ক্লিক অর প্রেস
হ্যাকিংয়ের দুনিয়া
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কি শুরু হয়ে গিয়েছে? তথ্যপ্রযুক্তির জগতের অনেকে মনে করেন, হ্যা।ঁ কোথায় চলছে এই যুদ্ধ? বিশেষজ্ঞদের মতে, সাইবার দুনিয়ায়। কারা এই যুদ্ধের সৈনিক? হ্যাকাররা।
এই কিছু দিন আগেই আমেরিকার কিছু উচ্চপদস্থ সরকারি অফিসারের গুগ্ল অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়। চুরি হয় গোপন তথ্য। সন্দেহ, এই কীর্তি চিনের কিছু হ্যাকারের। পরিস্থিতি এমন হয়েছিল যে আমেরিকার বিদেশ সচিব হিলারি ক্লিন্টনও হস্তক্ষেপ করেন।
সংবাদমাধ্যমে নজর রাখলে বেশ কিছু দিন যাবৎ আমেরিকা-চিন বা ভারত-পাকিস্তানের মতো দেশের হ্যাকারদের মধ্যে এ ধরনের লড়াই চোখে পড়বে। সামরিক থেকে রাজনৈতিক নানা বিষয়ে হ্যাকারদের আগ্রহ। অনেক সময়ে বদনাম ছড়ানোও হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কিছু ক্ষেত্রে সরকারি মদতও রয়েছে।
আগেই বলেছি, অধ্যবসায় ও মেধা সাধারণ হ্যাকারদের এই দু’টি গুণ থাকেই। তবে দীর্ঘ ক্ষণ কম্পিউটার নিয়ে কাটানোর কিছু কুফলও রয়েছে। যেমন, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা। আত্মীয় ও বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ কমে যায়। বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করেন, এর থেকে হ্যাকারদের ক্ষতিকারক কাজ করার প্রবণতা বাড়ে। যদিও এ ধরনের হ্যাকারের সংখ্যা কম।
হ্যাকারদের নিজেদের মধ্যে ভালই যোগাযোগ থাকে। ইন্টারনেটের সর্বজনীন প্রচার ও প্রসারের আগে তাঁরা বুলেটিন বোর্ড ব্যবস্থার মাধ্যমে যোগাযোগ রাখতেন। নিজের কম্পিউটারে তাঁরা বুলেটিন বোর্ড হোস্ট (বিবিএস) করতেন। সেখানে তাঁর অনুমতিতে ডায়াল করে ছোট বার্তা লিখে যাওয়া, নানা খেলা করা, তথ্য আদান-প্রদান ও প্রোগ্রাম ডাউনলোড করা যেত। যতই হ্যাকারদের মধ্যে যোগাযোগ বেড়েছে, ততই তথ্যের আদান-প্রদান বেড়েছে।
শুধু তথ্যের আদান-প্রদান নয়, নিজেদের সাফল্য জাহির করার জন্যই অনেকে বিবিএস ব্যবহার করতেন। অনেক সময়ে আক্রান্তের ডেটাবেসের নানা তথ্য দিয়ে নিজেদের সাফল্যের প্রমাণও রেখে যেতেন। ৯০-এর দশক থেকেই প্রশাসনের মধ্যে হ্যাকারদের সম্পর্কে ভয় ছড়িয়ে পড়ে। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হ্যাকারদের নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
হ্যাকারদের নিজস্ব ওয়েবসাইট ও জার্নাল রয়েছে। ওয়েবসাইটে হ্যাকিং-এর প্রশিক্ষণ ‘লাইভ’ দেখানো হয়। সেখানে হ্যাকারদের দক্ষতা প্রমাণের জন্য বিভিন্ন প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয়।
