নিজস্ব সংবাদদাতা • আরামবাগ |
১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে একটি রাস্তা তৈরিতে দুর্নীতির অভিযোগ উঠল আরামবাগের মাধবপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রধান-সহ ৮ জনের বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে ব্লক প্রশাসনের তরফে তদন্ত চালানো হয়। তার পরেই বৃহস্পতিবার রাতে বিডিও মৃণালকান্তি গুঁই এ ব্যাপারে আরামবাগ থানায় এফআইআর দায়ের করেন। বিডিও বলেন, “তদন্তে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। যে রাস্তা তৈরির কথা বলা হয়েছিল, তা হয়নি। ওই কাজে জড়িত সকলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হল।” পুলিশ জানায়, অভিযুক্তেরা পলাতক। তাঁদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় পাঁচ মাস ধরে ১০০ দিনের কাজ, বিপিএল তালিকা তৈরি-সহ বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণে ওই পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে দুুর্নীতির অভিযোগ তুলছিলেন গ্রামবাসীরা। একই অভিযোগ রয়েছে তৃণমূলেরও। প্রকল্পগুলির খরচ এবং কাজের হিসাব চেয়ে একাধিকবার পঞ্চায়েতে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে। ঘেরাও করা হয়েছে। কিন্তু প্রধান শেখ মুজিবর রহমান এ নিয়ে কোনও সদুত্তর দেননি বলে দাবি গ্রামবাসীদের। বিধানসভা ভোটের পরে মে মাস থেকে ক্ষোভ-বিক্ষোভ চরম আকার নেয়। গ্রামবাসীরা বিডিওকে অভিযোগ জানান।
গত ২৯ জুন বিকালে ৯ দফা দাবিতে তৃণমূূলের নেতৃত্বে প্রধানের কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি নেওয়া হয়। প্রধানের উত্তরে খুশি না হয়ে বিক্ষোভকারীরা পঞ্চায়েত অফিসের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে, সরকারি কর্মীদের হেনস্থা করে এবং আলমারির চাবি নিয়ে পালান বলে অভিযোগ। প্রতিবাদে পরের দিন থেকে পঞ্চায়েত অফিস যাওয়া বন্ধ করে দেন প্রধান এবং সদস্যেরা। পঞ্চায়েতের সরকারি কর্মীরাও নিরাপত্তার দাবি তুলে ৬ দিন অফিস যাওয়া বন্ধ রাখেন। পরে অবশ্য পঞ্চায়েত অফিস খোলা হয়। সরকারি কর্মীরা গেলেও প্রধান-সহ সদস্যেরা গরহাজিরই থেকে যান। প্রয়োজনীয় পরিষেবা না পেয়ে গ্রামবাসীরা ব্লক প্রশাসনের দ্বারস্থ হন। পঞ্চায়েতের দুর্নীতি নিয়েও তাঁরা সেখানে সরব হন। পরে ৮ জুলাই বিডিও-র কাছে তাঁরা লিখিত অভিযোগে জানান, কৃষ্ণবল্লভপুর প্রাথমিক স্কুল থেকে মল্লিকপাড়া পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তায় বোল্ডার-মোরামের কাজ হয়েছে দেখিয়ে আড়াই লক্ষ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ওই রাস্তায় এক ঝুড়ি মাটিও পড়েনি। এই অভিযোগের ভিত্তিতে ব্লক প্রশাসনের পক্ষে তদন্ত করেন ব্লক মৎস্য সম্প্রসারণ আধিকারিক গুণধর পাল।
প্রধান ছাড়া বাকি অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন পঞ্চায়েতের নির্বাহী সহায়ক অরুণ কোনার, কর্ম সহায়ক সৌমেন ঘোষাল, কবিতা দলুই এবং রঞ্জিত হালদার নামে সিপিএমের দুই পঞ্চায়েত সদস্য, বিতর্কিত কাজটির সুপারিন্টেন্ডেন্ট স্বপন রানা এবং পঞ্চায়েতের তরফে দুই কর আদায়কারী বিশ্বনাথ মাইতি এবং কাজি আবু জাফর। শেষের তিন জন এলাকার প্রভাবশালী সিপিএম কর্মী হিসাবে পরিচিত।
প্রধানের সঙ্গে অনেক চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। তবে পঞ্চায়েতের নির্বাহী সহায়ক অভিযুক্ত অরুণ কোনার বলেন, “আমি মাস সাতেক হল এখানে এসেছি। সব রাস্তাঘাটও চিনি না। প্রধান-সহ সহকারী সরকারি কর্মী ও সদস্যেরা টাকা দেওয়ার নির্দিষ্ট কাগজে সই করতে বলেছিলেন। তাই সই করেছি। সরেজমিনে সব কিছু দেখা সম্ভব হয় না। কর্ম সহায়কের রিপোর্টের উপরেই অনেক সময়ে নির্ভর করতে হয়। এ ভাবে যে বিপদে পড়ব, ভাবতে পারিনি।”
বিডিও এফআইআর দায়ের করায় স্থানীয় তৃণমূল নেতা রণজিৎ রায় বলেন, “প্রমাণ হল গ্রামবাসী এবং আমাদের অভিযোগ মিথ্যা ছিল না।” সিপিএমের আরামবাগ জোনাল কমিটির সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন বলেন, “আমরা বরাবরই অন্যায় এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে। কেউ অন্যায় করলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।” |