|
|
|
|
এনবিএসটিসি |
রাস্তায় গাড়ির যন্ত্র খুলে পড়ল, ক্ষুব্ধ চেয়ারম্যান |
কিশোর সাহা • শিলিগুড়ি |
লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে কেনা নতুন বাতানুকূল বাস, অ্যাম্বাসাডর কিছুদিনের মধ্যেই বিকল হয়ে পড়ছে। কখনও কখনও দুর্ঘটনাও ঘটছে। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে গাড়ি কেনার পরেই দামি যন্ত্রাংশ বিক্রির অভিযোগও রয়েছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে নতুন যন্ত্রাংশ বিক্রি করে সে জায়গায় পুরনো সরঞ্জাম লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগও আছে। তা নিয়ে খোঁজখবর করে ক্রমশ সন্দেহ বাড়ছিল উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষের। শুক্রবার উল্টোডাঙা ডিপোয় পরিদর্শনের পরে দফতরের অ্যাম্বাসাডরে চড়ে ফেরার সময়ে আমহার্স্ট স্ট্রিটে আচমকা তাঁর ‘নতুন’ গাড়ির অ্যাক্সেল’ খুলে ছিটকে পড়ায় চেয়ারম্যানের সেই সন্দেহ আরও দৃঢ় হয়েছে। সঙ্গেই সঙ্গেই চেয়ারম্যান গত দু-তিন বছরের মধ্যে কেনা গাড়ি নিয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
এই ব্যাপারে চেয়ারম্যান বলেছেন, “গাড়ি কেনা নিয়ে যে নয়ছয় হয়েছে সেই অভিযোগ শুনেছি। যে দিন দায়িত্ব নিতে যাব, সে দিন কোচবিহারে যে নতুন অ্যাম্বাসাডর পাঠানো হয়, সেটিতে আমি উঠিনি। নিজের গাড়িতে চড়ে গিয়েছিলাম। পরে জেনেছিলাম, ওই গাড়িটি ডিপোয় পৌঁছনোর আগে মদনমোহনবাড়ির কাছেই বিকল হয়ে থমকে যায়। ভেবেছিলাম রাস্তাঘাটের জন্য এমন হতেই পারে।”
কিন্তু, কলকাতায় এসে একই সময়ে কেনা অ্যাম্বাসাডরের অ্যাক্সেল খুলে পড়ল ব্যস্ত আমহার্স্ট স্ট্রিটে। রবীন্দ্রনাথবাবুর কথায়, “আমার প্রাণসংশয়ের আশঙ্কা ছিল। মোটামুটি ২ বছরের মধ্যে কেনা বেশির ভাগ গাড়ির ক্ষেত্রেই এমন হচ্ছে। সে জন্য পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি।”পাশাপাশি, ওই তদন্তের দায়িত্ব এনবিএসটিসির ইঞ্জিনিয়ারদের হাতে না দিয়ে পরিবহণ দফতরের অন্য কোনও বিভাগের বিশেষজ্ঞদের দিয়ে করানোর জন্য পরিবহণমন্ত্রী সুব্রত বক্সির সঙ্গে কথা বলেছেন চেয়ারম্যান। কারণ, বর্তমানে এনবিএসটিসি-র ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অফিসার-কর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধেই বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। চেয়ারম্যান জানান, সংস্থার বিভিন্ন ডিপোয় গত ২ বছরের মধ্যে কেনা সব গাড়ির হাল, কেন এমন হয়েছে ও কী পদ্ধতিতে কোথা থেকে কেনা হয়েছে তা তদন্ত করবে বিশেষজ্ঞ কমিটি।
সংস্থার সূত্রের খবর, বেলা সাড়ে ৮টা নাগাদ উল্টোডাঙা ডিপোয় পরিদর্শনে যান চেয়ারম্যান। সঙ্গে ছিলেন সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডনবস্কো লেপচাও। ওই ডিপোয় সব মিলিয়ে ৮৫ জন অফিসার-কর্মী থাকলেও বেলা ১২টা পর্যন্ত দেখা পান সাকুল্যে ৩০-৩৫ জনের। হাজিরা খাতায় কে কখন যাতায়াত করছেন তার কোনও উল্লেখের ব্যাপার নেই। জঞ্জাল, দুর্গন্ধে ভরা ডিপো দেখে প্রকাশ্যেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন তিনি। এলাকায় খোঁজ নিয়ে চেয়ারম্যান জানতে পারেন, অনেকেই দিনভর আড্ডা মেরে বিকেল-বিকেল ফিরে যান। চেয়ারম্যানের সঙ্গে ছিলেন এমডি। তিনি তাঁকে অনুপস্থিতদের কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেন। ইতিমধ্যে কয়েকজন অফিসার-কর্মী সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে ফুল-মিষ্টি দিতে গেলে তিনি হাতজোড় করে তাঁদের ফিরিয়ে দিয়ে বলেন, “আগে সংস্থা লাভের মুখ দেখুক। তার পর এ সব হবে। আমাকে ক্ষমা করবেন।”বেলা ১২টা নাগাদ ফেরার সময়ে আমহার্স্ট স্ট্রিটে বিকট শব্দে থেমে যায় তাঁর গাড়ি। ঝাঁকুনিতে বুকে-মাথায় চোট পান। সংস্থার সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই এলাকায় চার রাস্তার মোড় পার হওয়ার সময়ে যখন লাল সিগন্যাল জ্বলে ওঠে, সেই সময়ে চেয়ারম্যানের গাড়িটিই শেষে ছিল। পিছনে কোনও গাড়ি থাকলে বড় মাপের বিপদ ঘটার আশঙ্কা ছিল বলে চেয়ারম্যান মনে করেন। তিনি এমডিকে জানিয়ে দিয়েছেন, তদন্ত রিপোর্ট না-পাওয়া পর্যন্ত তিনি দফতরের ওই ধরনের ‘নতুন’ গাড়ি ব্যবহার করবেন না। |
|
|
|
|
|