কেপি-র ডাবল সেঞ্চুরির সামনে গ্লাভস খুলতে হল ধোনিকে
মাইকেল ভনের টুইটটা সকাল সকাল দেখে অনেকেরই খুব আশ্চর্য লেগেছিল: আজ ধোনি বল করবে, দ্রাবিড় কিপ করবে।
লর্ডস প্রেসবক্সে আধখানা তলা উঠলেই ভন-কে পাওয়া যাবে। প্রাক্তন ইংল্যান্ড অধিনায়ককে জিজ্ঞেসও করে নেওয়া যায়, এমন বিদঘুটে সম্ভাবনার কথা হঠাৎ তাঁর মাথায় কোথা থেকে উঁকি দিল?
যাক গে, জিজ্ঞেস না করেই লর্ডস প্রেসবক্সের গরিষ্ঠ অংশ একমত হয়ে পড়ল যে, মর্মান্তিক ঠাট্টা ছাড়া কিছু নয়। স্রেফ কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে ছড়িয়ে দেওয়া। প্রথম দিন পেস বোলিং অনুকূল পরিবেশ হাতছাড়া করে একটু অস্বস্তিতে আছে ভারত। তার ওপর জাহিরের লেগেছে। ভনের কাছে খেলার আগে মাঠে ঢোকার পাস আছে। নিশ্চয়ই জেনে গিয়েছেন জাহিরকে প্রথম ইনিংসে আর পাওয়া যাবে না। তাই মশলা মাখিয়ে নিজের টুইপি বন্ধুদের কাছে ছেড়ে দিলেন।
আর ঠাট্টা তো এমনিতেও চলছিল। জাহিরের চোট আরও বেড়েছে। এ দিন বোথামও লিখে দিয়েছেন, ভারত সিরিজ হারছে। তারুণ্যে ভরপুর ইংল্যান্ডই হল প্রকৃত বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। ভন সেই তালিকাতেই বোঝা গেল নতুন নাম।
সেঞ্চুরির পর কেভিন পিটারসেন।
সত্যি সত্যি যখন ৭৮তম ওভারে কিপিং গ্লাভসটা দ্রাবিড়ের জন্য খুলে বল করতে এলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, সবাই হাঁ হয়ে গেল। ধোনি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এক বার বল করেছিলেন। বার তিনেক টেস্ট ম্যাচেও বল করেছেন। কিন্তু সেগুলো ম্যাচের এমন সিরিয়াস অবস্থায় নয়। আর এটা তো টেস্ট ম্যাচের প্রথম ইনিংসে! লয়েডের সেই সোনার চার পেসারের অন্যতম কলিন ক্রফট তো রীতিমতো গর্জে উঠলেন, “হচ্ছেটা কী! লর্ডস টেস্ট ম্যাচে ধোনি বল করছে। আমায় নেবে ভারত? আমি এখনও এই ছেলেখেলার চেয়ে বেটার করব।”
প্রথমে মনে হয়েছিল ধোনি বোধহয় দ্বিতীয় নতুন বল নেওয়ার আগে গ্যাপের দু’ওভার ভরাট করবেন। তা নয়। দু’দফায় ৮ ওভার বল করলেন। রাহুল দ্রাবিড় কিপ করলেন ১৬ ওভার। এক-এক সময় তাজ্জব লাগছিল। সেই সময়টা ফিরে এল নাকি, যখন গাওস্করকে দিয়ে বোলিং ওপেন করানো হত। যখন প্রথম ওভার আবিদ আলি করার পরেই ভারত অধিনায়ক নতুন বলটাও গড়িয়ে দিতেন উল্টো দিকের পেসারকে। যাতে ঘষা খেতে খেতে পালিশটা উঠতে থাকে। স্পিনারের বল গ্রিপ করতে সুবিধে হয়।
ক্রফট যে লাউঞ্জে দাঁড়িয়ে চিৎকার করছিলেন, “বিশ্বচ্যাম্পিয়ন মানে শুধু ব্যাটিংয়ে এক নম্বর নয়। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন মানে একটা লড়ুয়ে মনোভাবও,” সেখানে একটু আগেই প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক বসেছিলেন। ক্রফটের সঙ্গে তাঁর বোধহয় অল্পের জন্য দেখা হল না। কিন্তু তিনি ধোনির ছকে বিহ্বল হচ্ছেন না। “উপায় ছিল না ওর কিছু। ছিয়ানব্বই থেকে ইন্ডিয়ান টিমে ইংল্যান্ডে থার্ড সিমারের কাজ করে এসেছি আমি। এখন ওদের লোক কোথায়?” বললেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। কোথাও যেন সেই অভিমান আর বঞ্চনার চোঁয়া ঢেকুর।
সৌরভের মনের আকাশ এই ব্যথার জায়গাগুলো উঠে এলে আজও দ্রুত মেঘলা হয়ে পড়ে। লন্ডনের আবহাওয়া কিন্তু সকাল থেকেই সূর্যালোকিত। অ্যান্ড্রু স্ট্রসদের আকাশও তাই। ইশান্ত শর্মার বোলিং এত ধারহীন থাকায় ভারতীয় আক্রমণ ক্রমশ অনূর্ধ্ব উনিশ স্তরে নেমে আসছিল। ইংল্যান্ড শুরুর দিকটা কালকের মতোই মন্থর। কেভিন পিটারসেনকে দেখে বোঝা যাচ্ছিল না আধুনিক যুগে নিয়মিত যে ভিভের সঙ্গে তাঁর তুলনা হয়। সম্ভবত টিম স্ট্র্যাটেজি ছিল, যত পারো ব্যাট করো। ভারতকে আগে ম্যাচ থেকে পুরো হটিয়ে দাও। তার পর বাকি তিন দিন ওদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ো।
পিটারসেন ওরফে কেপি এমনিতে সচিনের খুব ঘনিষ্ঠ। মাঝে রান পাচ্ছিলেন না বলে সচিনের টিপসও চেয়েছিলেন। এ দিন লর্ডসে তাঁর পাঁচ নম্বর এবং টেস্ট জীবনের ১৮তম সেঞ্চুরি পূর্ণ করার পর অবশ্য সচিনকে হাততালি দিতে দেখলাম না। কাউকেই খুব একটা দেখলাম না। অসীম বিরক্তি বোধহয় সবার ওপর কমবেশি চেপে বসেছে এই পিচে টস জেতার সুযোগ নেওয়া গেল না!

