|
|
|
|
|
|
শুধুই আশ্বাস |
জীর্ণ আদালত |
অশোক সেনগুপ্ত |
প্রায় দেড় দশক আগে মহাকরণের বৈঠকে রাজ্য সরকার আশ্বাস দিয়েছিল, হাওড়ায় দু’বছরের মধ্যে তৈরি হবে নয়া আদালত ভবন। আশ্বাস রয়ে গিয়েছে কাগজে-কলমেই। জেলার আদালত ভবন হয়ে উঠেছে আরও জীর্ণ-দীর্ণ। কেন এই হাল, বিভাগীয় অফিসারদের কাছে জানতে চাইলেন রাজ্যের বিচারমন্ত্রী মলয় ঘটক। ’৯৪-তে হাওড়ায় অন্যতম প্রধান একটি আদালত ভবন ভেঙে দু’জনের মৃতুর পরে বিক্ষোভে নামেন আইনজীবীরা। সাত দিন তাঁদের ধর্মঘট চলে। এর পর মহাকরণে তৎকালীন অস্থায়ী মুখ্যমন্ত্রী বিনয় চৌধুরী এবং মুখ্যসচিব নারায়ণন কৃষ্ণমূর্তির কাছ থেকে নয়া ভবন তৈরির লিখিত আশ্বাস পেয়ে আইনজীবীরা কাজে যোগ দেন। কিন্তু মূলত সরকারি তৎপরতার অভাবে নয়া ভবন তৈরির প্রাথমিক কাজ শুরু হতেও লেগে যায় বেশ ক’বছর। ২০০৯ সালে তৈরি হয় ১০তলা ভবনের নকশা। প্রস্তাবিত ভবনের জন্য ধার্য হয় ৩৫ কোটি টাকা। কিন্তু ওই পর্যন্তই। |
|
সম্প্রতি রাজ্যের বিচারমন্ত্রীর সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা করেন হাওড়ার ক্রিমিনাল কোর্ট বার লাইব্রেরির সভাপতি সমীর বসু রায়চৌধুরী। সমীরবাবু বলেন, “হাওড়ার নানা জায়গায় যে সব পুরনো ভবনে আদালতগুলি ছড়িয়ে আছে, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেগুলির হাল খুব খারাপ হয়ে উঠেছে। ওই সব আদালত উঠে আসার কথা নয়া আদালত ভবনে। এ ব্যাপারে সরকারি দীর্ঘসূত্রিতার প্রতিবাদে ১ এপ্রিল থেকে আমরা অনশন শুরুর প্রস্তুতি নিই। গত ২৩ মার্চ তার স্মারকলিপি দাখিল করি।” বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করে কলকাতা হাইকোর্টের শীর্ষমহল। গত ১১ মে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র, বিচার, অর্থ এবং ভূমি ও ভূমি সংস্কার এই চার দফতরের সচিবকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলে হাইকোর্ট।
নয়া আদালত ভবন কেন হয়নি? বিচার বিভাগ সূত্রের খবর, যেখানে নয়া ভবন তৈরির কথা ছিল, সেই ২৪ কাঠা জমিতে ছিল জেলা পুলিশ সুপারের ভবন। তা স্থানান্তরিত হয়েছে ২০১০-এ। এই জমির মালিকানা বিচার বিভাগের হাতে না আসাতেই নির্মাণকাজ শুরু করা যায়নি। গত ১২ মে এ ব্যাপারে বিচারসচিব চিঠি দিয়েছেন ভূমি সংস্কার দফতরে। |
|
কেবল নয়া আদালত ভবনই নয়, হাওড়ার আইনজীবীরা সরকারের কাছ থেকে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা ন্যায্য পাওনাও পাননি বলে অভিযোগ। যে সব অভিযুক্ত অর্থাভাবে আইনজীবী নিয়োগ করতে পারেন না, তাঁদের জন্য সরকার ফৌজিদারি আইনের ৩০৪ ধারা অনুযায়ী আইনজীবী নিয়োগ করে। এ জন্য সিনিয়র এবং জুনিয়র আইনজীবীদের যথাক্রমে ৬২৫ টাকা ও ৪২৫ টাকা পাওয়ার কথা। সমীরবাবু মন্ত্রীকে জানিয়েছেন, বছর তিন ধরে বার বার বলা সত্ত্বেও ১৮ জন আইনজীবী এই টাকা পাননি।
বিচারকের অভাবে ছ’টি ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের মধ্যে হাওড়ায় দু’টি, আমতা ও উলুবেড়িয়ায় একটি করে, অর্থাৎ চারটিতে কাজ হচ্ছে না। পূর্ণ সময়ের রেল ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় রেল সংক্রান্ত নানা আইনি শুনানির কাজ আটকে রয়েছে। এ ছাড়া পূর্ণ সময়ের বিচারক না থাকায় মার খাচ্ছে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের কাজও।
এ সব ব্যাপারে বিচারমন্ত্রী বলেন, “আদালত ভবন তৈরিতে দ্রুত জমি হস্তান্তরের জন্য আমি সংশ্লিষ্ট অফিসারদের নির্দেশ দিয়েছি।” আদালতে হাজিরা বাবদ বিচারকদের প্রাপ্য সরকারি টাকা না দেওয়া প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য: “বামফ্রন্ট আমলে বিধবাভাতা, বৃ্দ্ধভাতা এ সব দেওয়াও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পুরনো সরকারের এত রকম ভাতা দেওয়া তো আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে এ রকম যাতে আর না-হয়, তা দেখা উচিত।” প্রস্তাবিত ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টগুলিকে কার্যকরী করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দেন তিনি। |
ছবি: রণজিৎ নন্দী |
|
|
|
|
|