|
|
|
|
|
|
চেনা অচেনা |
কমলা লাইব্রেরি |
 |
উৎসাহের শতবর্ষ
বিশ্বরূপ মুখোপাধ্যায় |
|
জুন ১৯১১। বেলেঘাটার পামারবাজারে উৎসাহী কিছু যুবক ভাড়া করা একটি ছোট্ট ঘরে সূচনা করলেন একটি গ্রন্থাগারের। সেই তীব্র স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় পল্লিবাসী ওই যুবকদের চোখে স্বপ্ন, একটি পরিপূর্ণ গ্রন্থাগার গড়ে তোলা। যুবকদের দলে ছিলেন রায় মনমোহন চক্রবর্তী, হরেন্দ্রনাথ রায়, অপূর্বকৃষ্ণ দে, প্রমথনাথ চন্দ্র প্রমুখ।
ওই যুবকদের উদ্যোগে প্রাথমিক ভাবে সংগৃহীত ৭০১টি বইয়ের মধ্যে ৩৪০টি দান করেছিলেন দ্বারিকনাথ চক্রবর্তী। চাঁদাও তোলা হয়েছিল। সংগৃহীত চাঁদার ২১২ টাকা ১২ পয়সার মধ্যে ১২৫ টাকা দিয়েছিলেন স্থানীয় জমিদার দেবেন্দ্রনাথ সরকার। |
 |
অতীতের ছবি |
এ ছাড়া চেয়ার, টেবিল ও অন্যান্য আসবাব দিয়ে সাহায্য করেছিলেন পল্লিবাসীদের অনেকেই। ১৯২৩-২৪ সাল নাগাদ পামারবাজার ও দেবেন্দ্রচন্দ্র দে রোডের সংযোগস্থলে কলকাতা কর্পোরেশন থেকে দীর্ঘমেয়াদী লিজে ৪ কাঠা ২৫ বর্গ ফুট জমি মিলল। ১৯২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর কলকাতা কর্পোরেশনের প্রথম বে-সরকারি ভারতীয় চেয়ারম্যান এস এন মল্লিক বর্তমান গ্রন্থাগার ভবনের (যার পুরো নাম নর্থ এন্টালি কমলা লাইব্রেরি) ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯২৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর স্যর বদ্রিনাথ গোয়েন্কা, এম এল সি, ভবনের দ্বারোদ্ঘাটন করেন। ভবনটি তৈরি করতে ৫৩৩৩ টাকা খরচ হয়েছিল, যা মূলত সংগৃহীত হয়েছিল শহরের বিশিষ্ট মানুষজনের দান থেকে। |
 |
এই সব পুরনো কথা জানা গেল গ্রন্থাগারিক শ্রীমতী প্রীতিলতা সেনগুপ্ত ও পরিচালন কমিটির সম্পাদক বৈদ্যনাথ দে’র সঙ্গে আলাপচারিতায়। বৈদ্যনাথবাবু বলছিলেন, গত ২৫ জুন তাঁরা গ্রন্থাগারের শতবার্ষিকী অনুষ্ঠানের সূচনা করেছেন। আগামী ২০ অগস্ট ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হলে অনুষ্ঠান রয়েছে। তিনি বললেন, “গ্রন্থাগারটি রাজ্য সরকারের প্রাথমিক গ্রন্থাগারের স্বীকৃতি ও মর্যাদা পেয়েছে। যার ফলে প্রতি বছর কিছু অনুদান মেলে। ওই টাকা দিয়ে গ্রন্থাগারিকের বেতন ও জরুরি কিছু খরচ মেটানো যায়। যদিও সেটা প্রয়োজনের তুলনায় খুব সামান্য।”
গ্রন্থাগার ভবনটি পুরোটাই একটি বিশাল হলঘর। চার পাশে বইয়ে সাজানো আলমারি। দু’পাশে বই, কাগজ, ম্যাগাজিন পড়ার ব্যবস্থা। সদস্য সংখ্যা এখন ১৬০। |
 |
শিশু বিভাগে ১৮। শিশু বিভাগে কোনও চাঁদা লাগে না। বাকিদের চাঁদা মাসে ২ টাকা। বই নেওয়ার জন্য জমা বাবদ ২৫ টাকা রাখতে হয়। বইয়ের সংখ্যা ১১,২৫০। তার মধ্যে ইংরেজি বইয়ের সংখ্যা ২০০০। বাংলা-ইংরেজি দু’ভাষাতেই প্রচুর রেফারেন্স বই এই গ্রন্থাগারের সম্পদ। গ্রন্থাগার খোলা থাকে সোম থেকে শনি দুপুর ১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। দ্বিতীয় ও চতুর্থ শনিবার বন্ধ থাকে। বছরে বই কেনা হয় ১০/১১ হাজার টাকার মতো এবং সেটা সাধ্য অনুযায়ী। রামমোহন ফাউন্ডেশন থেকে প্রতি বছরই কিছু বই পাওয়া যায়। বৈদ্যনাথবাবু বললেন, “সদস্য ধরে রাখতে এবং তরুণদের গ্রন্থাগারের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে রামমোহন ফাউন্ডেশনের পৃষ্ঠপোষকতায় একটি কম্পিউটার সচেতনতা কেন্দ্র গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে।” তিনি জানালেন, তাঁদের আরও লক্ষ্য, গ্রন্থাগার ভবনটিকে কেন্দ্র করে একটি আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তোলা। |
ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য |
|
|
 |
|
|