা মাইতি উচ্চ মাধ্যমিকে অঙ্কে পেয়েছেন ৫৪। অথচ তাঁর নিজেরই বক্তব্য, তাঁর প্রাপ্য শুধুই শূন্য। সেই ‘দাবি’ নিয়ে তিনি সোজা দ্বারস্থ হয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের। সেখানে তাঁর আর্জি, তাঁর অঙ্কের খাতা আদালতে আনা হোক এবং সেটি যাচাই করে দেখা হোক। তিনি নিশ্চিত, তাঁর খাতার যথাযথ মূল্যায়ন হয়নি! তিনি শূন্যের বেশি পেতেই পারেন না। |
|
ফি-বছর যাঁরা মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, এমনকী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরে আদালতের দ্বারস্থ হন, তাঁদের সঙ্গে একটা জায়গায় মিল রয়েছে মালবিকার। অন্যদের মতো তিনিও বলছেন, তাঁর সঠিক মূল্যায়ন হয়নি। ঠিক মতো দেখা হয়নি তাঁর খাতা। ব্যস, এইটুকুই। বাকি পুরোটাই তফাত। অন্যদের মতো তিনি বাড়তি নম্বরের দাবি জানাননি। তাঁর চাই শূন্য। ওই ছাত্রীর বক্তব্য, ঠিক ভাবে উত্তরপত্র দেখলে পরীক্ষক অঙ্কে তাঁকে শূন্যের বেশি দিতেই পারতেন না। তাঁর সেই উত্তরপত্রটাও ফের দেখতে চান তিনি। বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদকে নির্দেশ দিয়েছেন, মালবিকার খাতা হাইকোর্টে পেশ করতে হবে।
উচ্চ মাধ্যমিকে অন্যান্য বিষয়ে কত পেয়েছেন মালবিকা?
বাংলায় মালবিকা পেয়েছেন ৬৪, ইংরেজিতে ৬১, রসায়নে ৬০, পদার্থবিদ্যায় ৫৮, জীববিদ্যায় ৫৪। এবং অঙ্কে ৫৪। তা হলে কীসের ভিত্তিতে তিনি বলছেন, মূল্যায়ন ঠিক হয়নি? কেন বলছেন, অঙ্কে তাঁর শূন্যই পাওয়ার কথা?
মালবিকার আইনজীবী গৌতম দে মামলার সওয়ালের সময় বলেন, ওই ছাত্রী পরীক্ষার খাতায় যে ক’টি অঙ্ক কষেছেন, সবই লাল কালি দিয়ে কেটে ‘বাতিল’ বলে লিখে দেন। পরীক্ষার্থী নিজেই যেখানে তাঁর কষা অঙ্কগুলি বাতিল করে দিয়েছেন, সেখানে আদৌ নম্বর পাওয়ার সুযোগ কোথায়! প্রাপ্য তো শূন্যই।
সংসদের পক্ষে আইনজীবী তনয় চক্রবর্তী বলেন, ছাত্রীটির খাতায় ‘বাতিল’ করে দেওয়া অঙ্কগুলিকে বিবেচনায় না আনলে ওই বিষয়ে তিনি পাশ করতে পারতেন না এবং তার ফলে উচ্চ মাধ্যমিকেই তাঁর অকৃতকার্য হয়ে যাওয়ার কথা। তাই লাল কালি দিয়ে কেটে দেওয়ার পরেও পরীক্ষক নম্বর দিয়েছেন। কিন্তু মালবিকা শূন্য চান কেন?
ওই ছাত্রীর কৌঁসুলি গৌতমবাবু হাইকোর্টকে বলেন, যিনি পরীক্ষা দিচ্ছেন, তাঁর যেমন পাশ করার অধিকার আছে, তেমনই ফেল করারও অধিকার রয়েছে। এখানে প্রশ্ন পাশ-ফেলের নয়, যথাযথ মূল্যায়নের। পরে ওই আইনজীবী জানান, মালবিকা কয়েকটি পরীক্ষা দেওয়ার পরেই বুঝতে পারেন, পাশ করে গেলেও তিনি ভাল নম্বর পাবেন না। কম নম্বর পেয়ে পাশ করলে পরবর্তী কালে ভাল কলেজে পড়ার সুযোগ পাবেন না, আবার প্রচলিত বিষয়ের বাইরে কোনও বিষয় নিয়েও পড়তে পারবেন না। এক বার পাশ করে গেলে দ্বিতীয় বার উচ্চ মাধ্যমিকে বসার নিয়ম নেই। সব দিক বিবেচনা করেই মালবিকা উত্তরপত্রে করে ফেলা অঙ্কগুলি কেটে দেন। যাতে তাঁর পরের বার পরীক্ষা দেওয়ার দরজা খোলা থাকে। এবং থাকে ফল ভাল করার সম্ভাবনাও। পরীক্ষা বিষয়ক মামলার ক্ষেত্রে মালবিকার আবেদনটি যে নজিরবিহীন, আইনজীবীরা এক বাক্যে তা স্বীকার করেছেন। ফলে এই মামলার রায়ের ব্যাপারে তাঁরাও কৌতূহলী। বিচারপতি শুক্রবার ওই ছাত্রীর অঙ্কের খাতা তলব করেছেন। |
|
|
|
|
|