উত্তর কলকাতা: পাইকপাড়া, ব্যারাকপুর
বেহাল ফেরি |
পার করে কে |
বিতান ভট্টাচার্য |
বহু বছরের পুরনো ফেরিঘাট। প্রতি দিন সকাল থেকে রাত অসংখ্য যাত্রী পারাপার করেন খড়দহের এই ঘাট দিয়ে। ঘাট পেরোলেই রিষড়া। ব্যারাকপুর ও হুগলি এই দুই শিল্পাঞ্চলের সংযোগকারী এই ঘাটের গুরুত্ব বাড়ে বছরে তিন-চার বার, বিভিন্ন উৎসবের সময়। তখন এই ঘাটে ভিড় সামলাতে হিমসিম খেতে হয় পুলিশ ও ঘাটকর্মীদের। অথচ অভিযোগ, এই ঘাট জীর্ণ থেকে জীর্ণতর হচ্ছে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে।
খড়দহের এই ফেরিঘাটের পোশাকি নাম শ্যামসুন্দর ঘাট। ঘাট থেকে গঙ্গার গভীরে নেমে গিয়েছে রেলিংবিহীন কংক্রিটের বিপজ্জনক সঙ্কীর্ণ পথ। সেটাই নাকি জেটি। কংক্রিটের ওই পথের মাঝেই ইস্পাতের তার দিয়ে টানা উঁচু বিদ্যুতের খুঁটি, তার মাথায় সংকেতবাহী লাল আলো লাগানো। সেগুলি অবশ্য জ্বলে না বহু দিন। খুঁটির গা বেয়ে নেমেছে বিদ্যুতের তার। সন্ধ্যা নামলেও বাতি স্তম্ভে লাগানো অধিকাংশ আলোই মাঝে মাঝে জ্বলে না বলে নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ। অন্ধকারে বা বর্ষাকালে যে কোনও সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকলেও ঘাট কর্তৃপক্ষ উদাসীন বলে অভিযোগ। অভিযোগ, উদাসীন দুই শিল্পাঞ্চলের প্রশাসনও। |
|
খড়দহের ফেরিঘাট পেরিয়ে প্রতি দিন সকালে কর্মসূত্রে রিষড়া যান পাতুলিয়ার বাসিন্দা অম্বিকা সাহা। অম্বিকাবাবু বলেন, “সংস্কারের অভাবেই ওই ঘাটের ফেরি সার্ভিসের বেহাল অবস্থা। কোনও ছাউনি না থাকায় বর্ষায় নৌকোয় উঠতে গেলে কাকভেজা হতে হয়। তার উপর মোটর-চালিত নৌকোগুলিও পুরনো। সেগুলিরও দৈন্য প্রকট। এ নিয়ে কিছু বলতে গেলে ঘাটের কর্মীদের কেউ কর্ণপাত করেন না। ইজারাদারকে তো কখনও পাওয়া যায় না।”
বৃষ্টিতে কংক্রিটের ওই সরু পথ পিছল হওয়ায় খুব সাবধানে পা ফেলে এগোতে হয়। গঙ্গার ওপারে রিষড়া ঘাটে লোহার জেটি থাকলেও এ পারে তেমন কোনও জেটি না থাকায় নৌকোয় ওঠা-নামা করার সময় কখনও কখনও যাত্রীদের কাদাও মাড়াতে হয়। খড়দহ ফেরিঘাটের কর্মীরা জানান, কংক্রিটের ওই সরু পথটিই জেটি হিসাবে ব্যবহার করা হয়। গঙ্গায় জোয়ার-ভাটা অনুযায়ী নৌকো বাঁধার জন্য কোনও রেলিং লাগানো যায়নি। পাশাপাশি গঙ্গার নাব্যতা কমে যাওয়ায় এই জেটি আরও পঞ্চাশ মিটার বাড়ানোর দাবি করেন ফেরি নৌকোর মাঝিরা। এখন এই ফেরি পারাপারে ব্যবহার করা হয় মোট চারটি মোটরচালিত নৌকো। তিনটিই বেশ পুরনো। |
|
ন’জন মাঝি ভোর ৫টা ২০মিনিট থেকে রাত পৌনে ১১টা পর্যন্ত যাত্রী পারাপার করেন। মাঝিরা জানান, জেটি সমস্যার জন্য খুব সাবধানে নৌকো পারে ভেড়াতে হয়। ভাটায় জল কমে গেলে পরপর দুটি নৌকো ঠেকিয়ে যাত্রীদের নৌকোতে তুলতে হয়। একটু বেসামাল হলেই বিপদ ঘটতে পারে। তার উপর ফেরি চলাচলের পথেই বড় জাল ফেলে মাছ ধরা হয়। ভুটভুটির প্রপেলারে সেই জাল আটকে মোটর বন্ধ হয়ে যায়। জোয়ারের সময় হলে মাঝ নদীতে যাত্রী বোঝাই নৌকোও টালমাটাল হয়।
খড়দহ পুরসভার উপ-পুরপ্রধান তৃণমূলের শ্যামল দেবের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডেই অবস্থিত এই ফেরি ঘাটটি। শ্যামলবাবু বলেন, “খড়দহের গুরুত্বপূর্ণ ওই ফেরিঘাটটি দিয়ে বহু মানুষ রোজ পারাপার করেন। প্রচুর টাকা লেভি আদায় হয়। কিন্তু ইজারাদার সংস্কার করেন না। পুরসভাকে গত ১৫ বছরে টাকা দেওয়া তো দূরের কথা, বার বার ডাকা সত্ত্বেও যোগাযোগ করেননি। আমরাই কিছু দিন আগে চার দিনের জন্য এই ঘাটের টিকিট বিক্রির টাকা আটকে রেখে একটা নতুন নৌকো কিনিয়েছি। নইলে পুরনো ঝরঝরে নৌকোয় দুর্ঘটনা ঘটে যে কোনও সময় যাত্রীদের প্রাণহানি হতে পারত। এখনও মাঝে মাঝেই দেখি সন্ধ্যা থেকে অন্ধকারে ডুবে যায় ঘাট। পুরসভাকে টাকা না দিলে পুরসভাই বা কেন সংস্কার করবে?” |
|
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সন্ধ্যা থেকে অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে ওই ঘাটের কাছে ফাঁকা জায়গায় মাঝে মাঝেই অসামাজিক কার্যকলাপ চলে। ঘাটের কর্মীরাই প্রতিবাদ করেন কখনও কখনও। ফেরিঘাটের যাত্রীশেড লাগোয়া একটি শৌচাগার থাকলেও তা বন্ধই থাকে। ‘মান্থলি’ নিয়েও নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ বিস্তর। নিত্যযাত্রী হওয়া সত্ত্বেও অনেককেই মান্থলি দেওয়া হয় না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন উপ পুরপ্রধানও। যদিও ঘাট কর্মীদের দাবি, সবটাই হয় ইজারাদারের নির্দেশে। তবে ছাত্র-ছাত্রীদের মান্থলি সাত দিনের মধ্যেই দেওয়া হয় বলে তাঁদের দাবি। এই ফেরিঘাটের ইজারাদার অসীম ভট্টাচার্যের সঙ্গে বারবার টেলিফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। |
|