|
|
|
|
‘গ্রেগ চ্যাপেল তেতো ওষুধ কিন্তু অসুখের
সময় তেতো ওষুধ খেয়েই শরীর সেরেছিল’ |
গৌতম ভট্টাচার্য • লন্ডন |
বক্তার নাম মার্টিন ক্রো। আধুনিক চিন্তামনস্ক ক্রিকেটারদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয়। আপাতত এমসিসি ক্রিকেট কমিটির সবচেয়ে প্রভাবশালী মস্তিষ্ক। সম্প্রতি কামব্যাক করেছেন ক্রিকেটে। বেশ অভাবিত ভাবেই। লর্ডস টেস্টের প্রথম দিন প্যারিস উড়ে গেলেন ক্রো। তার আগে লংরুমের ঠিক উল্টো দিকের ছোট ঘরটায় বসে আনন্দবাজারকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়ে গেলেন।
প্রশ্ন: ক্রিকেট সার্কিটে অনেকে আপনাকে ক্রিকেট বৈজ্ঞানিক বলা শুরু করেছে। অধুনা আপনি উঠে পড়ে লেগেছেন রাতের টেস্ট ক্রিকেট চালু করতে। সেটা খেলা হবে গোলাপি বলে।
মার্টিন: হ্যাঁ, এটা আমার স্বপ্ন বলতে পারেন। গোলাপি বল নিয়ে দ্রাবিড় তো আমাদের ফিডব্যাকও দিল। বলল মাঝখানে গোধূলির সময়টুকু বল দেখতে অসুবিধে হচ্ছে। তো এই সময়টা নাহয় আমরা ডিনার ব্রেক করে নেব।
প্র: অফস্পিনার দীপক পটেলকে দিয়ে বোলিং ওপেন করিয়ে একটা অভিনবত্ব এনেছিলেন আপনি বিশ্বক্রিকেটে, যা আজও অনুসরণ হয়। এর পর রাতের ক্রিকেট। মাঝে কিছু আছে?
মার্টিন: কেন, ডি আর এস পদ্ধতি! ডি আর এসের আইডিয়াটা তো আমারই।
প্র: হঠাৎ কোথা থেকে এটা মাথায় এল?
মার্টিন: নিউজিল্যান্ড টিভিতে রাগবির আমি এক্সিকিউটিভ প্রোডিউসার। রাগবি নিয়ে নানা অনুষ্ঠান, নানান চিন্তাভাবনা করার ফাঁকেই আইডিয়াটা প্রথম মাথায় আসে। জানেনই তো, রাগবি আমাদের দেশের পয়লা নম্বর খেলা।
প্র: সম্প্রতি নিউজিল্যান্ড থেকে সংবাদসংস্থা একটা খবর করেছিল। তার পর আর কোনও সমর্থন আসেনি।
মার্টিন: কী খবর?
প্র: আইপিএলের সময় বের হয় আপনি নাকি এই ৪৯ বছর বয়সে ক্রিকেটে আবার কামব্যাক করছেন। আর আপনার একটা মন্তব্য সেখানে ছিল, “সৌরভ যদি এখনও ক্রিকেট খেলতে পারে, তা হলে আমিও পারি।” সত্যি, খবর এবং মন্তব্যটা?
মার্টিন: সত্যি। তবে সৌরভ সম্পর্কে কথাটা ওকে ছোট করার জন্য বলা নয়। বলতে পারেন, ওর উদাহরণটা আমায় উদ্বুদ্ধ করেছে।
প্র: হঠাৎ কামব্যাক কেন?
মার্টিন: আমার ফিটনেসটা খুব নেমে যাচ্ছিল। একটা উপায় বার করার ছিল যাতে নিজেকে নিজেই ধাক্কা দিতে পারি। ঠিক করলাম আমার ক্লাব টিমের হয়ে খেলা শুরু করব।
প্র: রান পাচ্ছেন?
মার্টিন: নভেম্বর থেকে খেলা। এখন তৈরি হচ্ছি। যদি রান পাই অকল্যান্ডের হয়ে হয়তো ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেট খেলব।
প্র: আইপিএল খেলবেন?
