নিজস্ব সংবাদদাতা • আরামবাগ |
জমি-সংক্রান্ত বিবাদ মিটে গিয়েছে মাস ছ’য়েক হল। কিন্তু তারপরেও আছে আরামবাগে মুসলিম ছাত্রীদের জন্য হোস্টেল তৈরির কাজ মাঝপথে থমকে আছে। প্রশাসনের বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় মানুষ। মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগী অবশ্য বলেন, “এখনও কিছু সমস্যা আছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের সঙ্গে আগামী সোমবার আলোচনায় বসে বিষয়টি মেটানো হবে। তারপরে কাজ শুরু হবে।” আরামবাগ মহকুমা প্রশাসন সূত্রের খবর, সম্প্রতি ঠিকাদার তা কিছু মালপত্র নষ্ট হয়ে যাওয়ার অভিযোগ তুলে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।
আরামবাগ শহরে মহকুমাশাসকের বাংলোর পিছনে জুবিলি পার্কের মাঠ-সংলগ্ন একটি জায়গায় মুসলিম ছাত্রীনিবাস নির্মাণের কাজ শুর হয়েছিল ২০০৫ সালে। রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের টাকায় ওই নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পায় আরামবাগ পঞ্চায়েত সমিতি। স্থানীয় ‘নাজির গোলাম জিলানি আনসারি মুসলিম সাধারণ ওয়াকফ স্টেট’ স্থানীয় ঈদগাহ এলাকা থেকে ৩৩ শতক জমি দান করে। ২০০৭ সালে একতলার কাজ শেষ হয়। |
কিন্তু ২০০৯ সালের গোড়ায় ঈদগাহের প্রাচীর দেওয়ার জন্য মাপজোকের সময় ধরা পড়ে, দানের জায়গার দলিল ও নকশা না মেনে অতিরিক্ত ২২ শতক জায়গায় অবৈধ নির্মাণ হয়েছে। এরপরেই ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখা দেয়। ঘেরাও হন বিডিও। ২০০৯ সালের মার্চ মাস থেকে কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয় পঞ্চায়েত সমিতি। ওয়াকফ স্টেটের প্রথম দাবি ছিল, অবৈধ নির্মাণ ভেঙে নকশা অনুযায়ী দানের ৩৩ শতক জমির উপরেই ছাত্রী নিবাস বানানো হোক। মাসখানেক পরে দাবিটিকে সরলীকরণ করে তাঁরা জানান, অতিরিক্ত যে জায়গা। দখল হয়েছে, দানের ৩৩ শতক জায়গা থেকে তা ফেরত দেওয়া হোক। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ওই দাবির সঙ্গে যোগ করা হয়, জায়গা ফেরত দেওয়ার পরে নির্দিষ্ট জায়গা নকশা ও দলিল করে ছাত্রী নিবাসটির সীমানা পাঁচিল তুলে দিতে হবে। তারপরেই ছাত্রী নিবাস নির্মাণ করা যাবে। কিন্তু যাবতীয় বাধা কেটে গেলেও এবং তহবিলে প্রয়োজনীয় টাকা থাকা সত্ত্বেও সেই প্রাচীর নির্মাণ হচ্ছে না। ওয়াকফ স্টেটের পক্ষে হাজি শাহি আলম বলেন, “আমরা উন্নয়নের স্বার্থেই জায়গা দান করেছি। আমাদের বক্তব্য ছিল, জায়গা শুদ্ধ করে কাজ করুন। কিন্তু সমস্যা কেটে গেলেও প্রশাসনিক উদাসীনতায় প্রাচীরের কাজ এখনও হচ্ছে না।”
ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, জমি সংক্রান্ত বিবাদ এখন মিটেছে। ওয়াকফ স্টেট আগে প্রাচীর দেওয়ার দাবি তুলেছে। এত দিন ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর প্রাচীরের নকশা দিতে পারছিল না। সম্প্রতি নকশাও পাওয়া গিয়েছে। নতুন করে দেরি হওয়ার কারণ, ঠিকাদারের ক্ষতিপূরণ দাবি। সেটা মিটে গেলেই দ্রুত কাজ হবে বলে জানিয়েছেন আরামবাগের বিডিও মৃণালকান্তি গুঁই। প্রাচীরের জন্য জেলা প্রশাসন যে নতুন স্কিম করে পাঠাতে বলেছিল, তা-ও পাঠানো হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন বিডিও। ফের বিতর্ক এবং জটিলতা কাটাতে আগে প্রাচীর তৈরি যে জরুরি, সে ব্যাপারে প্রশাসন ও ওয়াকফ স্টেট একমত। কিন্তু সাধারণ সংখ্যালঘু মানুষ চাইছেন, অবিলম্বে ছাত্রী নিবাস তৈরির কাজ শুরু হোক। |