|
|
|
|
|
|
দক্ষিণ কলকাতা: বেহালা
অবহেলার ক্রীড়াঙ্গন |
পড়ে থাকে শিলা |
স্বপন দাস |
২০০১-এর ৭ জানুয়ারি। দক্ষিণ ২৪ পরগনার একমাত্র ৪০০ মিটার ট্র্যাক সমেত মুচিশা ক্রীড়াঙ্গনের শিলান্যাস করেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী, সাতগাছিয়ার বিধায়ক জ্যোতি বসু। মাঠটি তৈরি হচ্ছিল মুচিশার হরিদাস কৃষি-শিল্প বিদ্যাপীঠের লাগোয়া ১৫ বিঘা জমির ওপর। এই ৪০০ মিটার ট্র্যাক হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি ক্রীড়াঙ্গনেই আছে।
যাঁরা অ্যাথলিট, তাঁদের কাছে অনেকটা স্বপ্নের বাস্তবরূপ হিসেবে দেখা দিয়েছিল এই মাঠটি। পরিকল্পনা ছিল, এত বড় মাঠে ৪০০ মিটার ট্র্যাক-এর সঙ্গে থাকবে একটা ফুটবল মাঠ। লাগোয়া একটা পুকুরকে সংস্কার করে তৈরি হবে সুইমিং পুল। সঙ্গে থাকবে অত্যাধুনিক জিমন্যাসিয়াম। আর আবাসিকদের সাময়িক ভাবে থাকার একটা জায়গা। তৎকালীন ক্রীড়ামন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী ও সাতগাছিয়ায় মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর নির্বাচনী এজেন্ট গোকুল বৈরাগীরা মিলে একটি পরিকল্পনাও করান সল্টলেকের যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের বাস্তুকারদের দিয়ে। খরচ ধরা হয় প্রায় ১ কোটি টাকা।
|
|
১৯৯৮ সালে নেওয়া পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথমে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে পাওয়া ১০ লক্ষ টাকা দিয়ে মাঠটির সংস্কার করা হয়। পরে আরও ২০ লক্ষ টাকায় ৪০০ মিটার ট্র্যাকটি করা হয়। পাশে যুবকল্যাণ দফতরের সহায়তায় গড়ে ওঠে অত্যাধুনিক একটি জিমন্যাসিয়াম। এখানেও খরচ হয় প্রায় ১০ লক্ষ টাকা। এর পর হঠাৎই থমকে যায় সব। সমস্যাও হয় মাঠের পাশে নিকাশি নালা তৈরি করা নিয়ে।
পরে তহবিলও শেষ হয়ে যায়। পরবর্তী কালে এই মাঠ তৈরি ও তার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা হরিদাস কৃষি শিল্প বিদ্যাপীঠ-এর পরিচালন সমিতির উদ্যোগ আর তেমন জোরদার হয়নি বলে অভিযোগ। ফলে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ৪০০ মিটার ট্র্যাক সমেত যে ক্রীড়াঙ্গন ও স্পোর্টস অ্যাকাডেমির সূচনা হয়েছিল, যে মাঠে ২০০৪-এ রাজ্য বিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতাও অনুষ্ঠিত হয়, তা আর বাস্তবে সম্পূর্ণ রূপ পায়নি। বস্তুত, এই ক্রীড়াঙ্গন সম্পর্কে বিশদে কিছুই জানেন না প্রাক্তন ও বর্তমান ক্রীড়ামন্ত্রী যথাক্রমে কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় ও মদন মিত্র। |
|
গোকুল বৈরাগী বলেন, ‘‘আমি আর সুভাষ চক্রবর্তী এই মুচিশা ক্রীড়াঙ্গনকে ঘিরে অনেক কিছু পরিকল্পনা করেছিলাম। পঞ্চায়েত সমিতি, সাংসদ কোটার টাকাও কাজে লাগানো হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী কালে রাজ্য সরকার বা জেলা ক্রীড়া পর্ষদ কেউই আর সেই মতো সাহায্যের হাত বাড়াল না। ফলে বন্ধ হয়ে গেল কাজ। এই মুচিশার ১৫ বিঘা জায়গার ওপর গড়ে ওঠা মাঠটি প্রকৃতির মাঝে ৪০০ মিটার ট্র্যাক সমেত মাঠ। রাজ্যস্তরের বহু অ্যাথলিট এখানে এসে অনুশীলনও করেন। তবুও এই কাজ সম্পূর্ণ হল না।’’
হরিদাস কৃষি-শিল্প বিদ্যাপীঠ-এর তত্ত্বাবধানে এই মাঠ তৈরি হচ্ছিল। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিদ্ধার্থশঙ্কর বৈরাগী বললেন, “আমরা ৪০০ মিটার ট্র্যাকটির কাজ মোটামুটি শেষ করেছি। কিন্তু মধ্যের ফুটবল মাঠটি শেষ করতে পারিনি। নিকাশি নালাটিও পয়সার অভাবে করা সম্ভব হচ্ছে না। যতটুকু অর্থ এসেছিল তা শেষ হওয়ার পর আর আসেনি। নতুন ম্যানেজিং কমিটি আসছে। রাজ্যেও রাজনৈতিক পালাবদল ঘটেছে। আমরা আবার আবেদন নিয়ে যাব।” মুচিশা ক্রীড়াঙ্গন প্রসঙ্গে প্রাক্তন ক্রীড়ামন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “ওই ক্রীড়াঙ্গনটি সম্পর্কে কিছুই জানি না, ফলে কিছু বলতে পারব না।” বর্তমান ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “আমি ওই ক্রীড়াঙ্গন সম্পর্কে বিশদে কিছু জানি না। খোঁজ নিচ্ছি।” |
|
মুচিশা ক্রীড়াঙ্গনের জন্মলগ্ন থেকে জড়িত প্রশিক্ষক জগদীশ দাস। তিনি বলেন, “প্রচুর ছেলেমেয়ে এখানে আসে অনুশীলন করতে। কেননা, এত বড় ট্র্যাক কোথাও নেই। শুনেছিলাম সিন্থেটিক ট্র্যাক বসবে। পরে জানলাম, পরিকল্পনা বাতিল হয়েছে। অনেকের কাছে এটা তাই বড় আঘাত। শহরের কাছাকাছি এই জায়গাটাকে ফুটবল ক্লাবগুলিও আবাসিক শিবির হিসেবে ব্যবহার করতে পারত। কিন্তু তা-ও তারা করছে না। তা হলে কিছুটা উন্নতিও হয়তো হত। কেন বন্ধ হয়ে গেল তা জানি না। বড় ক্ষতি হল।” মাঠটি এখন গরু-ছাগল চরার জায়গা। বড় বড় ঘাস আর কাদা জায়গায় জায়গায়। রক্ষণাবেক্ষণ হয় না। মুচিশার ১৫ বিঘা জমির ওপর দেখা স্বপ্নের ক্রীড়াঙ্গন ধীরে ধীরে মৃত্যুর পথে এগোচ্ছে বলে জানিয়েছেন অনুশীলন করতে আসা ক্রীড়াবিদরা।
|
ছবি: পিন্টু মণ্ডল |
|
|
|
|
|