পাঁচ উইকেট নিয়ে প্রবীণ কুমার

বোলার ধোনি। শুক্রবার লর্ডসে।
প্রবীণ কুমার নার্সারি এন্ড থেকে দু’দফায় মোটামুটি টেস্ট ম্যাচ-সভ্য সুইং বোলিং করছিলেন। ইংল্যান্ডের কোনও কোনও সাংবাদিক ইংরেজ ড্রেসিংরুমে কালকের খেলা শেষে বলেছে, এই ছেলেটা হল টিপিক্যাল ব্র্যাডফোর্ড লিগ বোলার। পেসার হয়েও যার বল পৌঁছবে না। ২৩ ওভার বল করবে। চারটে উইকেট নিয়ে বসবে। পাঁচ পিন্ট বিয়ার শেষ করে বাড়ি যাবে। লর্ডসে পাঁচ উইকেটে বোঝা গেল আর যা-ই হোক, ব্র্যাডফোর্ড লিগ নয়। কিন্তু এত সময়ের ব্যবধানে সেগুলো এল যে চাপটা তৈরি হতে পারল না। ইংল্যান্ড সব সময়ই থেকে গেল স্টিয়ারিংটা হাতে নিয়ে।
জিওফ্রে বয়কটের ভাষায় পরম সৌহার্দ্যের কাফেটেরিয়া বোলিং। কাফে-তে রাখা রয়েছে। বিনা পয়সায় যত খুশি খাও-দাও। এমন আতুপুতু বোলিংয়ের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ড যে নিজস্ব স্কোরিং রেট এতখানি নামিয়ে রেখেছিল তার জন্য না পরে আফশোস করে। পিটারসেনের ডাবল সেঞ্চুরি হতেই স্ট্রস ডিক্লেয়ার করে দিলেন। তাঁর টিমের চারটে সেঞ্চুরি পার্টনারশিপ অথচ স্কোরিং রেট চার-এও ওঠেনি।
বলতে ভুলে গিয়েছি চা বিরতি নাগাদ দেখা হতে মাইকেল ভন জানালেন, তাঁর টুইটটা মোটেও ঠাট্টা ছিল না। হিসেব করেই লেখা। ধোনিকে পরিস্থিতি বিচারে তৃতীয় পেসার হতেই হত। কম্বিনেশনের বিপন্নতা সিরিজের দ্বিতীয় দিনেই ধরা পড়ে গেল। ভারত দাবি করছে দ্বিতীয় ইনিংসে জাহির বল করবেন। প্রবল বিজ্ঞাপিতভাবে তাঁকে মাঠের মধ্যে দিয়ে জিমেও পাঠানো হল। কিন্তু মনে হচ্ছে সেটা বিপক্ষের ওপর হাল্কা চাপ রাখার জন্য। সাধারণ ধারণা, হ্যামস্ট্রিংয়ে সত্যি যদি লেগে থাকে, দ্বিতীয় ইনিংসে কেবল গচ্ছা নয়। নটিংহ্যামের দ্বিতীয় টেস্টও অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। এখন যা পরিস্থিতি প্রথম ইনিংসে দারুণ ব্যাট না করলে দু’দেশের মধ্যে শততম টেস্টের পরিণতি, সেই বত্রিশ সালের প্রথম টেস্টকেই অনুসরণ করবে।
কখনও পাঁচ উইকেট পাওয়ার পর বাউন্ডারি লাইনের বাইরে থেকে প্রবীণ কুমারকে অভিনন্দন হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পেয়ে বেরিয়ে যাওয়া জাহিরের।
