এক শিল্পপতি কারখানা বন্ধ করতে গিয়েছিলেন। আর এক জন আদালত থেকে ১৪৪ ধারা নিয়ে কারখানা চালাতে বাধ্য হচ্ছেন। সৌজন্যে কালু রহমান। পোলবার রাজহাটের তৃণমূল নেতা।
যে সংস্থায় ১৪৪ ধারা রয়েছে তার নাম তুলসিয়ান অ্যান্ড ফ্লেক্সেস প্রাইভেট লিমিটেড। ওই সংস্থার দু’টি ইউনিটে মোট ১২৫ জন কাজ করেন। এ ছাড়াও রয়েছেন বেশ কিছু অস্থায়ী কর্মী। একটি ইউনিটে কার্টন তৈরি হয়। অন্য একটি ইউনিটে বিস্কুট, চানাচুর-সহ নানা খাদ্যদ্রব্যের মোড়কে ব্যবহৃত ল্যামিনেশন পেপার তৈরি হয়। ২০০৯ সাল থেকে ওই কারখানা চালু হলেও গত কয়েক মাস ধরেই পোলবার রাজহাটের তৃণমূল নেতা কালু রহমানের জুলুমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন বলে কারখানা কর্তৃপক্ষের অভিযোগ। এর আগে কালুুর বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ এনে রাজহাটেরই একটি সংস্থা তাঁদের নির্মীয়মাণ কারখানা বন্ধ করার কথা ঘোষণা করেন। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরে তিনি সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসেন।
তুলসিয়ান সংস্থার এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর দিলীপকুমার ঝা বলেন, “আমাদের কারখানায় তৃণমূলের একটি শ্রমিক সংগঠন রয়েছে। কিন্তু কিছুদিন আগে উনি দলবল নিয়ে এসে আরও একটি ইউনিয়ন খুলতে চান। আমরা রাজি হইনি। সেই থেকে বিরোধের শুরু। ওঁকে বলি, কারখানায় অশান্তি যাতে না হয়, তা আপনি নিশ্চিত করুন। প্রয়োজন হলে আপনার লোক নেব। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিল্পায়নের জন্য যথেষ্ট উদ্যোগী হয়েছেন। এমন পরিস্থিতি তৈরি করবেন না যাতে কারখানা বন্ধ হয়ে যায়।” অভিযোগ, দিলীপবাবু মুখ্যমন্ত্রীর কথা বলায় রেগে যান কালু। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী আমাকে ব্যক্তিগত ভাবে চেনেন। আমার লোক না নিলে এখানে কারখানা চালানো যাবে না।”
সংস্থা সূত্রের খবর, এর পরে চলতি মাসে রাজহাট মোড়ে দলবল জুটিয়ে কালু কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মিছিল এবং সভা করেন। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। সেদিন পুলিশ থাকায় কোনও সমস্যা হয়নি। তবে, গোলমাল না হলেও কারখানা কর্তৃপক্ষ ঝুঁকি না নিয়ে চুঁচুড়া আদালতে ১৪৪ ধারার জন্য আবেদন করেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে চলতি মাসের ৮ তারিখ থেকে আগামী ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কারখানা চত্বরে ১৪৪ ধারা জারির নির্দেশ দেয় আদালত।
সংস্থা সূত্রের খবর, কিছু দিন আগে ফের রাজহাট অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেস এবং পোলবা-দাদপুর ব্লকের দু’টি ভিন্ন প্যাডে ১১ জনের নামের একটি তালিকা দেওয়া হয় কারখানায় নিয়োগের জন্য। দিলীপবাবু বলেন, “কারখানার দু’টি ইউনিটে মোট লোকের ৭০ শতাংশ স্থানীয় মানুষকে কাজে নিয়েছি। কারখানায় প্রশিক্ষিত শ্রমিকের দরকার হয়। ফলে বাকি ৩০ শতাংশ শ্রমিককে বাইরে থেকে নিতে হয়েছে। কেউ দাবি করলেই সবসময় কারখানায় লোক নেওয়া যায় না।”
তৃণমূল নেতা কালু রহমান বলেন, “কারখানা কর্তৃপক্ষ আমাকে ডাকেন। তাই আমি সেখানে গিয়েছিলাম। কারখানার কাউকে ভয় দেখানো, মিছিল-মিটিং বা অশান্তি কোনও কিছুর সঙ্গেই আমি বা আমাদের কেউ যুক্ত নয়।” বেগতিক বুঝে ওই কারখানার শ্রমিকেরা স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদারকে বিষয়টি জানিয়েছেন। বিধায়ক বলেন, “আমি বিষয়টি দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়কে জানিয়েছি।” |