|
|
|
|
|
|
দক্ষিণ কলকাতা
অরফ্যানগঞ্জ |
আতঙ্কের বাজার |
দীক্ষা ভুঁইয়া |
চার দিক জল-কাদায় মাখামাখি, যেখানে-সেখানে নোংরা আবর্জনা ছড়িয়ে। তারই মধ্যে খিদিরপুরের অরফ্যানগঞ্জ মাছবাজারে চলছে বিক্রিবাটা। বাজারটিতে স্থায়ী স্টলগুলির অবস্থাও খুব একটা ভাল নয়। সিমেন্ট উঠে গিয়েছে, তার পলেস্তারা চটে বাজারের বিভিন্ন গলির ইট বেরিয়ে রয়েছে। একটু অসাবধান হলেই পা পিছলে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা। ঘুরছে কুকুর। কাক এসে মাথার ওপরের চালে বসে। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, রাজ্য সরকারের অধীন এই বাজারের পরিস্থিতি রীতিমতো শোচনীয় এবং অস্বাস্থ্যকর।
|
|
বাইরে থেকে দেখলেই বোঝা যায়, খিদিরপুর ডায়মন্ড হারবার রোডের পাশের এই মাছ বাজারটির দীর্ঘ দিন কোনও সংস্কার হয়নি। বাজারের ভিতরে রয়েছে ৪২টি স্থায়ী স্টল। স্টলগুলিতে কাঠের বাক্স বোঝাই। তার উপর কুকুর ঘুরে বেড়াচ্ছে। মাছের বাজার হলেও এখানে বেশ কয়েকটি মাংসের দোকানও আছে। জানা গিয়েছে, সরকারি খাতা-কলমে ৪২টি স্থায়ী দোকান থাকলেও সব মিলিয়ে প্রায় আড়াইশো ব্যবসায়ী রয়েছেন বাজারটিতে। ফাঁকা জায়গাগুলিতে প্লাস্টিকের ছাউনি করে তৈরি করা হয়েছে দোকান। যদিও বাজারটিতে চলার রাস্তার সিমেন্ট উঠে গিয়েছে বহু আগেই। চার দিকে ইট বেরিয়ে রয়েছে। তার উপর জল-কাদায় মাখামাখি। একটু অসাবধান হলেই পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা। তার ওপর নোংরা জল, আবর্জনা আর দুর্গন্ধ।
কিন্তু সরকারি বাজারের এমন শোচনীয় অবস্থা কেন? বাজার কি পরিষ্কার হয় না? কয়েক জন খুচরো মাছবিক্রেতা জানালেন, সপ্তাহে দু’-তিন দিন লোক এসে পরিষ্কার করে যায়। কিন্তু নামেই পরিষ্কার! তাঁরা জানান, অধিকাংশ সময়েই জল দাঁড়িয়ে থাকে। তা মাড়িয়েই ক্রেতাদের বাজার করতে হয়। বাজারটি ব্রিটিশ আমলের তৈরি। তার পর থেকে ছাউনির কোনও সংস্কার হয়নি। দোকানের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ফাঁকা জায়গাগুলিতেও প্লাস্টিক টাঙিয়ে অতিরিক্ত দোকান তৈরি হয়েছে। ফলে সূর্যের আলো সকালেও এখানে প্রবেশ করে না। সকালেও বাল্বের আলোতেই ব্যবসা চালাতে হয় ব্যবসায়ীদের। |
|
এক মাছ ব্যবসায়ী বললেন, “বাজার পরিদর্শকের কাছে বহু অভিযোগ করেও কোনও লাভ হয়নি। আর একটু বেশি বৃষ্টি হলেই আমাদের মতো নীচে বসা দোকানদারদের খুব অসুবিধা হয়।” সরকারি বাজার হলেও বাজারটির একটি ব্যবসায়ী সমিতি রয়েছে। যদিও বেশ কিছু ব্যবসায়ীর বক্তব্য, আগে সমিতি থাকলেও বর্তমানে তার কোনও অস্তিত্ব নেই। অর্থাৎ, কোনও বাজার কমিটিই নেই। যদিও অরফ্যানগঞ্জ মাছবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফৈয়াজ আহমেদ খান বললেন, “এখনও ব্যবসায়ী সমিতি রয়েছে। বাজারটির সংস্কার নিয়ে আমরা দু’বার সরকারের কাছে ডেপুটেশন দিয়েছিলাম। তখন কিছুটা কাজ হয়েছিল।” বাজারটি দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসকের তত্ত্বাবধানে রয়েছে বলেও তিনি জানান।
তবে বাজারটি সাফাই করে পুরসভা। পুরসভার ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত বাজারটি। বাজারের সাফাই প্রসঙ্গে ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর প্রণব বিশ্বাস বললেন, “শনি-রবিবার বাদ দিলে সপ্তাহের বাকি ক’টি দিনই বাজারের জন্য নির্দিষ্ট ভ্যাটটি পরিষ্কার করা হয়। তবে ভিতরে ঝাড়ু দেওয়ার কাজ পুরসভা করে না। কারণ, বাজারটি আমাদের নয়। রাজ্য সরকারের। তা ছাড়া, ওদের ব্যবসায়ী সমিতিও রয়েছে।”
দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, “বাজারটি আমাদের তত্ত্বাবধানে। আমাদের কাছে বাজারটির পরিস্থিতি নিয়ে অভিযোগ জমা পড়েছে। তবে বাজারটি সংস্কারের ব্যাপারে কলকাতা পুরসভা নিজে থেকে উদ্যোগী হতে রাজি হয়েছে। আমরা অনুমতিও দিয়েছি।” |
ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য |
|
|
|
|
|