ব্রিগেডের হাল ফেরানো
কাদা সরাতে কর্মীরা নাস্তানাবুদ, মেয়র তবু প্রত্যয়ী
প্লাস্টিকের থালা-গ্লাস, ছেঁড়া খবরের কাগজ স্তূপ সাফ হয়ে গেল শুক্রবার বিকেলের মধ্যে। তাতে কী?
সমাবেশের ব্রিগেড থেকে সবুজ খসিয়ে দেওয়া সেই থকথকে কাদার তাল কী ভাবে সরানো হবে, তা আর ভেবে পাচ্ছেন না পুরকর্মীরা।
বৃহস্পতিবার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে তৃণমূলের সভা হয়ে যাওয়ার পরে শুক্রবার সকালে ডেকরেটরের লোকজন ব্যারিকেড ও অস্থায়ী মঞ্চ খুলতে শুরু করেছিলেন। অজস্র খুঁটি পোঁতা হয়েছিল যে সব গর্তে, মাটি ফেলে সেগুলো বোজানোর কাজে হাত লাগান পুরকর্মীরা। এ দিন সকাল থেকে বৃষ্টি হয়নি বটে, তবে রোদের জোর তেমন ছিল না। ফলে জায়গায় জায়গায় জমা জল কিছুটা শুষলেও মাঠ জুড়ে কাদার দাপট কমেনি।
শুক্রবারের ব্রিগেড। হাল ফেরানোর চেষ্টায় পুরসভার কর্মীরা। ছবি: দেবাশিস রায়
আর সেই কাদা সামলাতে গিয়েই পুরকর্মীদের দিনভর হিমসিম খেতে হল। পুরকর্তারা গোড়ায় ঠিকই করে উঠতে পারেননি যে, মাঠের কাদা মাঠেই ছড়িয়ে দেওয়া ভাল, নাকি তুলে নিয়ে মাঠের বাইরে ফেলা উচিত। প্রথমে শালের খুঁটি দিয়ে মাঠের মধ্যে ক’দফায় কাদা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়। তাতে মাঠের চেহারাটা আরও হতশ্রী হয়ে পড়ায় ঠিক হয়, বেলচা দিয়ে কাদা তুলে হাত-গাড়িতে চাপিয়ে তা বাইরে ফেলা হবে।
সেই কাজ যখন শুরু হল, ততক্ষণে বেলা অনেকটা গড়িয়ে গিয়েছে। ফলে এ দিন ব্রিগেডের অধিকাংশ কাদা সরানো যায়নি। কিন্তু এই পদ্ধতিতে ময়দানের বিধ্বস্ত হাল কি আদৌ ফিরবে?
বস্তুত উদ্যান রক্ষণাবেক্ষণে অভিজ্ঞ বেশ কিছু পুরকর্মীই এ ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। এ দিন তাঁদের কেউ কেউ মাঠে দাঁড়িয়েই বলেন, নিয়ম মেনে ‘তিন দিনের’ মধ্যে মাঠকে আগের চেহারায় সেনার হাতে ফিরিয়ে দেওয়া অসম্ভব। তা হলে উপায় কী?
ওঁদের বক্তব্য: আগের চেহারায় ফেরাতে হলে ময়দানকে দীর্ঘ দিন ‘বিশ্রাম’ দিতে হবে। এর মধ্যে কয়েক দফা বৃষ্টি হয়ে গেলে আরও ভাল। পায়ে-পায়ে তৈরি ছোট ছোট খন্দ তাতে মিলিয়ে যাবে। আর বৃষ্টির জল শুকিয়ে গেলে মাঠ আপনা-আপনি আগের অবস্থায় ফিরে যাবে বলে মনে করছেন ওই কর্মীরা। ওঁরা চাইছেন, পুর-কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে কথা বলুন। মাঠ কী ভাবে পরিষ্কার হচ্ছে, সেনা-অফিসারেরা অবশ্য এ দিন সকালে এসে তা এক দফা দেখে গিয়েছেন।
শুধু কাদা নয়, জলের একটা গাড়িকে ময়দান থেকে সরাতে গিয়েও পুরকর্মীরা এ দিন নাস্তানাবুদ হয়েছেন। এবং এ ক্ষেত্রেও সমস্যার উৎস সেই কাদাই। মাঠ সাফাইয়ে ব্যস্ত কর্মীদের জন্য পানীয় জলের ব্যবস্থা করতে ছোট গাড়িটা পাঠিয়েছিলেন পুরকর্তারা। কিন্তু মঞ্চের পিছনে জলাধার পর্যন্ত পৌঁছনোর আগেই তার চাকা গেঁথে যায় কাদায়। কোদাল-বেলচা এনে চাকার তলার মাটি সরিয়েও গাড়ি সরানো যায়নি। উল্টো বিপত্তি হয়, যখন গাড়ি ওঠাতে গিয়ে চালক অ্যাক্সিলেটরে বার বার চাপ দিতে থাকেন। চাকার নিষ্ফল ঘূর্ণনের সঙ্গে ছিটকে ছিটকে বেরোতে থাকে তাল তাল নরম মাটি। মাঠ সাফাই মাথায় ওঠে। সব চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পরে সন্ধেয় পুলিশকে বলা হয় ক্রেন আনতে।
এ হেন অবস্থার মধ্যেই দুপুরে ময়দানের হাল দেখতে আসেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। তিনি বলেন, “মাঠের মাটি থেকে দুর্গন্ধ বার হচ্ছে। সমাবেশকারীরা কী কী ভাবে মাঠ নোংরা করেছেন, তা খতিয়ে দেখা দরকার।” দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে মাঠের মাটি পরীক্ষা করে দেখার জন্য রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করেছেন বলে সুভাষবাবু জানান। অন্য দিকে ব্রিগেড সাফাই প্রসঙ্গে কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, মঞ্চ খোলার কাজ চলছে। সেনাবাহিনীর বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যেই ময়দান পরিষ্কার হয়ে যাবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।
কিন্তু এত কাদা হল কেন? মাঠের সবুজ ঘাসই বা ফিরবে কী ভাবে? মেয়রের জবাব, “বৃষ্টি হলে কাদা হবেই।” এবং তাঁর দাবি: যে অবস্থায় ময়দান নেওয়া হয়েছিল, তার চেয়েও ভাল অবস্থায় সেনাবাহিনীকে তা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু কত দিনে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
Previous Story Jibjagat Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.