|
|
|
|
|
|
দক্ষিণ কলকাতা
সুরাহা কবে |
ফেল কড়ি, খাও জল |
দীক্ষা ভুঁইয়া |
সাইকেল ভ্যানে জল ভর্তি বড় বড় জার নিয়ে বাইপাস সংলগ্ন সন্তোষপুর এলাকা থেকে রাস্তা পার করে মুকুন্দপুরে চলেছেন মধ্যবয়স্ক এক ভদ্রলোক। কেউ আবার বাজারের ব্যাগে নানা মাপের জলের বোতল নিয়ে সাইকেলে রাস্তা পার হচ্ছেন। এ ছবি প্রতি দিনের। সকাল-বিকেল দু’বেলা বাইপাসের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে পানীয় জল নেওয়ার জন্য আসেন বহু মানুষ। কেউ বাড়ির জন্য, অথবা কারও কাছে এটাই জীবিকা। টাকার বিনিময়ে পানীয় জল সরবরাহ করা। কোনও প্রত্যন্ত এলাকা নয়, এ ছবি খাস কলকাতা পুরসভার ইস্টার্ন বাইপাস সংলগ্ন ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের।
|
 |
ওয়ার্ডটির মধ্য দিয়েই ইস্টার্ন বাইপাস গিয়ে ওয়ার্ডটিকে দু’ভাগে ভাগ করেছে। ফলে ওয়ার্ডের মানচিত্রটি একটু অন্য রকম। ১০৩ নম্বর ওয়ার্ডের লাগোয়া হওয়ায় ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডেরই একটি অংশ তথা সন্তোষপুর জোড়াব্রিজের পর সার্ভে পার্ক অঞ্চলটিতে একটু হলেও পরিশ্রুত পানীয় জল পাওয়া যায়। কিন্তু সেটিও নাকি পুরোপুরি পরিশ্রুত গার্ডেনরিচের জল নয়, মাটির নীচের বোরিং করা জল আর গার্ডেনরিচের মিশ্রিত জল। এমনটাই অভিযোগ বাসিন্দাদের।
আবার এই ওয়ার্ডের বেশ কিছু অঞ্চল, যেমন মুকুন্দপুর, নোনাডাঙার খালপাড় লাগোয়া কিছু অংশ, গড়িয়া স্টেশন লাগোয়া বেশ কিছুটা অঞ্চল, ভগৎ সিংহ কলোনি, রংপাড়া, দাসপাড়া, বিকাশ গুহ কলোনি প্রভৃতি অঞ্চলের ছবিটা অন্য রকম। সেখানে পানীয় জল বলতে ভরসা শুধু নলকূপ। কিন্তু সেই নলকূপের জলে এতটাই আয়রন যে তা মুখে দেওয়া যায় না বলে অভিযোগ দাসপাড়ার গৃহবধূ মালতি মণ্ডলের। তাঁর কথায়: “রোজ ১০ টাকা করে জারভর্তি জল কিনতে হয়, দু’বেলা। নলকূপের জল প্রথম প্রথম ভাল উঠলেও এক বছর পর কলগুলোই খারাপ হয়ে যায়। আর জলে এতটাই আয়রন যে বেশিক্ষণ রাখলে লাল হয়ে যায়। তাই কেনা জলই ভরসা।” |
 |
একই অভিযোগ ভগৎ সিংহ কলোনির বাসিন্দা রঘুবীর সামন্তের। ত্রিশ বছরেরও বেশি এই এলাকায় আছেন। বললেন, “আগে যখন কলকাতা পুরসভার অন্তর্ভুক্ত হয়নি তখন যা অবস্থা ছিল এখনও সেই একই অবস্থা। পার্থক্য শুধু, এলাকাটা পুরসভার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। পরিষেবা বলতে কিছুই নেই।”
১৯৮৫ সালে বাইপাস সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকা কলকাতা পুরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের আওতায় আনা হয়। তার পর থেকেই শহরতলির অঞ্চলগুলিতে জনসংখ্যা আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পেয়েছে। বেড়েছে চাপ। বর্তমানে ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে পঁয়ত্রিশ হাজারের কাছাকাছি। কিন্তু জনবসতির চাপ বাড়লেও পানীয় জলের সরবরাহ নিয়ে সঠিক পরিকল্পনা হয়নি বলে অভিযোগ। ডিপ বোরিং করে তা ট্যাঙ্কে ভরে বিভিন্ন ওয়ার্ডে পাইপের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। আর রয়েছে পুরসভার পক্ষ থেকে বসানো নলকূপ। কিন্তু কোনও জলই নাকি পানযোগ্য নয়। ফলে একমাত্র ভরসা জল সরবরাহকারী ভারী। |
 |
পানীয় জলের যে একান্তই অভাব সেটি স্বীকার করে নিয়েছেন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রুমকি দাস। তিনি বললেন, “আমার ওয়ার্ডে যে জল সরবরাহ হয় তা ডিপ বোরিং করে তোলা জল। সেটি ট্যাঙ্কে ভরে পরে পাম্প করে পাইপলাইনের সাহায্যে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু এটি পানীয় জল নয়। পানীয় জল কিনেই খেতে হয়।” তাঁর অভিযোগ, বাইপাস লাগোয়া অন্যান্য ওয়ার্ড, যেমন, ১০৭, ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডে রোজ পুরসভার পক্ষ থেকে পানীয় জলের ট্যাঙ্ক ঢোকে। কিন্তু ১০৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে সংশ্লিষ্ট বিভাগে জানানো হলে বলা হয়, যেহেতু পাইপলাইন পৌঁছয়নি, তাই জলের ট্যাঙ্ক পাঠানো যাবে না। তাঁর কথায়: “গত বোর্ডে ঠিক করা হয়েছিল, মুকুন্দপুরে পাম্পিং স্টেশন হবে। কিন্তু সেটি বর্তমান বোর্ডে আলোচনার স্তরেই রয়ে গিয়েছে। স্টেশন কবে হবে জানি না।”
১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের জলসঙ্কটের ব্যাপারে কলকাতা পুরসভার ডিরেক্টর জেনারেল (জল সরবরাহ) বিভাস মাইতি বলেন, “ওখানে পাম্পিং স্টেশনের জন্য জায়গা ঠিক করা হয়েছে। জায়গাটি রাজ্য সরকারের।” |
ছবি: পিন্টু মণ্ডল |
|
|
 |
|
|