|
|
|
|
প্রেসিডেন্সিতে ‘নেই’-এর ফর্দ নিল মেন্টর গ্রুপ |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
সরেজমিনে ঘুরে প্রেসিডেন্সির অভাব-অভিযোগের তালিকা বিশদে জানলেন মেন্টর গ্রুপের সদস্যেরা।
প্রতি বিভাগে গিয়ে ওঁরা খুঁটিয়ে দেখলেন, কথা বললেন শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে। এবং দিনের শেষে জানালেন, ঘাটতি রয়েছে পরিকাঠামোর, অভাব শিক্ষকের। তবু আশার কথা, ভাল ছাত্রছাত্রীরা এখনও প্রেসিডেন্সিতে আসছেন।
প্রেসিডেন্সিকে তার ঐতিহ্য ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুগত বসুর নেতৃত্বে আট সদস্যের ‘মেন্টর গ্রুপ’ গড়েছে রাজ্য। অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন যার মুখ্য উপদেষ্টা। গ্রুপের পাঁচ সদস্য শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনে যান। সুগতবাবু ছাড়াও ছিলেন জাতীয় গ্রন্থাগারের অধিকর্তা স্বপন চক্রবর্তী, বিজ্ঞানী হিমাদ্রি পাকড়াশি ও অশোক সেন ও অর্থনীতিবিদ ইশার জাজ অহলুওয়ালিয়া। এ দিন বিকেল তিনটে নাগাদ দু’টি দলে ভাগ হয়ে প্রেসিডেন্সি পরিদর্শনে বেরোন তাঁরা।
বিজ্ঞানের বিভাগগুলি দেখতে যান হিমাদ্রিবাবু ও অশোকবাবু। কলা ও সমাজবিজ্ঞানের বিভিন্ন বিভাগে যান সুগতবাবু ও স্বপনবাবু। ইশারদেবী পরে যোগ দেন দ্বিতীয় দলটির সঙ্গে। যদিও তিনি বেশ কিছু বিভাগ আলাদা ভাবেও ঘুরে দেখেন। |
|
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে ইশার অহলুওয়ালিয়া। শুক্রবার সুদীপ আচার্যের তোলা ছবি। |
হিমাদ্রিবাবু ও অশোকবাবু প্রথমে যান ভূতত্ত্ব বিভাগে। সুগতবাবুরা যান অর্থনীতি বিভাগ পরিদর্শনে। এর পরে বিভিন্ন বিভাগের ক্লাসঘর ও গ্রন্থাগারের পাশাপাশি ডিরোজিও হল, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, ক্যান্টিন, জিমনাসিয়াম সবই ঘুরে দেখেন তাঁরা। প্রতি বিভাগে বিভাগীয় প্রধান-সহ অন্য শিক্ষক শিক্ষিকাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। জানতে চান, কোথায় সমস্যা। জবাব ঘুরেফিরে একই শিক্ষকের অভাব, ক্লাসঘর নেই, গ্রন্থাগারিক নেই। সমস্যার কথা শোনার পাশাপাশি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মুখে তাঁদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথাও জানতে চান মেন্টর গ্রুপের সদস্যেরা। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া প্রথম ব্যাচের ছাত্রছাত্রীদের প্রত্যাশার কথাও তাঁরা শুনেছেন।
বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিভাগ ঘুরতে ঘুরতে একটা সময় নেতাজি সুভাষ ভবনের একতলায় পরিবেশ-বিজ্ঞান বিভাগে ঢোকেন অশোকবাবু ও হিমাদ্রিবাবু। সেখানে কোন কোন বিষয়ে গবেষণা হয়, কত ছাত্র গবেষণা করেন, খুঁটিয়ে জানতে চান। খানিক বাদে ইশারদেবীও সেখানে যান। পরে তিনি বলেন, “ওই বিভাগে জল, বর্জ্য, নিকাশি ইত্যাদি বিষয়ে কাজ হচ্ছে দেখলাম। আমি শিক্ষকদের বলেছি আরও বেশি বিজ্ঞানী ও নীতি নির্ধারকের সঙ্গে কথা বলতে। কারণ, এই বিষয়গুলো সারা দেশের নিরিখে ক্রমশ খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। প্রয়োজনে আমিও ওই বিভাগের কর্মশালায় যোগ দিতে চাই।”
ঘুরতে ঘুরতে এক সময় ক্যান্টিনে ঢোকেন সুগতবাবু ও স্বপনবাবু। কেমন চলছে ক্যান্টিন?
তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রী তাঁদের সোজাসাপটা জানান, “খাবারে তেল বড্ড বেশি। দামটাও চড়া।” তা হলে ক্যান্টিনে এসেছ কেন?
জবাব এল, “বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করছি।”
মুহূর্তে নিজেদের ছাত্রাবস্থায় কফি হাউসের দিনগুলোয় ফিরে গেলেন সুগতবাবু। ছাত্রীটিকে বললেন, “শুধু জলের গ্লাস নিয়ে বসেই বহুক্ষণ আড্ডা দিয়ে কাটিয়ে দিতাম।” মেন্টর গ্রুপের সকলেই প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী। তাই বিশেষ দায়িত্ব নিয়ে এ দিন প্রেসিডেন্সিতে এসে কেজো কথার ফাঁকে কলেজজীবনের স্মৃতি বার বারই টেনেছে তাঁদের।
সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্সির কাউন্সিল সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন সুগতবাবুরা। আলোচনার ফাঁকে ঘুরে-ফিরে আসে কিছু উদ্বেগও ভাল ছেলেমেয়েরা ডাক্তারি-ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে চলে যাচ্ছে। কী করে তাদের সাধারণ ডিগ্রি কোর্সে উৎসাহিত করা যায়, তা নিয়ে মতবিনিময় হয় তাঁদের মধ্যে।
কিন্তু এই উদ্বেগই যে শেষ কথা নয়, চেষ্টা করলে এখনও যে প্রেসিডেন্সির সুদিন ফেরানো সম্ভব, মেন্টর গ্রুপের সদস্যেরা সে ব্যাপারে একমত। বিজ্ঞানী অশোক সেনের কথায়, “শিক্ষকের অভাব, পরিকাঠামোর অভাবই বড় সমস্যা। তবে আশার কথা, ভাল ছাত্রছাত্রীরা এখনও প্রেসিডেন্সিতে আসছেন।” |
|
|
|
|
|