হ্যাকারদের কাজ কম্পিউটার কোড নিয়ে। সবাই যে কোড লেখেন তা নয়, অনেকে ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোডও করে নেন। এই ধরনের কোডের সংখ্যা অনেক। বিভিন্ন নেটওয়ার্ক ও কম্পিউটারে হানা দিতে তাঁরা এই সব কোড ব্যবহার করেন। কী ভাবে কোনও ব্যবস্থা কাজ করছে জানতে পারলে দক্ষ হ্যাকাররা নিজের মতো তা ব্যবহার করতে পারেন। নানা ভাবে এই কাজ করা যায়।
লগ কিস্ট্রোকস: কিছু প্রোগ্রাম কি-বোর্ডে কোন ‘কি’ চাপা হচ্ছে তা হ্যাকারদের জানিয়ে দিতে পারে। হ্যাকাররা এই ধরনের প্রোগ্রাম কোনও কম্পিউটারে ইনস্টল করে ব্যবহারকারীর সমস্ত কাজের হদিশ পেয়ে যান। ফলে পাসওয়ার্ড থেকে ব্যক্তিগত তথ্য সবই তাঁদের কাছে চলে যায়।
হ্যাক পাসওয়ার্ড: হ্যাকারদের আর একটি কাজ পাসওয়ার্ড হ্যাক করা। নানা ভাবে পাসওয়ার্ড হ্যাক করা যায়। যেমন, অনেক সময় বার বার নানা পাসওয়ার্ড দিয়ে ঠিক পাসওয়ার্ড খুঁজে বার করা হয়। একে ‘ব্রুট ফোর্স’ বলে। কিছু প্রোগ্রাম আছে যা পাসওয়ার্ডের জায়গায় নানা বহুল ব্যবহৃত পাসওয়ার্ড বসাতে থাকে। এই পদ্ধতিকে ‘ডিকশনারি অ্যাটাক’ বলে। পাসওয়ার্ড বার করতে অনেক সময়ে অ্যালগরিদম-ও ব্যবহার করা হয়।
ভাইরাস ছড়ানো: অনেক সময়ে হ্যাকাররা নতুন ভাইরাস তৈরি করে ইমেল, ইনস্ট্যান্ট মেসেজ, সাধারণ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। ভাইরাস থেকে কী ক্ষতি হতে পারে তা আর বলতে হবে না।
ব্যাকডোর অ্যাকসেস: অনেক হ্যাকার নানা প্রোগ্রামের মাধ্যমে নেটওয়ার্কের ভিতরে ঢুকে পড়েন। ইন্টারনেটের প্রথম যুগে, যখন সুরক্ষা কম ছিল, তখন হ্যাকাররা খুব সহজে নেটওয়ার্কে ঢুকে পড়তে পারতেন। এখন ব্যাপারটি আপেক্ষাকৃত কঠিন। বিভিন্ন নেটওয়ার্কে ঢোকার জন্য হ্যাকাররা ‘ট্রোজন হর্স’ প্রোগ্রাম ব্যবহার করেন।
জম্বি কম্পিউটার: হ্যাকাররা অনেক সময় অন্যের কম্পিউটার ব্যবহার করে অনেক জায়গায় স্প্যাম মেল পাঠান বা ‘ডিস্ট্রিবিউটর ডিনায়েল অফ সার্ভিস অ্যাটাক’ করেন। নিজের অজান্তেই কোনও ব্যবহারকারী হ্যাকারদের প্রোগ্রামটি চালিয়ে ফেললে তাঁর কম্পিউটার হ্যাকারের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। তখন সেই কম্পিউটার ব্যবহার করে হ্যাকাররা নানা ধরনের অপরাধমূলক কাজ করতে পারেন।
ই-মেল দেখা: হ্যাকাররা ই-মেল দেখা ও পড়ার জন্যও কোড তৈরি করেন। এই ধরনের কোডের সাহায্যে অনেকটা ফোনে আড়ি পাতার মতো ই-মেলেও আড়ি পাতা যায়। তবে এখন বেশির ভাগ ই-মেল এনক্রিপটেড থাকে। ফলে হ্যাকারদের পক্ষেও তা পড়া কঠিন।

কম্পিউটার সংক্রান্ত আপনার প্রশ্ন পাঠান:
-এ
সাবজেক্ট লাইনে লিখুন abp kolkata
Previous Story

Kolkata

Next Item




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.