রোদ্দুর ওঠায় লর্ডস উপচে এলেন দর্শকেরা। খেলা শুরুর আগে লর্ডসে প্রাক্তন ক্রিকেটারদের দিয়ে ঘণ্টা বাজানো হয়। শনিবার ঘণ্টা বাজানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে দিলীপ বেঙ্গসরকরকে। তাঁর ঘণ্টা বাজানো ভারতের পক্ষে পয়া হয় কি না সেটাও দেখার। বৃষ্টি না হলে ধরে নেওয়া হচ্ছে কালই সবচেয়ে বেশি ভিড় হবে। সচিনের ব্যাট দেখার জন্য তো আরও মাদকতা থাকবে বলে মনে হয়। এ দিনই ভিক্টোরিয়া টিউব স্টেশন থেকে যেমন ভিড়াক্কার হয়ে মেট্রো আসছিল, এ দেশে ফুটবল ম্যাচ-ট্যাচ ছাড়া ভাবাই যায় না। মনে হবে গড়িয়া থেকে চাঁদনি চকগামী টিউবে বোধহয় আপনি মধ্যিখানে কালিঘাট থেকে ওঠার অসমসাহসী চেষ্টা করছেন। ব্যাঙ্ক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর মার্ভিন কিং এ দিনও এসেছিলেন মাঠে। ইউরো নিয়ে এত সঙ্কট, ব্রিটেনের সঙ্গে জার্মানির টেনশন, এত লেখালেখির মধ্যে তাঁকে উপর্যুপরি মাঠে দেখে অনেকেই আশ্চর্য হয়ে যান। কিং জানান, তাঁর আপাতত একটাই দুশ্চিন্তা। হঠাৎ যে মেঘ করে এল, বৃষ্টি এসে ইংল্যান্ডের ছন্দটা হারিয়ে দেবে না তো!
প্রকৃত ক্রিকেট সমর্থক। মার্ভিন কিং ইয়র্কশায়ারের সেই প্রাচীন ক্রিকেটগাথা মনে করিয়ে দিলেন। দুই বন্ধু মিলে দেখছে ইয়র্কশায়ার ওপেনাররা নামছেন। পাশাপাশি বাড়ি দু’জনের। একজনের হঠাৎ কাজ পড়ায় তাকে হেডিংলে থেকে ছুটতে হল বাড়িতে। ফিরে এসে খুব দুঃখিত ভাবে বন্ধুকে বলল, তোর জন্য একটা খারাপ খবর আছে। কী, বন্ধু জানতে চায়। তোর বউকে দেখে এলাম আমাদের কুমোরটার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অবস্থায়। “ওঃ, এই। তোর জন্য আরও খারাপ খবর আছে। হাটন আউট,” বন্ধু আবার ম্যাচে ডুব দিল।

ছবি: এএফপি

ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস
(আগের দিনের ১২৭-২ এর পর)
ট্রট এল বি ডব্লিউ প্রবীণ ৭০
পিটারসেন ন.আ. ২০২
বেল ক ধোনি বো প্রবীণ ৪৫
মর্গ্যান ক ধোনি বো প্রবীণ ০
প্রায়র ক ধোনি বো প্রবীণ ৭১
ব্রড এল বি ডব্লিউ প্রবীণ ০
সোয়ান বো রায়না ২৪
ট্রেমলেট ন.আ. ৪
অতিরিক্ত ২৪
মোট ৪৭৪-৮ ডিঃ
পতন: ১৯, ৬২, ১৬০, ২৭০, ২৭০, ৩৯০, ৩৯০, ৪৫১।
বোলিং: জাহির ১৩.৩-৮-১৮-২, প্রবীণ ৪০.৩-১০-১০৬-৫, ইশান্ত ৩২-৫-১২৮-০,
হরভজন ৩৫-৩-১৫২-০, ধোনি ৮-১-২৩-০, রায়না ২.৪-১-২৫-১।

ভারত প্রথম ইনিংস
মুকুন্দ ব্যাটিং ৮
গম্ভীর ব্যাটিং ৭
অতিরিক্ত
মোট ১৭-০।
বোলিং: অ্যান্ডারসন ৩-১-৯-০, ট্রেমলেট ৩-০-৮-০।
First Page Khela Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.