মার্টিন: না, বড়জোর ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেট। তার বেশি যাওয়ার প্রশ্ন নেই।
প্র: ভারত যে এখন বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর, এটাকে কী ভাবে দেখেন?
মার্টিন: ওদের প্রাপ্য সম্মান। টিমটা খুব ভাল গুছিয়েছে। তবে একটা কথা বলি, এই যে ভারত আজ চুড়োয়, এর পিছনে গ্রেগ চ্যাপেলের যথেষ্ট কৃতিত্ব আছে।
প্র: কী বলছেন! আপনি জানেন গ্রেগ নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে কী পরিমাণ অসন্তোষ!
মার্টিন: আমি জানি (হাসি) এই কথাটা বলার জন্য ভারতে দ্রুত আমার কিছু শত্রু তৈরি হয়ে যাবে। কিন্তু তাতে সত্যিটা আটকায় না। গ্রেগ ছিল একটা তেতো ওষুধ যা কারও ভাল লাগার কথা নয়। অথচ অসুস্থতার সময় এই তেতো ওষুধটা না খেলে আপনার শরীর সারবে না।
প্র: অসুখ বলতে?
মার্টিন: সৌরভ যেমন। ওর ক্রিকেট কোথাও যাচ্ছিল না। এমন একটা স্টেজ ছিল যখন হয় খেলা বেটার করতে হবে। নয়তো সরে পড়তে হবে। গ্রেগ সেই ধাক্কাটাই দিয়েছিল। এই ভাষাটা আমি বুঝি। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে আমরা এই ভাষাতেই কথা বলি। ভারতীয় প্লেয়ারদের বুঝতে অসুবিধে হওয়ার কারণ সহজবোধ্য। কিন্তু গ্রেগ নিয়ে যখন সরগরম চলছিল, আমি নিউজিল্যান্ডে বসে ভাবছিলাম, আমি ধরতে পারছি ভাষাটা। আমার খুব পরিচিত। সেই তেতো, বিচ্ছিরি ওষুধটা। কিন্তু স্বাস্থ্যের পক্ষে খুব উপকারী।
প্র: ধোনির নেতৃত্ব নিয়ে কী বলবেন? কী ভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
মার্টিন: সোনালি স্পর্শ আছে ওর। যা ধরে তা-ই যেন চকচক করছে। জাদুটোনা।
প্র: না না, ক্রিকেটীয় ব্যাখ্যা চাইছি।
মার্টিন: ক্রিকেটীয় ব্যাখ্যা হল, আসল কাজটা করে দিয়ে গিয়েছে সৌরভ। ইন্ডিয়ান টিমে আগুনে ভাষাটা ও-ই এনেছে। ব্যাপারটা সৌরভ থেকে ঘুরেছে। ধোনি হল উত্তরাধিকার।
প্র: আইসিসি-র স্বপ্নের দল?
মার্টিন: হাঃ। তামাশা বললেও কম বলা হয়।
প্র: কী করা উচিত ছিল?
মার্টিন: শতকরা পঞ্চাশ ভাগ নির্বাচিত প্যানেল। বাকি পঞ্চাশ ইন্টারনেট ভোটিং।
প্র: আপনার বাছাই টিম কী হবে?
মার্টিন: গাওস্কর, হব্স, ব্র্যাডম্যান, সচিন, ভিভ, সোবার্স, গিলক্রিস্ট, ওয়ার্ন, মার্শাল, লিলি, সিডনি বার্নস।
প্র: আক্রম নেই।
মার্টিন: কী করে বাদ দেবেন সিডনি বার্নসকে? ক্রিকেটটা তো একশো চৌত্রিশ বছর ধরে খেলা হচ্ছে। পুরনো কীর্তিও তো মনে রাখতে হবে। লোকটার উইকেটপিছু গড় ১৬। বিশ্বের সর্বকালের সেরা। তাকে বাদ দেব কী করে? |
|
|
|
|
|