দুর্ভোগ

অব্যবস্থার সাতকাহন
কাশে মেঘ দেখলেই তাঁদের ভয় হয়। লোডশেডিং হলে ছোটেন মোমবাতির খোঁজে। এই অবস্থা হাওড়া আদালতের আইনজীবী, মুহুরি ও টাইপিষ্টদের। অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরে চরম অব্যবস্থার মধ্যেই চলছে হাওড়া আদালত। বহু বার ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে সমস্যার কথা জানিয়েও কোনও কাজ হয়নি। সমস্যা হচ্ছে আদালতে আসা সাধারণ মানুষেরও।
হাওড়া শহরের কেন্দ্রে রয়েছে হাওড়া আদালত। এখানে ফৌজদারি ও দেওয়ানি দু’টি আদালত রয়েছে। এর মধ্যে ফৌজদারি আদালতটির অবস্থা বেশি খারাপ। এই আদালতে প্রতি দিন গড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার মানুষ আসেন। আইনজীবী রয়েছেন প্রায় ১২০০ জন। অভিযোগ, আদালতের পরিবেশ অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর। অধিকাংশ কক্ষ এতটাই অপরিসর যে এক সঙ্গে ১০-১২ জন লোক দাঁড়ালে দমবন্ধ করা অবস্থা হয়। আদালত চত্বরের নিকাশি নালাগুলিও দীর্ঘ দিন সাফাই হয়নি।
এখানে বাঁশের খুঁটিতে প্লাস্টিক ও দড়মার বেড়ার ছাউনি লাগানো আইনজীবীদের ছোট্ট ছোট্ট সেরেস্তা রয়েছে। সেখানেই টেবিল, চেয়ার বা বেঞ্চ পেতে মক্কেলদের সঙ্গে কথাবার্তা চলে। টাইপিস্ট, মুহুরিরাও সেখানেই কাজ সারছেন। এক সঙ্গে তিন-চার জনের বেশি বসার জায়গা নেই সেরেস্তায়। অনেক সময় সেরেস্তার বাইরে ভিড় জমে যায়। এক আইনজীবী বলেন, “অনেক সময়ই আমরা মক্কেলদের বলি, যিনি কথা বলবেন তিনি ছাড়া আর সবাই অন্য কোথাও গিয়ে দাঁড়ান।” ফলে সাধারণ মানুষকে রোদ-জলে খোলা আকাশের নীচেই দীর্ঘ ক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। প্রবীণদের সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয়। অনেকেই বাধ্য হয়ে আদালতের বাইরে হোটেল বা চায়ের দোকানে বসে থাকেন। যেমন, বালির বাসিন্দা সুকুমার পাত্র। তিনি বলেন, “শুধু বসার জন্য পয়সা খরচ করতে হয়।”
আইজীবীরা জানান, প্রচণ্ড গরমে সেরেস্তায় খুবই অসুবিধা হয়। লোডশেডিং হলে তো কথা নেই! মোমবাতি আর হাত পাখাই এক মাত্র ভরসা। আইনজীবী তপজিল আহমেদ বলেন, “কোর্টে একটি জেনারেটার রয়েছে। কিন্তু সেরেস্তায় লাইন দেওয়া হয়নি। শুধু আদালত কক্ষের ভিতরে ব্যবহার হয়।” সমস্যা রয়েছে পানীয় জল নিয়েও। আইজীবীরা জানান, তাঁদের খাওয়ার জন্য বার লাইব্রেরিতে জলের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের জন্য গোটা আদালত চত্বরের একটি গভীর নলকূপই ভরসা। আইনজীবী দেবাদিত্য মুখোপাধ্যায় বলেন, “আগে দু’টি গভীর নলকূপ ছিল। এখন সেগুলি অকেজো। অসংখ্য মানুষ আসেন। জল চাইলেও অনেক সময় দিতে পারি না। খারাপ লাগে।”
সাধারণ মানুষের জন্য মাত্র একটি সুলভ শৌচাগার রয়েছে। পার্কিং জোন না থাকায় সেরেস্তার মধ্যেই মোটরসাইকেল, সাইকেল রাখা থাকে।
বৃষ্টি হলে আরও সমস্যা হয়। অনেক সময় জল পড়ে গুরুত্বপূর্ণ নথি ভিজে যায়। চারপাশ কাদায় ভরে ওঠে। কয়েকটি জায়গায় এক হাঁটু জল জমে যায়। জল ভেঙে আইনজীবীদের সেরেস্তা থেকে কোর্টে যেতে হয়। আইনজীবী সুজিত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ফৌজদারি আদালতের রেকর্ড রুমটিরও বেহাল অবস্থা।
ভিতরে নথি স্তূপাকারে পড়ে রয়েছে।” অভিযোগ, এই আদালতে কোনও অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থাই নেই। ঘিঞ্জি আদালত চত্বরের ভিতরেই চলছে কয়েকটি হোটেল। কয়লা বা গ্যাসে রান্না হচ্ছে। কাছেই প্লাস্টিক দিয়ে ঘেরা সেরেস্তা। কোনও কারণে আগুন লাগলে বাঁচার উপায় নেই বলেই আইনজীবীদের আশঙ্কা।
আদালত চত্বরের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন আইনজীবীরা। আদালতের পূর্ব ও পশ্চিম দিকে লোহার দরজা থাকলেও, উত্তরে মহাত্মা গাঁধী রোডের দিক খোলা। অভিযোগ, মাঝেমধ্যেই চেয়ার, আলো, পাখা চুরি হয়ে যায়। নেশার আসরও বসে। সোম ও মঙ্গলবার আদালতের পাশেই মঙ্গলা হাট বসে। তখন আরও সমস্যা হয়। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “স্থানীয় থানা থেকে ওই এলাকায় রাতে টহল দেওয়া হয়। প্রয়োজনে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়।”
আইনজীবীদের অভিযোগ, আইনজীবীর সংখ্যা বাড়লেও ঠিকমতো বসার ব্যবস্থা নেই। ক্রিমিনাল বার লাইব্রেরীর সভাপতি সমীর বসু রায়চৌধুরি বলেন, “বেহাল হাওড়া আদালত চত্বরের ভোল বদলে একই ছাদের তলায় একটি দশ তলা আধুনিক নতুন আদালত ভবন তৈরির জন্য দীর্ঘ দিন ধরে আবেদন জানাচ্ছি। জেলা বিচারপতি থেকে জেলা প্রশাসন সবাইকেই বিষয়টি জানানো হয়েছে। কিন্তু ফল হয়নি। মন্ত্রীকেও বিষয়টি জানিয়েছি।” যদিও বিচারমন্ত্রী মলয় ঘটক জানিয়েছেন, নতুন আদালত ভবন তৈরির জন্য জমি দ্রুত হস্তান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
Previous Story

Howrah

Next Story




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.